টাকা পয়সা যেন কখনই পড়াশোনার ক্ষেত্রে বাধা না হয়ে দাঁড়াতে পারে। মেধাবী পড়ুয়াকে এগিয়ে যেতেই হবে বাকিদের অনুপ্রেরণা হয়ে। এই লড়াই থামার নয়। অভাবের সংসারে দুবেলা খাবারের চিন্তা করতে থাকা পরিবারে পড়াশোনা আসলে বিলাসিতা। তবুও অদম্য জেদ সব অসম্ভবকেই সম্ভব করতে পারে। সেই লড়াইকে উৎসাহ প্রদান করতে এবং অনুপ্রেরণা হিসেবে রাজ্যের কাছে তুলে ধরতে এগিয়ে এল সন্তোষপুরের আগন্তুক (Agantuk, Santoshpur)। রোটারি সদনে (Rotary Sadan) রাজ্যের বিভিন্ন জেলার মেধাবী পাঁচ কন্যার হাতে তুলে দেওয়া হল স্কলারশিপ।

পঞ্চকন্যার স্বীকৃতি প্রদান উপলক্ষে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রখ্যাত কত্থক শিল্পী সায়নী চাওড়ার নৃত্যাঙ্গনের শিক্ষার্থীরা নৃত্য প্রদর্শন করেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী স্বর্ণালী পালের (Swarnali Paul) সঙ্গীত অনুষ্ঠানে উচ্ছ্বসিত হন দর্শক। অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নৃত্যগুরু অমিতা দত্ত, বাংলাদেশের বিশিষ্ট সমাজকর্মী মুক্তি ভৌমিক, সন্তোষপুর আগন্তুকের ডিরেক্টর বিপ্রদাস ভট্টাচার্য (Bipradas Bhattacharya) সহ অন্যান্যরা। সঞ্চালায় ছিলেন নৃত্যশিল্পী পুলমা সেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটির ভাবনা ও রূপায়ণে ছিলেন কথকশিল্পী ও সংস্থার ক্রিয়েটিভ হেড টুসি নস্কর (Tushi Naskar)।

এদিন যাঁদের হাতে স্কলারশিপ তুলে দেওয়া হয় তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন মেদিনীপুরে কেশিয়াড়ির দীপমিতা পাহাড়ি। বাড়িতে দুবেলা খাবার জোটে না অথচ মাধ্যমিকে ৫৬১ পেয়ে বিজ্ঞান শাখায় উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছেন। কুহেলি নায়েক, পশ্চিম মেদিনীপুরের খাজরা হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন। মাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বর ৪২৮। কলকাতার এক নামী পড়াশোনা করতেন অনুপ্রিয়া ভট্টাচার্য । লকডাউনের ফলে সবটা তছনছ হয়ে গেল। স্কুলের খরচ মেটাতে পারল না পরিবার। সরকারি স্কুলের মেধাবী ছাত্রী রাজ্যশ্রী ঘোষ , নিজের থেকেও বেশি চিন্তা বোনকে নিয়ে। বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করার স্বপ্ন থাকলেও টাকা পয়সা দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারা যাবে না বলে স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে কমার্স শাখায় ভর্তি হয়েছেন। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৭১.৫% নম্বর পেয়ে মল্লিকা মণ্ডল উত্তীর্ণ হয়েছে। কোনমতে পড়াশোনা চালানো গেলেও প্রিয় ডান্স ক্লাস কিছুতেই আর সাধ্যের মধ্যে আসছিল না। এদের স্বপ্ন যাতে হারিয়ে না যায় সেই কারণেই পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা সন্তোষপুর আগন্তুকের। প্রতিভাকে সম্মান জানিয়ে বারো মাসের স্কলারশিপ প্রদান করল এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, অনুষ্ঠানের নাম অনুপ্রেরণা।সংস্থার সভাপতি স্বর্ণালী পাল ও কোষাধ্যক্ষ তিমিরবরন সাহা বলছেন, এই পাঁচ পড়ুয়ার জেদই আমাদের সকলের কাছে কষ্ট দুঃখকে জয় করে লড়াই করে আগামীর লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা হয়ে উঠুক।
