হাওড়ার আমতা-২ নম্বর ব্লকের খালনার বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজোয় ৩৫২ বছর ধরে মাছের ভোগ নিবেদন করা হচ্ছে। ১৬৭১ সালে তৎকালীন জমিদার তথা ব্যবসায়ী সর্বেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় এই পুজোর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তারপর থেকে ৭ পুরুষ ধরে ওই একই কাঠামোয় সমস্ত রীতিনীতি মেনে বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো হয়ে আসছে।

এই পুজোয় মাকে ভাত, পাঁচ রকম ভাজা, তরকারি ও মাছের ঝোল রান্না করে ভোগ দেওয়া হয়। থাকে খিচুড়ি এবং পায়েসও । সেই সঙ্গে দেড় মন আতপ চালের নৈবেদ্য নিবেদন করা হয় মাকে। সন্ধ্যায় শীতল ভোগে লুচি, ক্ষীর, নাড়ু ও ছানা দেওয়া হয়।
সন্ধি পুজোর সময় ১০৮টি প্রদীপ জ্বেলে আরতি করা হয়। নবমীতে ৪টি চালকুমড়ো ও ৪টি আখ বলি দেওয়া হয়। পুজোর সঙ্কল্প করেন এই পরিবারের বধূ তপতী বন্দ্যোপাধ্যায়। তপতীদেবী তাঁর দুই হাতে এবং মাথায় মাটির সরা বসিয়ে আগুন জ্বালিয়ে ধুনো পোড়ান পরিবারের সকলের মঙ্গলের জন্য।

দশমীর সন্ধ্যায় পরিবারের ৯ জন মহিলা মাকে বরণ করেন। তারপর মাকে সিঁদুর পরিয়ে সবাই সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। সিঁদুর খেলার শেষে বাড়ির পুকুরেই প্রতিমার বিসর্জন করা হয়।

এই পরিবারের মেয়ে পূজা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, ‘জন্মাষ্ঠমীর দিন কাঠামো তৈরি শুরু হয়। ওইদিন কাঠামোর গায়ে দেওয়া হয় এক মেটে। কালীপুজোর দিন দেওয়া হয় দো-মেটে। প্রতিমাকে মাটির তৈরি ডাকের সাজে সজ্জিত করা হয়। যা এখন সেভাবে দেখা যায় না।’ এখনও জগদ্বাত্রী পুজোর দিন বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে গ্রামবাসীরা পাত পেড়ে ভোগ খান। আগে জাঁকজমক অনেক বেশি ছিল। নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত। এখন জাঁকজমক কিছুটা কমলেও বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের পুজোর নিয়ম ও নিষ্ঠা একই রয়েছে।
