Sunday, August 24, 2025

যাদবপুরকাণ্ড: হস্টেল গেটে তালা ঝুলিয়ে তথ্য-প্রমাণ লোপাট করেছিল ধৃত জয়দীপ

Date:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় রাজ্য। সেই রহস্য মৃত্যুর তদন্তে নেমে বর্তমান ও প্ৰাক্তনী মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রত্যেকের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, ঘটনা ধামাচাপা দিতে বড় ভূমিকা নিয়েছিল শেষ গ্রেফতার হওয়া প্রাক্তনী জয়দীপ ঘোষ। হাসপাতালে গিয়ে জখম ছাত্রের বয়ান রেকর্ড করতে পুলিশকে বাধা দিয়েছি সে। রক্তাক্ত অবস্থায় মেইন হস্টেলের যেখানে পড়েছিলেন ওই ছাত্র, হাসপাতাল থেকে ফিরে সেই জায়গার রক্ত ধুয়ে ফেলার নির্দেশও দিয়েছিল এই জয়দীপ। অর্থাৎ, তথ্যপ্রমাণ লোপাট করাই ছিল উদ্দেশ্য। এরপর শনিবার রাতে জয়দীপকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

জানা গিয়েছে, ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সৌরভ চৌধুরী এবং জয়দীপ ঘোষ আঁটঘাট বেঁধেই তথ্যপ্রমাণ লোপাট করে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।তদন্তকারীরা জেনেছেন, জয়দীপ বিক্রমগড়ে ঘরভাড়া নিয়ে থাকলেও মেইন হস্টেলে তার নিয়মিত আনাগোনা ছিল। সৌরভের সঙ্গে ছিল ঘনিষ্ঠতা। এই দু’জন প্রাক্তনীর হাতে ছিল হস্টেলের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা। নবাগত ছাত্ররা এলে কীভাবে তাদের র‌্যাগিং করতে হবে, সবঠিক করত সৌরভ-জয়দীপ। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রাক্তনী জয়দীপ উপস্থিত থাকতেন সমস্ত জিবি মিটিংয়েও।

পুলিশ জানতে পেরেছে, হস্টেলের ১০৪ নম্বর ঘরে সৌরভ সহ কয়েকজন ঘটনা ঘটার আগে নিহত ছাত্রকে সহপাঠিনীদের শারীরিক বর্ণনা দিতে বলেন। ছাত্রীদের ছবি তুলে আনার জন্য তাঁকে চাপ দেওয়া হয়। পরপর আরও তিনটি রুমে তাঁর উপর টানা মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। একদল সিনিয়র ও প্রাক্তনী যখন এই অত্যাচার চালাচ্ছিল, তখন অন্য একটি দল সিঁড়ির মুখ আটকে দাঁড়িয়েছিল। নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে পালানোর চেষ্টা করলে যাতে ওই ছাত্রকে আটকানো যায়, সেটাই ছিল উদ্দেশ্য। অত্যাচারের এক পর্যায়ে অসহায় ছাত্রটি জল খেতে চাইলে সৌরভ ও অন্যরা তাঁকে প্রস্রাব খাওয়ানোর কথা বলেন। শেষে বাথরুমের নোংরা জল তাঁকে এনে দেওয়া হয় বলে দাবি তদন্তকারীদের। আর সহ্য করতে না পেরে ছাত্রটি তখন ঘর থেকে ছুটে বাইরে আসেন। তখন তাঁকে তাড়া করে কয়েকজন। বাঁচার প্রবল আকুতিতে সিঁড়ির দিয়ে নেমে পালাতে গিয়ে তিনি দেখেন, সেখানে পাহারায় রয়েছে একদল ‘দাদা’! তখন বারান্দায় উঠে যান তিনি। তারপরও তাঁকে তাড়া করা হলে ঝাঁপ দেয় ওই ছাত্র।

পুলিশ জেনেছে, এই ঘটনার পর সৌরভ ফোন করে জয়দীপকে ডেকে পাঠায়। পাঁচ মিনিটের মধ্যে সেখানে চলে আসে সে। তাকে সৌরভ বলেন, পুলিশ যাতে হস্টেলে ঢুকতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এরপর জয়দীপ গেটে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীর কাছ থেকে চাবি নিয়ে নেন। রবিবার জয়দীপকে আদালতে তোলা হলে সরকারি আইনজীবী জানান, “হাসপাতালে গিয়ে তদন্তকারীরা জখম ছাত্রের বয়ান রেকর্ড করতে চাইলে সেখানেও বাধা দেয় ধৃত জয়দীপ। তারপর হস্টেলে ফিরে অন্যান্য ছাত্রকে বাথরুম থেকে জল এনে রক্ত ধুয়ে দিতে বলেন। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সেই কাজের তদারকি করে। এরপর সৌরভ ও তার গাংয়ের সঙ্গে আলোচনায় বসে জয়দীপ। সবাইকে বুঝিয়ে দেয়, কী করতে হবে, কী বলতে হবে।”

আরও পড়ুন:সাতসকালে খড়গপুরের বিস্কুট কারখানায় ভ.য়াবহ অ.গ্নিকাণ্ড! ঘটনাস্থলে দমকল

 

 

 

Related articles

পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পে নাম নথিভুক্তি শুরু

পরিযায়ী শ্রমিকদের সুবিধার্থে এবার আরও এক পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের। ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচির আওতায় দুয়ারে সরকার শিবিরেও...

‘নিখুঁত ভুলগুলি’, উৎপল সিনহার কলম

একটা দুঃখের কথা পথে ও বিপথে ঘুরে প্রত্যাখ্যাত হতে হতে গান হয়ে ওঠে ...একটি দুঃখের কথা পথে ও বিপথে ঘুরে প্রত্যাখ্যাত হতে হতে গান...

ষোলতেই ১৩০ কেজি! ছেলের খাবার জোগাতেই নাজেহাল বাবা-মা

মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি থানার কাবিলপুর পঞ্চায়েতের মথুরাপুর গ্রাম। এখানেই থাকেন দিনমজুর মুনশাদ আলি। তাঁর ছোট ছেলে জিশান আলি...

কবে থেকে শুরু জয়েন্টের কাউন্সেলিং? দিনক্ষণ জানিয়ে দিল বোর্ড

ফলপ্রকাশের পর এবার ১৫ দিনের মধ্যেই কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া তথা ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করবে জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড। এবার কাউন্সেলিং...
Exit mobile version