Thursday, August 21, 2025

চরম অ.র্থকষ্টের জেরেই কি এমন ‘ডিসিশন’? সুমনের ফেসবুক লাইভ ঘিরে চা.ঞ্চল্য

Date:

কলকাতায় (Kolkata) বন্ধ ফ্ল্যাটের (Flat) ভিতর থেকে উদ্ধার হয়েছে বাবা-মা এবং তাঁদের একমাত্র পুত্রসন্তানের ঝুলন্ত দেহ। তাঁরা একসঙ্গে আত্মহত্যা (Suicide) করেছেন কি না তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে বুধবার পুলিশের হাতে এসেছে একটি ফেসবুক লাইভের (Facebook Live) সূত্র। আর ওই সূত্র ধরেই দানা বাঁধছে রহস্য। পুলিশ সূত্রে খবর ওই ফেসবুক লাইভটি করেছেন সুমনরাজ মৈত্র (Suman Raj Moitra)। ৩৯ বছরের সুমনরাজ সেই লাইভে জানিয়েছেন, তাঁরা একটি সিদ্ধান্ত (Decision) নিয়েছেন। আর সিদ্ধান্ত নাকি তাঁদের নিতেই হতো।

তবে প্রাথমিকভাবে গড়িয়া স্টেশন এলাকায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ বিষয়টিকে আত্মহত্যার ঘটনা বলে মনে করছে বলে সূত্রের খবর। ওই এলাকার বন্ধ ফ্ল্যাটের দরজা খোলার পর তিন জনের দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এঁরা হলেন অপর্ণা মৈত্র (৬৮), তাঁর স্বামী স্বপন মৈত্র (৭৫) এবং তাঁদের ছেলে সুমনরাজ। স্বপন পেশায় সেরামিক ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। স্থানীয়রা এ-ও জানিয়েছেন যে, গত তিন দিন ধরে মৈত্র পরিবারের কাউকে বাইরে বেরোতে দেখেননি তাঁরা। বুধবার সকালে ফ্ল্যাটের ভিতর থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানোয় পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছিল। তারাই এসে ফ্ল্যাটের ভিতরে তিনটি আলাদা জায়গায় তিন জনের দেহ ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। পুলিশ সূত্রে খবর, ফেসবুক লাইভে কিছুটা অসংলগ্ন ভাবে সুমনরাজকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমার কী করা উচিত? আমাকে দেখতে পেলেই ওরা মেরে দেবে বলছে!’’ এরপরে কিছুটা থেমে আবার সুমনরাজকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমার এক ছোটোমামা আছে তাকে এটা বলেছি। জানি না, উনি বলছেন একটু অপেক্ষা করে যেতে। এখান থেকে আমাদের শিফট করে দেবেন। কিন্তু চলে যাওয়াটা এর সমাধান নয়।’’

সুমন আরও বলেছেন, ‘‘বেশ কিছু দিন হল, এখানকার বাচ্চারা আমাকে পাগল পাগল বলে যাচ্ছে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আজই আমাকে একটা ডিসিশনে আসতে হবে। হয়তো আমি সেই ডিসিশনটা নিয়েও ফেলেছি।’’ পাশাপাশি লাইভে সুমনরাজকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘‘আমাকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। গত ৯ বছরে আমি কারও সঙ্গে কোনও কথা বলিনি।’’ তবে সুমনের বাবা স্বপন মৈত্র ছিলেন সেরামিক ইঞ্জিনিয়ার। ছেলেবেলা থেকে অভাব কাকে বলে জানা ছিল না ৩৯ বছরের সুমন মৈত্রের। আগাগোড়া ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা। এমনকি বাড়িতেও নিজেদের মধ্যে কথোপকথন চলত ইংরেজিতে। তবে আচমকা তাঁদের পরিবারে অবসাদ এবং অর্থাভাবের কালোছায়া নেমে আসে। মামা আর্থিক সাহায্য করতেন বটে। কিন্তু মামার কাছে হাত পেতে আর কতদিন! শেষ পর্যন্ত কি অভাবের তাড়নায় চরম সিদ্ধান্ত নিল গড়িয়া গড়াগাছার বহুতল আবাসনের বাসিন্দা মৈত্র পরিবার?

স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, মৈত্র পরিবারের সঙ্গে কারও তেমন ঘনিষ্ঠতা ছিল না। তবে কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেও তাঁদের দেখেননি কেউ। মূলত, নিজেদের মতোই থাকতেন মৈত্ররা। মাঝেমাঝে ফ্ল্যাটে আসতেন এক ব্যক্তি। তিনি সুমনের মামা দেবাশিস ঘোষ। পুলিশ সূত্রে খবর, গত বছর ২৮ ডিসেম্বর দেবাশিসই এসেছিলেন বোনের বাড়িতে। ঘটনার খবর পেয়েও ছুটে এসেছেন দেবাশিস। তাঁর দাবি, ওই পরিবারকে আর্থিক ভাবে তিনিই দেখাশোনা করতেন। ফ্ল্যাটটিও তাঁর। প্রসঙ্গত, হার্টের সমস্যা ছিল স্বপনের। কিছু দিন আগে তাঁর বাইপাস সার্জারিও হয়। সম্প্রতি চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ডাক্তারের ফি দেওয়ার মতো টাকা ছিল না মৈত্র পরিবারের কাছে। আবার দেবাশিস যখন গত ২৮ ডিসেম্বর ডাক্তার দেখানোর জন্য সেই টাকা দিতে চেয়েছেন বলে দাবি করছেন, সেই টাকা নেননি সুমনরা। তবে মৈত্র পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা যে ছিল, তার প্রমাণ হিসাবে স্থানীয়রা বলছেন, ফ্ল্যাট রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বাবদ টাকা মৈত্র পরিবার ছ’মাসের অগ্রিম হিসাবে দিয়ে দিতেন। কিন্তু তাঁরা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি, আদতে ঘোর আর্থিক সমস্যায় ভুগছে পরিবারটি।

 

 

 

Related articles

যোগীরাজ্যের পাঠ্যপুস্তকে বাদ কেন রবীন্দ্রনাথকে? সাংসদ ঋতব্রতর প্রশ্নে অস্বস্তিতে কেন্দ্র

উত্তরপ্রদেশের দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কি বাদ দেওয়া হয়েছে? তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্নে স্পষ্টতই...

প্রয়াত সিপিএম নেতা-প্রাক্তন মন্ত্রী দীনেশচন্দ্র ডাকুয়া

প্রয়াত সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা দীনেশচন্দ্র ডাকুয়া। বুধবার এনআরএস হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।...

উপাচার্য নিয়োগের ইন্টারভিউয়ে ডাক মেলেনি! শীর্ষ আদালতে শান্তা দত্ত 

স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের ইন্টারভিউ পর্বে ডাক পাননি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য শান্তা দত্ত। যোগ্য হয়েও তাঁকে সুযোগ দেওয়া...

১৫ দিনেই রেকর্ড সাফল্য! রাজ্যে সাড়া ফেলল ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচি

মাত্র পনেরো দিনেই নজির গড়ল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন কর্মসূচি, ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’। রাজ্যের মানুষের হাতে উন্নয়নের...
Exit mobile version