বিরোধী শাসিত একাধিক রাজ্যে তদন্তে গিয়ে বারে বারে আক্রান্ত হয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিক-কর্মীরা। কিন্তু সেই সময়ে মুখে কুলুপ দিয়ে বসে ছিল মোদি সরকার। আর বাংলায় একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে আইন শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে বলে রব তুলেছে রামধনু জোট। রাজ্য পুলিশ প্রশাসনকে না জানিয়েই শুক্রবার রেশন মামলার তদন্তে সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে যায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। স্থানীয় মানুষের রোষের মুখে পড়তে হয় ইডির (ED) আধিকারিকদের। আহত হন ৩ ইডি আধিকারিক। এই ঘটনায় গেলো গেলো রব তুলে বাংলায় আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে বলে শোরগোল করছে বিজেপি-সহ বিরোধীরা। অথচ এই মোদি সরকারের আমলেই ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে যেখানে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকরা তদন্তে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। বিজেপি বা বাম-শাসিত সব রাজ্যেই তদন্তে গিয়ে জনরোষের মুখে পড়েছে ইডি-সিবিআই। কিন্তু তখন রাজ্যের দিকে আঙুল তোলেনি BJP।

২০১৯ সাল: দিল্লির কাছেই গ্রেটার নয়ডার সোনপুরায় CBI আধিকারিকদের উপর হামলা হয় জমি মাফিয়ারা সেই আক্রমণ চালায়। যোগী রাজ্যে যমুনা এক্সপ্রেসওয়েতে ১২৬ কোটি টাকার জমি দুর্নীতির অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করতে যাওয়া সিবিআই অফিসারদের মারধরের পাশাপাশি তাঁদের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁরাও সিবিআই কর্মী বলে সূত্রের খবর। পুরো টিমকে আটকে রেখে গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। গুরুতর আহত হন সিবিআই আধিকারিক ও কর্মী।


২০২১ সাল: ওড়িশার ঢেঙ্কানলে শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের তদন্তে যায় CBI। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের আটকে রাখে অভিযুক্ত-সহ স্থানীয়রা। অভিযুক্ত সুরেন্দ্র নায়েককেও গ্রেফতার করে নিয়ে যেতে বাধা দেওয়া হয়।

২০২১ সাল: বাম শাসিত কেরালার তিরুবনন্তপুরমে ২৬ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি অভিযান চালানো হয় সিপিএম নেতা কে বালাকৃষ্ণণের বাড়িতে। তল্লাশির পরে আটকে রেখে ইডি অফিসারদের উপর আক্রমণ চালানো হয়। অভিযোগ, এই হামলার নেতৃত্বে ছিলেন স্বয়ং রাজ্য পুলিশের এক ইন্সপেক্টর। ড্রাগ ব্যবসা এবং বেআইনি টাকা পাচারের অভিযোগে বেঙ্গালুরু থেকে যাওয়া ইডি টিম সিপিএম নেতাকে গ্রেফতার করে।


২০১৫ সাল: শুধু রাজনৈতিক দলের কর্মী বা স্থানীয়রাই নন, লখনউতে সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিকদের উপর হামলা চালান কেন্দ্রীয় সরকারেরই আরেক সংস্থা আয়কর দফতরের কর্মীরা। সেই দফতরের কর্মীদের ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করতে যাওয়ার সময় সিবিআইয়ের উপর অভিযুক্তদের সহকর্মীরা।

আরও পড়ুন: মুড়িগঙ্গা নদীর চরে পণ্যবাহী জাহাজে আগুন

এই সব ঘটনার সময়ই কেন্দ্রে ছিল বিজেপি সরকার। কিন্তু এই ঘটনাগুলির জন্য কেন্দ্রের তরফ থেকে রাজ্যপালের কাছে কোনও রিপোর্ট চাওয়া হয়নি। যে সময় এই হামলা নিয়ে মুখে কুলুপ বিরোধীদের। কিন্তু শুক্রবার সন্দেশখালির ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক অতিসক্রিয়। রাজ্যপাল থেকে শুরু করে হাইকোর্টের বিচারপতি- রাজ্য প্রশাসনকে কাঠগড়ায় তুলছে। অথচ ইডি যে রাজ্য প্রশাসনকে না জানিয়ে তদন্তে গিয়েছিল, সে কথা একবারও নেই বিরোধীদের মুখে।
