মিতালি চমক-ই বুমেরাং! ধূপগুড়ি হারের পর জেলা বিজেপির কাঠগড়ায় শুভেন্দু-সুকান্ত

ভোটের মাত্র ৪৮ ঘন্টা আগে জেলা নেতৃত্বকে এড়িয়ে কার্যত জোর করে মিতালি রায়কে দলে টেনেছিলেন শুভেন্দু-সুকান্ত। যা আসলে বিজেপির কাছেই বুমেরাং হল

উপনির্বাচনের ৪৮ ঘন্টা আগে চমক দেখিয়ে গণনার দিন মুখ থুবড়ে পড়ল বিজেপি। ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে বিজেপির আসন ছিনিয়ে নিল তৃণমূল। বিজেপির এই হারের পিছনে অনেকেই কাঠগড়ায় তুলছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।

বিষয়টি ঠিক কী? ধূপগুড়ি উপনির্বাচনের প্রচারে গিয়ে আদি বিজেপি নেতা তথা গেরুয়া শিবিরের প্রাক্তন জেলা সভাপতি দীপেন প্রামানিককে তৃণমূলে যোগদান করিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেককে টেক্কা দিতে গিয়ে তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক মিতালি রায়কে যোগদান করিয়ে ছিলেন সুকান্ত মজুমদার। মিতালিকে দলে টানার জন্য কলকাঠি নেড়ে ছিলেন শুভেন্দু। মূলত শুভেন্দুর উদ্যোগ ও যোগাযোগেই মিতালি ঘাসফুল ছেড়ে পদ্ম শিবিরে যোগ দেন। কিন্তু জেলা নেতৃত্বকে এড়িয়ে গিয়ে মিতালির যোগদান একেবারে ভালোভাবে নেয়নি স্থানীয় নেতৃত্ব। বিজেপির নিচুতলার কর্মীরাও এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ছিলেন।

প্রাক্তন বিধায়ককে দলে নিয়ে ভোটের আগে শাসকদলকে ‘ঝটকা’ দিতে চেয়েছিল পদ্মশিবির। কিন্তু এই যোগদান ঘিরে ভোটের ঠিক আগে বিজেপির শিবিরের অন্দরের ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হয়। রবিবারই মিতালির যোগদানের পর নীচুতলার বিজেপি কর্মীদের একাংশের ক্ষোভ সামনে এসেছিল। রবিবার রাতেই মিতালী রায়ের যোগদান নিয়ে দলের শীর্ষনেতাদের নেতাদের নিশানা করেন কোচবিহারের বিজেপির জেলা সম্পাদক অজয় সাহা। মিতালির যোগদানের পর তাঁর আক্ষেপ- “২০২১ থেকে বিজেপি এখনও পর্যন্ত কোনও শিক্ষাই নেয়নি।”

২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের অনেক নেতা-বিধায়ক যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। এ রকম দলত্যাগী অনেকেই বিধানসভা ভোটে পদ্মশিবিরের টিকিট পেয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও বাংলা দখল সম্ভব হয়নি। বদলে ভোটের পর অনেকে আবার ফিরেছিলেন তৃণমূলে। মিতালি রায়ের যোগদানের পর এই বিষয়টির উল্লেখই নিজের ফেসবুক পোস্টে করেচিলরন কোচবিহারের জেলা সম্পাদক। নিজের ফেসবুক পোস্টে অজয় সাহা লিখেছেন, “তৃণমূলে গুরুত্ব না পেয়ে বিজেপিতে। ২০২১ থেকে বিজেপি এখনও পর্যন্ত কোনও শিক্ষাই নেয়নি। ২০২১এ বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থী যে মিতালি রায়কে ধূপগুড়িবাসী প্রত্যাখ্যান করল এবং পরাজিত হল বিজেপির কাছে। ২০২৩ এ এসে সেই কি না বিজেপিকে জেতাবে?”

এই সমালোচনার পাশাপাশি ওই পোস্টে বিজেপির পুরনো কর্মীদের দলত্যাগের বিষয়েও সরব হয়েছিলেন অজয় সাহা। বঙ্গ বিজেপির এই অবস্থার জন্য রাজ্য নেতৃত্বকেই দায়ী করেছেন তিনি। এ নিয়ে ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “বিজেপির দুর্দিনের কার্যকর্তা দীপেন প্রামাণিক ও অনেক পুরনো ভালো ভালো কার্যকর্তা দল ছেড়ে চলে যাচ্ছে এবং বসে যাচ্ছে। আর তৃণমূল থেকে চোরচোট্টাগুলো বিজেপিতে ঢুকছে, সেটা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। রাজ্য নেতারা দলে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে ও গুরুত্ব বাড়াতে বঙ্গ বিজেপিকে শেষ করে ছাড়ছে।”

জেলা বিজেপি সূত্রে খবর, ধূপগুড়ি পৌরসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে কোনও মুখ নেই চেয়ারপার্সন পদের জন্য। অপরদিকে, মিতালিও জানতেন ধূপগুড়ি পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূল তাঁকে টিকিট নাও দিতে পারে। ফলে চেয়ারপার্সেনের পদের জন্য বিজেপিতে যোগ দিলে তাঁর স্বপ্ন সাকার হলেও হতে পারে। তাই শুভেন্দু-সুকান্তদের টোপ গিলে নেন মিতালি। যোগ দেন বিজেপিতে। কিন্তু তাঁর যোগদানের পর জেলা বিজেপিতে প্রবল অসন্তোষ দেখা যায়। যার প্রভাব ইভিএমে পড়েছে বলেও দাবি জেলা নেতৃত্বের একাংশের। ভোটের মাত্র ৪৮ ঘন্টা আগে জেলা নেতৃত্বকে এড়িয়ে কার্যত জোর করে মিতালি রায়কে দলে টেনেছিলেন শুভেন্দু-সুকান্ত। যা আসলে বিজেপির কাছেই বুমেরাং হল।

উল্লেখ্য, একুশের ভোটে বিজেপির জেতা ধূপগুড়ি আসন শেষমেশ উপনির্বাচনে ছিনিয়ে নিল তৃণমূল কংগ্রেস। গত বিধানসভা ভোটে এই ধূপগুড়ি আসনে তৃণমূলকে ১৩০০ ভোটে হারিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু তা ধরে রাখতে পারল না গেরুয়া শিবির। উপনির্বাচনে চার হাজারেরও বেশি ভোটে বিজেপির প্রার্থী তাপসী রায়কে হারালেন তৃণমূল প্রার্থী নির্মল চন্দ্র রায়।

Previous articleরবিবার সুপার ফোরে ভারত-পাক ম‍্যাচেও বৃষ্টির ভ্রুকুটি, বিশেষ ব‍্যবস্থা এসিসি-র
Next articleসমালোচনা অতীত! জি ২০ সম্মেলনের আগে কেন্দ্রের ‘বিদেশ নীতি’কে সমর্থন মনমোহনের