মুখ্যমন্ত্রীর সফর ঘিরে সেজে উঠেছে চাকলা লোকনাথ ধাম, হবে কর্মিসভাও

৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে চাকলার লোকনাথ ধাম। মন্দিরের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের পর উদ্বোধনে বৃহস্পতিবার দেগঙ্গার চাকলায় যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেবেন পুজো। পাশাপাশি গোটা উত্তর ২৪ পরগনার চারটি সাংগঠনিক জেলার সব স্তরের নেতা-কর্মীদের নিয়ে কর্মিসভাও করবেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে দফায় দফায় মন্দির পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন জেলা নেতৃত্ব। হেলিপ্যাডের জায়গা, মঞ্চ ও উন্নয়নের কাজকর্মের অগ্রগতিও সরেজমিনে পরিদর্শন করেন জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী ও প্রশাসনের আধিকারিকরা। মন্দির কমিটি এবং আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকও করেন জেলাশাসক। জেলার মন্ত্রী-বিধায়করাও বারবার পরিদর্শন সেরেছেন। তৃণমূল নেতা তাপস রায় জানান, প্রস্তুতি একেবারে শেষ পর্যায়ে। চারটি সাংগঠনিক জেলার সমস্ত স্তরের নেতা-মন্ত্রী-পঞ্চায়েত-পুরসভার জনপ্রতিনিধিরাও থাকবেন।

উত্তর ২৪ পরগণা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী বলেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে হিন্দুদের বিভিন্ন তীর্থস্থানগুলোর অভূতপূর্ণ উন্নয়ন হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে আমাদের রাজ্যের বিভিন্ন তীর্থস্থানগুলির ছিল ভগ্নদশা। কিন্তু রাজ্যের মা-মাটি-মানুষের সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর বাংলার মা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে দক্ষিণেশ্বর থেকে শুরু করে তারাপীঠ, আদ্যাপীঠ, কালীঘাট, কচুয়া ও চাকলা লোকনাথ বাবার মন্দিরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। মু্খ্যমন্ত্রীর হাত ধরেই চাকলা ও কচুয়ায় লোকনাথ বাবার মন্দিরে নতুন করে উন্নয়নের কাজ চলছে।’’

দেগঙ্গার চাকলা লোকনাথ মন্দিরে সারা বছর ভক্তদের ভিড় থাকে। মন্দিরকে কেন্দ্র করে বেড়েছে ব্যবসা ও কর্মসংস্থান। সেই মন্দিরকেই পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করতে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মন্দিরের পরিকাঠামোগত উন্নয়নে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সম্প্রতি শেষ হয়েছে আন্তর্জাতিক ভক্ত সম্মেলন। ইতিমধ্যে এই দু’টি জায়গায় বড়ো ওভারগেটের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়। ভক্তদের রাতে যাতে থাকতে কোন অসুবিধা না হয় সেজন্য ভক্ত নিবাস তৈরির কাজও হয়েছে দ্রুত গতিতে। মন্দির চত্ত্বরে শেডের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। মন্দিরের ভিতরে ও বাইরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়াও ভক্তদের সুবিধার্থে আরও উন্নয়নের কাজ চলছে। প্রতিদিন কয়েকশো পুণ্যার্থী আসেন বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর জন্মস্থান উত্তর ২৪ পরগণার চাকলা ধামে। তবে বিশেষ দিনগুলিতে লক্ষাধিক পুণ্যার্থীর সমাগম হয়।

নবান্ন সূত্রে সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার হাওড়ার ডুমুরজোলা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টায় হেলিকপ্টারে চাকলায় আসবেন মুখ্যমন্ত্রী। এর জন্য মন্দিরের ২৫০ মিটার দূরে অস্থায়ী ভাবে হেলিপ্যাড তৈরি হয়েছে। জেলাশাসক-সহ প্রশাসনের আধিকারিকরা হেলিপ্যাডের মাঠ পরিদর্শন করেন।

১২টা ৪০মিনিটে মুখ্যমন্ত্রী এসে পৌঁছবেন মন্দিরের মূল গেটে। উত্তরীয়, শাল এবং ফুল দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হবে। এর পর বাবা লোকনাথকে পুজো দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর পুজোর জন্য মিষ্টি, মিছরি, ফল, ফুল, শাড়ি, মোমবাতি এবং ধুপকাঠি দিয়ে পুজোর ডালা সাজিয়ে রেখেছে মন্দির কমিটি। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের জন্য সাধারণ ভক্তদের পুজো দিতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেদিকেও নজর রাখছে প্রশাসন।

পুজো শেষ করে মন্দির প্রাঙ্গণে তৈরি মঞ্চে আসবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই বাবা লোকনাথের একটি মূর্তি তাঁর হাতে উপহার তুলে দেবে মন্দির কমিটি। মঞ্চ থেকে মন্দিরের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে লোকোত্তম নামে একটি স্যুভেনির উদ্বোধন করারও কথা আছে মুখ্যমন্ত্রীর। ‘সবার অন্তরে লোকনাথ’ শীর্ষক একটি বই মুখ্যমন্ত্রীকে উপহার দেওয়া হবে।

মন্দির কমিটির সভাপতি নবকুমার দাস বলেন, “আমরা সকলেই মুখ্যমন্ত্রীর অপেক্ষায় রয়েছি। তাঁর জন্যই চাকলার লোকনাথ মন্দির পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে।”

প্রথম পর্যায়ের কর্মসূচি শেষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসবেন দলীয় কর্মিসভায়। মন্দির থেকে ৫০ মিটার দূরে একটি মাঠে কর্মিসভা হবে। সেখানেই দলের সব স্তরের নেতা, কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করবেন দলনেত্রী। সভা শেষে কলকাতায় ফিরবেন মুখ্যমন্ত্রী।

Previous articleঅবৈধ মদের কারবার! গ্রেফতার বিজেপি নেতা, বাজেয়াপ্ত ১৪ হাজার বোতল বিদেশী মদ
Next articleজয়েন্ট পরীক্ষার আগেই ছাত্রী-ট্রা.ন্সজেন্ডারদের সুখবর শোনাল রাজ্য! বড় ঘোষণা শিক্ষামন্ত্রীর