১৯৫৯। ডিভিসির পাঞ্চেত জলাধারের উদ্বোধনে গিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু (Jawharlal Nehru) তাঁর গলা থেকে খুলে মালা পরিয়ে দিয়েছিলেন আদিবাসী তরুণী বুধনি মেঝানকে। সেই থেকেই তাঁর জীবনটা গিয়েছিল একেবারে বদলে। আদিবাসী সমাজ থেকে বিতাড়িত হন তিনি। দীর্ঘ বার্ধক্য জনিত অসুস্থতার পর শুক্রবার নিজের আবাসনে মৃত্যু হল বুধনির।

বুধনি মেঝান। এলাকায় পরিচিত ছিলেন জওহরলাল নেহরুর (Jawharlal Nehru) ‘স্ত্রী’ হিসাবে। কারণ? ১৯৫৯ সালের ৬ ডিসেম্বর। DVC-র পাঞ্চেত জলাধারের উদ্বোধনে আসানসোলে আসেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেহরু। আদিবাসীদের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন বুধনি। তাঁর হাত ধরেই থেকে পাঞ্চেত জলাধারের উদ্বোধন করেছিলেন জওহরলাল। অনুষ্ঠানে তাঁকে পরানো মালা উল্টে বুধনিকে পরিয়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। নেহরু সে দিন ড্যাম উদ্বোধন করে বলেছিলেন, এই বাঁধই হল ‘টেম্পল অব ডেভলপিং ইন্ডিয়া’।
কিন্তু এই ঐতিহাসিক ঘটনা মুহূর্তে বদলে দেয় তরুণী বুধনির জীবন। পরপুরুষের সঙ্গে মালাবদলের ‘অপরাধে’ আদিবাসী সমাজ থেকে তাঁকে বিতাড়িত করা হয়। কারণ, আদিবাসী সমাজের নিয়ম অনুযায়ী, পরপুরুষের গলায় মালা দেওয়া মানেই বিয়ে। কিন্তু নেহরু আদিবাসী নন। তাই সমাজ থেকে বিতাড়ণ। ‘নেহরুর বউ’ বলে কটাক্ষের জেরে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন তিনি।

এই ঘটনার কিছু দিনের মধ্যেই বুধনির চাকরি চলে যায়। হারিয়ে যান তিনি। ১৯৮৫ সালে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান বুধনি। আবার তাঁর চাকরি ফিরিয়ে দেয় ডিভিসি। কর্মজীবন শেষ করে অবসর নেন তিনি।

আরও পড়ুন: Uttarkashi: টানেলে ধ.স বিপ.র্যয়ের সপ্তম দিন, এখনও আ.টকে ৪০ শ্রমিক!

তবে ডিভিসির আবাসনেই থাকতেন বুধনি। কিন্তু কোনদিনই আর নিজের সমাজ বা গ্রামে ফিরে যেতে পারেননি তিনি। দীর্ঘরোগ ভোগের পর শুক্রবার রাতে মৃত্যু হল বুধনি মেঝানের। শনি তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয় পাঞ্চেত শ্মশানে। তার আগে ডিভিসি ও স্থানীয় পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে তাঁকে সম্মান জানানো হয়। বুধনির মৃত্যুতে শেষ হল এক ঐতিহাসিক ঘটনার অধ্যায়।
