রাজস্থানের কোনও দলের ই.স্তেহারে জল সমস্যা সমাধান নিয়ে উচ্চবাচ্য নেই!

জয়পুর থেকে শ’দেড়েক কিলোমিটার দূরে প্রাচীর ঘেরা শহর সওয়াই মাধোপুর। জেলার শিওয়াড় কসবা। ঠেলাগাড়িতে করে আট-দশ বালতি ভর্তি জল নিয়ে যাওয়া নিত্যদিনের কাজ বানোয়ারি লাল ও তাঁর স্ত্রীর। কারণ, নল থাকলেও জল নেই। জলের ট্যাঙ্কার আসে বাড়ি থেকে তিন-চার কিলোমিটার দূরে। জল ভরার লাইনে দিন কেটে যায়। তার পরে ঠেলাগাড়ি ভর্তি বালতি নিয়ে বাড়ির পথ ধরা।এ ছবি রাজস্থানের চেনা।

ভোট আসে। ভোট যায়। রাজস্থানে পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদল হয়। বানোয়ারি লালদের জলের সমস্যার কোনও রদবদল হয় না। কংগ্রেস নেতারা আসেন। বিজেপি নেতারা ঘুরে যান। তাঁদের কেউ পানীয় জলের সমস্যা মিটিয়ে দেবেন শুনলে তাই বানোয়ারি লালেরা আর সে কথা কানেই তোলেন না। বিশ্বাস করা দূরের কথা!

সওয়াই মাধোপুর থেকে অজমেঢ়, ভরতপুর থেকে আলওয়াড়, দৌসা থেকে বু্ন্দি, ঢোলপুর থেকে ঝালওয়ার-বারান—রাজস্থানের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের ১৩টি জেলা জুড়ে বছরের পর বছর পানীয় জল ও সেচের জলের সমস্যা।

অথচ, রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচনের বিভিন্ন দলের ইস্তেহার প্রতিশ্রুতির মধ্যে কোথাও নেই  বছরের পর বছর ধরে চলে আসা জলের সমস্যার হাত থেকে মুক্তির প্রতিশ্রুতি।  বিধানসভা নির্বাচনের তৃতীয় পর্যায়ে আগামী ২৫ নভেম্বর হতে চলেছে মরুরাজ্য রাজস্থানের নির্বাচন।রাজস্থানের নির্বাচনে মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি এবং কংগ্রেস স্বাভাবিকভাবেই  বেকারত্ব ,নারীদের উন্নয়ন, এলপিজি গ্যাসের দাম কমানো সহ একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু রাজস্থানের মূল সমস্যার দিকে কেউ ফিরেও তাকাইনি। মরুরাজ্যের একাধিক  গ্রামের মানুষ চাষাবাদের জন্য এবং পানীয় জলের উৎস হিসেবে বৃষ্টির জলের ওপর নির্ভরশীল।

স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও রাজস্থানের অনেক গ্রামেই নেই পানীয় জল। রাজ্যের শেখাওয়াটি অঞ্চলে জল সংকট একটি গুরুতর সমস্যা। এখানকার  গ্রামের  পর  গ্রামের মানুষ চাষাবাদের জন্য এবং পানীয় জলের উৎস হিসেবে বৃষ্টির জলের ওপর নির্ভরশীল। এক বছরে বৃষ্টি না হলে ঘরের মহিলাদের জল আনতে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয়। অথচ কোনও দলের প্রতিশ্রুতিতেই উঠে আসেনি, রাজস্থানের এই জ্বলন্ত সমস্যা।

ইস্টার্ন রাজস্থান ক্যানেল প্রজেক্ট (ইআরসিপি) চাম্বল অববাহিকা থেকে বর্ষার উদ্বৃত্ত জলকে কাজে লাগানোর জন্য তৈরি হলেও প্রকল্পটি বছরের পর বছর ধরে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে জর্জরিত । একদিকে যখন কংগ্রেস কেন্দ্রকে ইচ্ছাকৃতভাবে ইআরসিপি কে জাতীয় মর্যাদা দেওয়ার অনুমতি না দেওয়ার অভিযোগ।  অন্যদিকে বিজেপি অভিযোগ করেছে যে রাজ্যের শাসক দল প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য গঠনমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার পরিবর্তে রাজনীতি করছে। এমনকি রাজস্থানের তথাকথিত অভিজাত  এলাকার বাসিন্দারাও জলের সমস্যার অভিযোগ করেছেন,  যে তারা প্রতি তিন দিন পর পর জলের সরবরাহ পান। রাজস্থানের  আলওয়ার (গ্রামীণ) থেকে কংগ্রেস প্রার্থী টিকারম জুলি অশোক গেহলট সরকারের  মন্ত্রীও ছিলেন। তিনিও মেনে নিয়েছেন যে এলাকার জল সংকট একটি মূল সমস্যা এবং তিনি নাগরিকদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি ইআরসিপির মাধ্যমে আলওয়ারে জল সরবরাহ আনবেন।

Previous articleইজরায়েল-গাজার যুদ্ধ যেন আঞ্চলিক সংঘর্ষের রূপ না নেয়: G-20 সামিটে বার্তা মোদির
Next articleকোকাকোলার সঙ্গে মউ স্বাক্ষর লক্ষ্মী চা সংস্থার: আসছে নয়া নরম পানীয়, পর্যটন নিয়ে আশাবাদী রুদ্র