বেঁচে থাকার লড়াইয়ে সঙ্গী টোটো,বারাসতের কাজল ‘দশভূজা’

যদিও হাল ছাড়েননি বারাসতের পূর্বাচলের বাসিন্দা কাজল লোহার।কোলের ছেলেকে নিয়ে মধ‌্যমগ্রামের শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে আসেন বাপের বাড়িতে। সেই থে্কে শুরু লড়াইয়ের।

আর পাঁচজনের মতো গুছিয়ে সংসার করতে চেয়েছিলেন।সেই স্বপ্ন নিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন। কিন্তু পুত্রসন্তানের জন্মের পরই বদলে যেতে থাকে পরিস্থিতি।যাকে ভালবেসে সংসার পেতেছিলেন, তারই নেশাভাঙ করে নিত্য অত‌্যাচার দিনদিন বাড়তে থাকে। যদিও হাল ছাড়েননি বারাসতের পূর্বাচলের বাসিন্দা কাজল লোহার।কোলের ছেলেকে নিয়ে মধ‌্যমগ্রামের শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে আসেন বাপের বাড়িতে। সেই থে্কে শুরু লড়াইয়ের।
শেষ পর্যন্ত পেশা হিসাবে টোটো চালানোকে বেছে নিয়েছেন এই আদিবাসী তরুণী।আর এই লড়াইয়ের পাশাপাশি নিজের সম্প্রদায়ের স্থানীয় মেয়েদের নিয়ে তৈরি করেছেন একটি নাচের দল। যাঁরা পুজোর সময় মহিষাসুরমর্দিনী মঞ্চস্থ করে ইতিমধ্যেই হয়ে উঠেছেন নারীশক্তির লড়াইয়ের অন্যতম মুখ।নিজে যেমন জীবন যুদ্ধে লড়াই করে নিজেকে পরিচয় প্রতিষ্ঠা করেছেন, তেমনই এলাকার আদিবাসী তরুণীদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলে তাদের লড়াই করারহ সাহস জুগিয়েছেন।
এখন তার লক্ষ্য ছেলেকে মানুষ করা। এর জন্য সংসারে অসম লড়াই লড়তে হয়েছে। তাতেও পিছপা হননি তিনি। কাজল জানান, বছর আটেক আগে ভালবেসে বিয়ে করেন মধ‌্যমগ্রামের প্রেমিককে। কিন্তু, ছেলে হওয়ার ছ’মাস পর থেকে স্বামী প্রতিদিন নেশা করে বাড়িতে এসে তাঁর উপর অত্যাচার চালাত। একসময় অত্যাচারের মাত্রা বাড়ায় ছেলেকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ছাড়েন কাজল। বাপের বাড়ি ফিরে অর্থ উপার্জন করতে প্রথমে পরিচিতদের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ নেন। ছেলের যখন দু’বছর বয়স, তখন ঋণ নিয়ে একটি টোটো কেনেন।

ছেলের পড়াশোনা এবং সংসার চালাতে বিগত ছ’বছর ধরে তিনি বারাসত শহরের টোটো চালাচ্ছেন।
একসময় নাচকে সঙ্গী করে বাঁচতে চেয়েছিলেন। এখন তার কাছে ১৫ জন নাচের তালিম নেয়। তিনি নিজে আদিবাসী সম্প্রদায়ের। তাই নিজের সম্প্রদায়ের মেয়েদের মধ্যে নৃত্যশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে একটি নাচের দলও করেছেন। সেই দলে দুর্গা রূপে মঞ্চে মহিষাসুরকে বধ করতে দেখা যায় তাঁকে। এবছরের দুর্গাপুজোয় বারাসতের একাধিক মণ্ডপের মঞ্চে তাঁকে ফের দেখা যাবে দুর্গা রূপে। পাশাপাশি ভাল ছবিও আঁকেন কাজল। নিজের হাতে আঁকা সেই ছবি অনেককে উপহারও দেন। কাজলের মতো জীবন্ত দশভুজা নিঃসন্দেহে আজ অন্যান্য নারীদের কাছে দৃষ্টান্ত।