উত্তরবঙ্গের মুকুটে নয়া পালক, জিআই তকমা পেল বিখ্যাত কালো-নুনিয়া চাল

ধানের দেশ বাংলা। অথচ এখানে যে নানা জাতের ধানের চাষ হয়, তার প্রায় কোনওটারই জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই তকমা নেই। এবার সেই তালিকায় নাম লেখালো উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত কালো-নুনিয়া চাল। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেট এগ্রিকালচারাল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড এক্সটেনশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে মিলিতভাবে জিআই-এর জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল।

উত্তরবঙ্গ ও তরাই অঞ্চলে বেশ কিছু বিশেষ ধরণের আমন ধানের চাষ হয়। তারই একটি কালো-নুনিয়া। মাঝারি মাপের গাছের উপর সরু এবং লম্বা ধানগুলির রং হয় কালো। তাই এমন নাম। তবে ধানের ভিতরে যে চাল থাকে, তার রং সাদাই। এবং সেই চাল ফোটালে তার গন্ধে আশেপাশের মানুষ মাতোয়ারা হয়ে যান। “কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের সময় এই ধানের চাষ হত। এবং এই চালের তৈরি পায়েস মদনমোহন মন্দিরে ঠাকুর মদনমোহনকে ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হতে। আজও মদনমোহনকে কালো নুনিয়া চালের পায়েস দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। সুগন্ধি কালো নুনিয়া চালের গরম ভাত। সঙ্গে ঘি, কাঁচা লঙ্কা, ছাঁকা তেলে ভাজা বেগুনি, ভোজন রসিকদের জিভে জল আনতে বাধ্য।”জেলায় সুফল বাংলা স্টলে পাওয়া যায় কালো নুনিয়া চাল।
আজও পিঠে এবং পায়েস তৈরিতে এই চালের ব্যবহার ব্যাপক। তবে ফলন নিয়ে সমস্যা ছিল দীর্ঘদিন। কৌশিক মজুমদার জানালেন, “অন্য ধান যেখানে বিঘায় ১৪ মনের বেশি পাওয়া যেত, এই ধান পাওয়া যেন ৫ মনের কম। কিন্তু ইদানিং সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে চাষ করেও বিঘা প্রতি ১২ মনের বেশি ধান পাওয়া যাচ্ছে।” আর বাজারে এর দামও যথেষ্ট বেশি। ফলে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ক্রমশ কালো-নুনিয়া ধান জায়গা করে নিচ্ছে নতুন করে। এবার কালো নুনিয়া ধান জিওগ্রাফিকেশন রেজিস্ট্রেশন পাওয়াতে,গোটা বিশ্বের দরবারে এই কালো ধান যে আলাদা মাত্রায় সমাদৃত হবে, তা বলাই বাহুল্য। এই প্রসঙ্গে জেলাশাসক আর বিমলা বলেন, এটা জেলার জন্য খুব খুশির খবর, আমরা সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার কৃষকদের কালো নুনিয়া চাষে আরও বেশি উৎসাহিত করা যাবে।