শিশু যখন ভুমিষ্ট হয় সে জানেনা কী তাঁর পরিচয়। একদিন দুদিন করে তার বয়স যত বাড়তে থাকে ততই নিজের মানুষ আর পৃথিবীর সঙ্গে পরিচিতি নিবিড় হয়। শিশু কন্যা হোক বা শিশু পুত্র মা-বাবার কাছে সন্তান বড় হওয়ার মুহূর্তগুলো ভীষণ রকমের স্পেশাল। কিন্তু এই চেনা ছবিটা বদলে যায় যখন দেখা যায় শিশু সুরক্ষার ক্ষেত্রে লিঙ্গ সংবেদনশীলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অর্থাৎ শিশু কন্যার ক্ষেত্রে তাঁর পরিবার কেমন আচরণ করছে আবার শিশু পুত্রের ক্ষেত্রে সেটা বদলে যাচ্ছে কিনা এই সব কিছু ইদানিংকালে সমাজের আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। আর তাতেই চিন্তা বাড়ছে। পুরুষ কিংবা নারী শিশু সুরক্ষার ক্ষেত্রে একজন দায়িত্বপূর্ণ নাগরিক হিসেবে কোন সময় কেমন ব্যবহার করবেন তা দিয়ে এক বিশেষ আলোচনা চক্র আয়োজিত হল। শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের (WBCPCR) তরফে এদিন উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় (Sudeshna Roy), উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী (Ananya Chakraborty)। জেন্ডার অ্যাক্টিভিস্ট দীপ পুরকায়স্থ শিশু সুরক্ষার প্রতি লিঙ্গ সংবেদনশীলতার বিষয়টি বিভিন্ন স্লাইডের মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য আজও কতটা মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে তার বিভিন্ন উদাহরণ সবার সামনে আলোচিত হয়। স্টিরিওটাইপ ভাবনা-চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসার পাশাপাশি সন্তানকে একটা সুস্থ ভবিষ্যৎ দিতে বাবা-মা এবং পরিবারের ভূমিকা নিয়েও একাধিক প্রশ্ন এবং বিতর্ক তৈরি হয়। WBCPCR এর তরফে উপস্থিত প্রত্যেকের প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয় এবং উপস্থিত প্রশ্নকর্তাদের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনাও করা হয়। অনেক সময় দেখা যায় যে শিশু ছোটবেলায় খুব শান্ত স্বভাবের ছিল, পরবর্তীতে স্কুল জীবনে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক আক্রমণাত্মক ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এর পেছনে তাঁর মানসিক অবস্থার পরিবর্তনের গ্রাফ বায়োলজিক্যাল পদ্ধতিতে এদিন বিশ্লেষণ করা হয়। সমাজ যতই উন্নত হোক না কেন এখনো পর্যন্ত মেয়েদের কাছে বিয়েটা অবশ্যম্ভবী এক ভাগ্য লিখন হয়ে রয়েছে। সেই কারণে আজকের দিনে একটা ছেলে যেভাবে সেক্স নিয়ে আলোচনা করতে পারে বা নিজের যৌন জীবন পরিচালনা করতে পারে একটা মেয়ে সেটা পারে না এ কথা স্বীকার করেন স্বয়ং সুদেষ্ণা রায়। আলোচনায় উঠে আসে শিশু কন্যার যৌন হেনস্থা কিংবা ধর্ষণের কথা। একদিকে যেমন মাতৃস্নেহে কন্যা সন্তানকে বড় করেন বাবা আবার মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে বাবা অভিযুক্ত হচ্ছেন এমন খবর শিরোনামে আসে। তাই সেক্ষেত্রে ঠিক কোন কোন ভাবনা চিন্তাকে প্রাধান্য দিলে শিশুদের মনস্তত্ত্ব বুঝতে এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শিশু সুরক্ষার দিকে পদক্ষেপ করতে সহায়তা হবে তা নিয়েও এদিন আলোচনা করা হয়।
