আজ আবার বিশ্বজয়? উৎপল সিনহার কলম

উৎপল সিনহা

চলতি বিশ্বকাপে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হবেন কে ?
মহম্মদ শামি ‌।

কেন ? বিরাট কোহলি , ক্যাপ্টেন রোহিত , শুভমন , রাহুল , জাদেজা , শ্রেয়স , মিচেল , ম্যাক্সওয়েল , বুমরা , কুলদীপ , এঁরা কী দোষ করলেন ?

সত্যিই তাই । এঁরা সবাই প্রতিযোগিতার সেরার লড়াইয়ে অবশ্যই থাকবেন । এঁদের সকলেরই পারফরম্যান্স অনবদ্য । কিন্তু এখনও পর্যন্ত শামিই সেরার সেরা । ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার তিনি না পেলে অবাক হবে ক্রিকেট বিশ্ব ।

শামির পারিবারিক জীবন অশান্ত । দেশের এক শ্রেণীর সমর্থকদের কাছে তিনি ‘গদ্দার ‘ । তিনি সামান্য ব্যর্থ হলেই তাঁর দিকে ধেয়ে আসে হাজার বিদ্রুপ । তাঁকে প্রতি ম্যাচেই দিতে হয় দেশপ্রেমের অগ্নিপরীক্ষা । অথচ সেই কোনঠাসা মানুষটিই বিশ্বকাপ-সেমিফাইনালের মতো বিশাল গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চে একাই ৭টি উইকেট দখল করে দেশকে তুলে দিচ্ছেন স্বপ্নের ফাইনালে ! মনে রাখতে হবে চলতি বিশ্বকাপে প্রথম ৪টি ম্যাচে খেলার সুযোগ পান নি শামি । পঞ্চম ম্যাচ থেকে সেমিফাইনাল পর্যন্ত শামির ধারাবাহিক সাফল্যের ধারেকাছে নেই কোনো ক্রিকেটার । ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিহাসে ধারাবাহিক সাফল্যের যে অসামান্য নজির সৃষ্টি করে যাচ্ছেন মহম্মদ শামি , তা যে কোনো বোলারের কাছেই স্বপ্ন । বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্রুততম ৫০ উইকেট দখলের বিরল কৃতিত্বও ইতিমধ্যেই অর্জন করেছেন এই বোলার ।

তিনি বাদ পড়েছেন , বারবার ফিরেও এসেছেন , বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন । ভারতীয় ক্রিকেটের বর্তমান থিঙ্কট্যাঙ্ক কোচ রাহুল ও ক্যাপ্টেন রোহিত । দুজনেই প্রাজ্ঞ । দুজনেই খেলাটা বোঝেন দারুণ । দুজনেরই মাথা ঠাণ্ডা । অথচ দুজনেই একটা বড়ো ভুল করে চলেছিলেন একেবারে প্রথম ম্যাচ থেকেই । শামির মতো অসাধারণ একজন বোলারকে মাঠের বাইরে রেখে তাঁরা দল নামাচ্ছিলেন । আউটসুইং , ইনসুইং , স্লোয়ার ইত্যাদি সমস্ত কূটকৌশল যাঁর আয়ত্তে , তেমন একজনকে মাঠের বাইরে রাখার মতো বড়ো ভুল টানা করে চলেছিলেন রাহুল-রোহিত জুটি ।

শামি বরাবরই প্রতিভাবান । তার ওপর আবার সুইং-বাদশা ওয়াসিম আক্রমের কাছে বোলিংয়ের পাঠ নিয়েছেন তিনি । গুরু আক্রমও নিজের অধীত বিদ্যা উজাড় করে দিয়েছেন প্রিয় শিষ্যকে । দেওয়ার ক্ষমতা ও হৃদয় সবার থাকে না । নেওয়ারও যোগ্যতা থাকা চাই । এই দুই ক্ষেত্রেই আক্রম ও শামি প্রকৃত গুরু-শিষ্য জুটি । বোলারদের বধ্যভূমিতে এতো বড় মঞ্চে একজন বোলার একাই ৭ উইকেট দখল করছেন , ভাবা যায়?
শামি প্রকৃত অর্থেই একজন বড়মাপের বোলার । ব্যক্তিগত জীবনের হাজারো সমস্যা যিনি অতিক্রম করতে পারেন শুধুমাত্র বোলিং ক্যারিশমায় ।

রোহিত যেন ক্যাপ্টেন কুক । ক্যাপ্টেন কুল তো বটেই । নিজে ডাকাবুকো ব্যাটার । সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন । ব্যক্তিগত রেকর্ডের হাতছানিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন । দেশ ও দলের স্বার্থে নিজেকে বলি দিতে কখনও দ্বিধা করেন না । শুরুতেই বিপক্ষ বোলারদের আক্রমণ করে তাদের ব্যাকফুটে ঠেলে দিতে জুড়ি নেই রোহিতের এবং এ ব্যাপারে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সফল তিনি । তিনি জানেন তিনি নিজে শুরুতেই আউট হয়ে গেলেও দলের হাল ধরার মতো অনেক ব্যাটার রয়েছেন তাঁর দলে ।

সঙ্গে এও উল্লেখ করতে হয় যে , এই ভারতীয় ক্রিকেট দলের ভারসাম্য অসামান্য । কপিল দেব , সৌরভ গাঙ্গুলি ও মহেন্দ্র সিং ধোনির পরে অন্যতম সেরা অধিনায়ক হিসেবে অবশ্যই আসবে রোহিতের নাম । তবে হ্যাঁ , রোহিত যা দল পেয়েছেন , তেমন ব্যালান্সড দল আগের অধিনায়কেরা কেউই পান নি । ভারতের বোলিং স্কোয়াড এই মুহূর্তে বিশ্বসেরা । ব্যাটিং বিভাগে প্রবীণ ও নবীনের অসাধারণ সমন্বয় । চমৎকার ফিল্ডিং সাইড । আর কি চাই ?

শামির রুদ্রমূর্তি দেখে অনেকেই যেমন বলেছেন ‘ শামি-ফাইনাল ‘ , ঠিক তেমনই ভারতের সামনে অন্য দলগুলোর কুঁকড়ে যাওয়া দেখে অনেকেই বলতে শুরু করেছেন ‘ এবার না হলে নেভার ‘ । খুব একটা ভুল বলছেন না তাঁরা ।

মাত্র ২১২ রানের পুঁজি নিয়েও অস্ট্রেলিয়ার মতো পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলকে যেভাবে কোনঠাসা করে ফেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা , তা দেখে বিস্তর আনন্দ পেয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা । কিন্তু শেষরক্ষা হয় নি । শেষ হাসি হেসেছে অস্ট্রেলিয়া । তারাই আজ ফাইনাল খেলতে নামছে ভারতের বিপক্ষে । মনে রাখতে হবে এই বিশ্বকাপের প্রাথমিক পর্যায়ের খেলায় সবকটি দলই হেরেছে ভারতের কাছে , অস্ট্রেলিয়াও । আজ আবার তারা মুখোমুখি । ষষ্ঠবার কাপ জয়ের লক্ষ্যে নামবে অজিরা, আমেদাবাদে । পারবে কি ? ধারাবাহিকতার বিচারে ভারত এবার তাদের চেয়ে ঢের এগিয়ে । পারফরম্যান্সের নিরিখেও । কিন্তু তবুও ক্রিকেটে অসম্ভব বলে কিছু নেই । অনিশ্চিয়তার এই খেলায় কোনো ভবিষ্যদ্বাণী খাটে না । ভারত এর আগে দু’বার বিশ্বকাপ জিতেছে । এবার জিতলে তৃতীয়বার বিশ্বজয়ের স্বাদ পাবে তারা । টানা দশটা ম্যাচে জিতে এই মুহূর্তে তারা এসে দাঁড়িয়েছে ঠোঁট থেকে কাপের দূরত্বে । মনে তো হচ্ছে তীরে এসে তরী ডুববে না তাদের । যদিও খেলাটার নাম ক্রিকেট , তবু , আর মাত্র একটা ম্যাচ জিততে হবে ভারতকে । তাহলেই আবার বিশ্বজয় । দারুণ সাহসী ও আগ্রাসী ক্রিকেট খেলেছে ভারত । ডাকাবুকো , ভয়ডরহীন ক্রিকেট । দলটাকে দেখে মনে হচ্ছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ একটা দল , যাদের একমাত্র লক্ষ্য তৃতীয়বার বিশ্বকাপ জয় ।
শোনা যায় ভাগ্যলক্ষী নাকি সবসময় সাহসীদের সঙ্গেই থাকেন ।‌

হবে না ? হবে না কি আরেকবার বিশ্বজয় ? হৃদয় বলছে ‘ হবে ‘ । মগজও বলছে ‘ হবে ‘ । অবশ্যই হবে । এবার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ থেকেই দলপতি রোহিতের পৌরহিত্যে চূড়ান্ত পেশাদার ক্রিকেট উপহার দিচ্ছে ভারত । সকলেরই পাখির চোখ বিশ্বকাপ । ভারত না জিতলে অবাক হবে সারা পৃথিবী । ছুটছে অশ্বমেধের ঘোড়া দুরন্ত বেগে ।

আরও পড়ুন- কংগ্রেসকে ন.কল করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে বিজেপি, প্রধানমন্ত্রীকে তো.প মল্লিকার্জুন খাড়গের

Previous articleকংগ্রেসকে ন.কল করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে বিজেপি, প্রধানমন্ত্রীকে তো.প মল্লিকার্জুন খাড়গের
Next articleএকনজরে আজকের পেট্রোল-ডিজেলের দাম