Friday, November 7, 2025

স্বাধীনতার ইতিহাসের সাক্ষী হুগলির ‘অরবিন্দ ভবন’, নস্টালজিয়ায় কোন্নগরবাসী!

Date:

Share post:

সুমন করাতি, হুগলি

আজ ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস (77th Independence Day)। দেশজুড়ে সর্বত্রই আজ স্বাধীনতার উদযাপন। মধ্যরাত থেকে শুরু হয় পতাকা উত্তোলন। প্রায় দুশো বছরের পরাধীনত্বের যন্ত্রণা সহ্য করার পর ১৯৪৭এর এই দিনে স্বাধীন হয় আমাদের দেশ ভারতবর্ষ। ইতিহাসের পাতায় পাতায় (history of Indian independence movement) ছড়িয়ে আছে বিপ্লবীদের রক্তক্ষয়ী লড়াই। দেশমাতৃকার শৃংখল মোচনের জন্য, ব্রিটিশের হাত থেকে ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন যে বিপ্লবীরা তাঁদের অনেকেরই জন্মভূমি হুগলি (Hooghly)। অন্যতম হলেন শ্রী অরবিন্দ(Sri Aurobindo)। একাধারে তিনি ভারতীয় দার্শনিক, যোগী, কবি ও জাতীয়তাবাদী। সাংবাদিক হিসেবে তিনি বন্দেমাতরম সহ একাধিক সংবাদপত্র সম্পাদনা করেন। অনেকেই জানেন আবার অনেকেই জানেন না, যে হুগলির কোন্নগরে(Konnagar , Hooghly) তাঁর পৈত্রিক বাড়ি রয়েছে, যা বর্তমানে অরবিন্দ ভবন (Aurobindo Bhawan) নামে পরিচিত। আজ সেখানেও জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং অরবিন্দ ঘোষের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করা হয়। এই বাড়ি আজও হুগলিবাসীর অহংকার!

শ্রীঅরবিন্দ ভারতকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯১০ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের এক প্রভাবশালী নেতা। তারপর তিনি এক আধ্যাত্মিক সংস্কারকে পরিণত হন এবং মানব-প্রগতি ও আধ্যাত্মিক বিবর্তনের ক্ষেত্রে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির কথা প্রচার করেন। পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের কেমব্রিজের কিং’স কলেজে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (ICS)নিয়ে শিক্ষা লাভ করেন করেন। দেশে ফেরার পর বরোদার দেশীয় রাজ্যের মহারাজের অধীনে তিনি একাধিক অসামরিক পরিষেবা কার্যে অংশগ্রহণ করেন। ভারতে তখন ক্রমাগত ব্রিটিশের অত্যাচার বাড়ছে। এই সময় তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদী রাজনীতি এবং বাংলায় অনুশীলন সমিতির (Anushilan Samiti) ক্রমবর্ধমান বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। একটি শুনানির মামলা চলাকালীন একাধিক বোমা নিক্ষেপের ঘটনায় এই সংগঠন জড়িয়ে পড়লে অরবিন্দও গ্রেফতার হন। এই সময় তাঁর বিরুদ্ধে আলিপুর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়।

জেলে বন্দি থাকার সময় অরবিন্দ আধ্যাত্মিক কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। মুক্তিলাভের পর তিনি পন্ডিচেরি চলে যান এবং রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে আধ্যাত্মিক সাধনায় মনোনিবেশ করেন।

বর্তমানে অরবিন্দ ভবনে সংরক্ষিত রয়েছে তাঁর আর্কাইভ। যেখানে হাতে লেখা নানা বই, এমনকি তিনি মারা যাবার পর তাঁর চিতাভস্ম সংরক্ষিত করে রাখা রয়েছে এই অরবিন্দ ভবনে। প্রতি শনিবার ও রবিবার জনসাধারণের জন্য সকাল ১০ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই অরবিন্দ ভবন। কোন্নগর শুধু নয়, গোটা দেশব্যাপী বিভিন্ন মানুষ অরবিন্দের আদর্শের চিন্তা ধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এখানে আসেন।আজ স্বাধীনতা দিবসের দিনে তাই কোন্নগর তথা হুগলি জেলার মানুষের কাছে, ইতিহাসের সাক্ষী থাকার এ এক অন্য অনুভূতি।

 

spot_img

Related articles

দুর্যোগ পরিস্থিতি পর্যালোচনা: আগামী সপ্তাহেই উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী

ভয়াবহ দুর্যোগ পেরিয়ে মাথা তুলে দাঁড়ানোর পর্যায়ে উত্তরবঙ্গ। রাজ্য প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনের লাগাতার পরিষেবা ও পদক্ষেপে যোগাযোগ...

তালিকায় নাম নেই! কেউ স্ত্রীর জন্য, কেউবা বিএলও-র সামনেই প্রাণ দিলেন

রাজ্যের হাজার হাজার মানুষের নাম নেই ২০০২ সালের ভোটার তালিকায়। ইতিমধ্যেই রাজ্যের একাধিক জেলায় আতঙ্কে কেউ আত্মঘাতী, কেউবা...

শিলিগুড়িতে উৎসবের মেজাজেই সোনার মেয়েকে বরণ, নিজের অনুভূতির কথা জানালেন আপ্লুত রিচা

বিগত কয়েক বছর ধরেই পুরুষ এবং মহিলা ক্রিকেটের মধ্যে ব্যবধান একটু একটু কমছে। আইসিসি বিশ্বকাপ জিতে ভারতীয় ক্রিকেটেই...

পথশ্রী প্রকল্প বেনিয়ম বরদাস্ত নয়: স্পষ্ট নির্দেশ মুখ্যসচিবের

পথশ্রী প্রকল্পের অধীনে গ্রামীণ রাস্তাগুলির মান বজায় রাখতে জেলা প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দিলেন মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ। শুক্রবার...