টানা ১৪ বছর ভেন্টিলেশনে হাওড়ার সোনু যাদব, ‘অ.লৌকিক’ টিঁকে থাকাই যেন ভ.বিতব্য!

একটা পোকা ঘুরে ফিরে বসছে বেডে শোওয়া ছেলেটার ঠোঁটে-নাকে -চোখে। সে মাথা ঘুরিয়ে সরাতে চাইছে। পোকাটা আবার এসে বসছে। শেষ পর্যন্ত এক জন ওটি সিস্টার এসে পোকাটা হাত দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার পর একটু স্বস্তি পেল সে। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি নিয়েই বলল, এই ভাবে বেঁচে থাকার কোনও অর্থ আছে?

প্রায়  টানা ১৪বছর ভেন্টিলেশনে রয়েছে হাওড়ার সোনু যাদব। দৌড়তে গিয়ে রাস্তায় পড়ে গুরুতর চোট পেয়েছিলেন। সেটা ২০০৯ সালের অগস্ট মাসের কথা। হাসপাতালের শয্যায় ভেন্টিলেশনে শ্বাস নিতে নিতেই সে দিনের এগারো বছরের বালক আজ যৌবনে পা দিয়েছে। বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজির আটটি ভেন্টিলেটরের মধ্যে একটি গত ১৪ বছর ধরে শুধু সোনুর জন্যই বরাদ্দ। পশ্চিমবঙ্গে এত বেশি দিন কারও ভেন্টিলেটারে থাকার উদাহরণ চিকিৎসকেরা চট করে মনে করতে পারছেন না।

বেশি দিন ভেন্টিলেটরে থাকলে নানা রকম সংক্রমণ ছড়াতে দেখা যায়। সোনুর ক্ষেত্রে তা হয়নি। যত্নে থাকায় বেডসোরও হয়নি। অথচ ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞদের  অভিজ্ঞতা বলছে, ‘‘সাধারণত কয়েক মাস ভেন্টিলেটরে থাকলেই অনেক শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়। বেশির ভাগ মানুষই তাই ফিরে আসেন না। সেখানে এই ছেলেটি ১৪ বছর ভেন্টিলেটারে রয়েছে। এ প্রায় অলৌকিক ঘটনা!

এই ‘অলৌকিক’ টিঁকে থাকাই যেন আরও বিচলিত করছে চিকিৎসকদের। তাঁরা সখেদে বলছেন, ‘‘একটা মানুষকে প্রকৃতি জীবনের কিনারে নিয়ে গিয়েও ঠেকিয়ে রেখেছে, অথচ আমরা তাকে ‘কোয়ালিটি লাইফ’ দিয়ে সাহায্য করতে পারছি না!’’
বিআইএনের নিউরো সার্জারি প্রধান শুভাশিস ঘোষ বলেছেন, ‘‘ডাক্তারি পরিভাষায় এমন রোগের নাম ‘অ‌্যাটল্যান্টো-এক্সিয়াল ডিসলোকেশন’। ওকে ওষুধ খেতে হয় না। কিন্তু নিজের থেকে শ্বাসটুকুও নিতে পারে না। তাই যতদিন বাঁচবে ভেন্টিলেশনে থাকতে হবে। সোনু সব দেখে। বোঝে। আগে কাঁদত। এখন নিজের ভবিতব্য দেখে নিজেই হাসে।’’ টানা চোদ্দো বছর দেশের কোনও সরকারি হাসপাতালে নিখরচায় এমন চিকিৎসাধীন থাকার নজির নেই।

Previous articleসহপাঠীকে শিকলে বেঁধে জীবন্ত পুড়িয়ে মারল ‘রূপান্তরিত প্রেমিক’
Next articleগৃহহীনদের সরকারি ঘর থেকে ‘রোজগার’, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বিরুদ্ধে ক.ড়া পুরসভা