সময় দিয়েও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিদলের দেখা করেননি কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি। এরপর কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর দেখা করার দাবিতে অনড় হয়ে দিল্লির কৃষিভবনে বসেছিলেন অভিষেকরা। কিন্তু শান্তিপূর্ণ অবস্থানে হামলা চালায় বিজেপির পুলিশ বাহিনী। রীতিমতো টেনে হিঁচড়ে বাসে তোলা হয় তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বকে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূলের সাংসদ, বিধায়ক, মন্ত্রীদের উপর বর্বরোচিত আক্রমণ চালায় মোদি-শাহ পুলিশ। অন্যদিকে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে অদ্ভূদ দাবি করেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। তিনি এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘আজ আড়াই ঘণ্টা নষ্ট হয়েছে। তৃণমূল সাংসদদের জন্য অপেক্ষা করে সাড়ে ৮টায় দফতর ছেড়েছি। আমি জানতাম, তৃণমূলের সাংসদ এবং মন্ত্রীরা সন্ধ্যা ৬টায় দেখার করার জন্য সময় নিয়েছিলেন।’

কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাবি খারিজ করে তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মিথ্যা কথা বলছেন মন্ত্রী। আমাদের অপেক্ষা করিয়ে টালবাহানা করে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়েছেন মন্ত্রী। আমরা প্রতিটি মুহূর্ত ফেসবুক লাইভে জানিয়েছি। কৃষিভবনের সিসিটিভি লাইভ করা হোক। তাহলেই জানা যাবে যে মন্ত্রী মিথ্যা কথা বলছেন।

পাশাপাশি তৃণমূল নেত্রী সুস্মিতা দেব এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, আপনি এত বড় মিথ্যে বলছেন যে, আপনার ডুবে মরা উচিত। সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাংসদেরা আপনার দফতরে রয়েছে। আপনি দেখা করেননি। কিছু লজ্জা করুন। বাংলার মানুষ দেখছে আপনার ছলনা। ২০২৪ সালে আপনারা নিশ্চিত ভাবে শূন্যে পৌঁছবেন। সাংসদ মহুয়া মৈত্রও অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মিথ্যে বলছেন।

মন্ত্রীর এই দাবির পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, একশ দিনের কাজে যাঁরা মজুরি পাননি সেই সব মানুষগুলোকে নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন অভিষেক। আমরাও ছিলাম সেখানে। কিন্তু প্রান্তিক গরিব মানুষগুলোর চোখে চোখ রেখে মিথ্যা বলতে পারেননি মোদীর মন্ত্রী। তাই পালিয়ে গিয়েছেন। আর এখন সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে মিথ্যাচার করছেন। এটা অন্যায় শুধু নয়, ন্যক্কারজনক।


প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলে যন্তরমন্তরের সভা থেকে বাংলার বঞ্চিত মানুষের চিঠি কাঁধে নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধেয় যন্তর মন্তর থেকে হেঁটে দিল্লির কৃষি ভবনে পৌঁছন তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)-সহ ৪০জনের প্রতিনিধি দল। সেখানে অপেক্ষা করতে থাকেন তাঁরা। ভিতরে বসেই স্যোশাল মিডিয়ায় লাইভে এসেন অভিষেক বলেন, “আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির আমাদের সময় দিয়েছিলেন বেলা ১২টায়। সেই মতো সভার সময় ঠিক হয়। কিন্তু সোমবার মন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হল, মন্ত্রী দিল্লিতে নেই। ৫টায় আসবেন, ৬টা দেখা করবেন। সেই সময় সময় পরিবর্তন করা হয়। আর এখন সংবাদ মাধ্যমে দেখাচ্ছে ৪টে থেকে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছেন। আমার ৬টা থেকে এসে বসে আছি। কিন্তু এখনও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দেখা করেননি। যতক্ষণ না তিনি আসবেন আমরা নড়ব না।“


এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সাংসদ শান্তনু সেন বেরিয়ে জানান, ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট বসিয়ে রেখে সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি বলে পাঠান যে তিনি সব প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করবেন না। কিন্তু যে ৪০জনকে নিয়ে তাঁরা এসেছেন, তাঁদের নিয়েই দেখা করতে অনড় অভিষেক। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যতক্ষণ না দেখা না হয়, তাঁরা বসে থাকবেন। রাত ৯ টা নাগাদ এখানে পৌঁছে যায় অমিত শাহর পুলিশ। শান্তিপূর্ণ অবস্থান থেকে আটক করা হয় অভিষেক-সহ তৃণমূলের নেতৃত্বকে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে পুলিশ তুলতে এলে বাধা দেন সাংসদ দোলা সেন, মহুয়া মৈত্র, রাজ্যের মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদারা। কিন্তু তৃণমূল নেত্রীদের রীতিমতো টেনে হিঁচড়ে সরানো হয়। এরপর অভিষেক-সহ সব সাংসদ, মন্ত্রী, বিধায়কদের বাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় মুখার্জি নগর থানায়। তৃণমূল নেতৃত্বের উপর দিল্লি পুলিশের এই বর্বরোচিত আক্রমণ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব।

আরও পড়ুন- শাহর পুলিশের চূড়ান্ত অস.ভ্যতা! তৃণমূলের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে হা.মলা, আ.টক অভিষেক-সহ নেতৃত্ব
