জানলে অবাক হবেন,অবসরের পর অফিসের তিনটি মোবাইল ফেরত দেননি বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী!যার নিট ফল, বিদ্যুৎবাবুর শেষ মাসের বেতন থেকে ৪৫ হাজার টাকা কেটে নিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই ফের প্রাক্তন বিতর্কিত উপাচার্যকে নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে শান্তিনিকেতনে।বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, সরকারি নিয়ম মেনেই তার বেতন থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে।বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাত বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ওঁর যা প্রাপ্য, তা বুঝিয়ে দেওয়া
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। তাঁর আমলে বেনজিরভাবে একাধিক বিতর্ক তৈরি হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভারতী নিয়ে। বিদ্যুৎবাবুর আমলেই এনআইআরএফ র্যাঙ্কিং ও ন্যাকের মূল্যায়নে তলানিতে পৌঁছয় বিশ্বভারতী।অভিযোগ, পড়াশোনা শিকেয় উঠিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কর্মসূচি উদযাপন করতে তিনি তৎপর হন।

শুধুমাত্র তাই নয়, উপাসনা গৃহের মতো পবিত্র অঙ্গনে প্রায়ই বিতর্কিত কথা বলে প্রাক্তনী ও আশ্রমিকদের বারবার আক্রমণ করেছেন তিনি। এমনকী, বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উৎসব ও পৌষমেলা বন্ধ করার অভিযোগ উঠে তাঁর বিরুদ্ধে। নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনকে জমি হরণকারী বলে আক্রমণ করতেও দ্বিধা করেননি। এনিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়ান। তাঁকেও কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করেন প্রাক্তন উপাচার্য।পাঁচ বছর উপাচার্য পদে থাকার পর ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর তাঁর মেয়াদ শেষ হয়। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন কলাভবনের অধ্যক্ষ সঞ্জয় কুমার মল্লিক।
জানা গিয়েছে, অবসরের পর বিদ্যুৎবাবু পাওনা-গন্ডা ও শেষ মাসের বেতন দেওয়ার জন্য বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে দাবি জানান। তাঁর ক্লিয়ারেন্স দেখতে গিয়ে কর্তৃপক্ষের নজরে আসে, অফিসের তিনটি মোবাইল তিনি ফেরত দেননি। উপাচার্য পদে থাকাকালীন এই তিনটি মোবাইল তিনি বিশ্বভারতীর থেকে নিয়েছিলেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে।

বিশ্বভারতীর তরফে জানা গিয়েছে, এক উপাচার্য পদে থাকাকালীন তাঁর বেতন ছিল প্রায় তিন লক্ষ টাকা। নভেম্বর মাসে তিনি আট দিন কাজ করেছিলেন। সেই হিসেবে তাঁর বেতন পাওয়ার কথা ৪৯ হাজার টাকা। কিন্তু দামি মোবাইলগুলি ফেরত না দেওয়ায় ৪৫ হাজার টাকা কর্তৃপক্ষ কেটে নিয়েছে। তাঁকে চার হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। যদিও বিদ্যুৎবাবু পুরো মাসের বেতন দাবি করেছিলেন। কর্তৃপক্ষ তাতে রাজি না হওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কোন আক্কেলে একজন উপাচার্য এমন শিশুসুলভ কাজ করতে পারলেন!বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর তিনটি মোবাইল নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি অধ্যাপক সংগঠন ভিবিউফা। সংগঠনের সভাপতি সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি চোর ডাকাত ধরবেন বলে আস্ফালন করতেন। এখনতো ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে। বোঝা যাচ্ছে, তার সব বক্তব্য ছিল, ‘চোরের মায়ের বড় গলা’ ছাড়া আর কিছুই নয়। কর্তৃপক্ষ যেটা করেছে তারজন্য সাধুবাদ জানাচ্ছি।
বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতো জানিয়েছেন, প্রাক্তন উপাচার্য হিসেবে বিদ্যুতের যা প্রাপ্য, তা সরকারি নিয়ম মেনে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।কিন্তু একজন শিক্ষিত ব্যক্তি, সর্বোপরি উপাচার্য হিসেবে মোবাইল ফেরত না দিয়ে বকলমে তিনি ফের প্রমাণ করে দিলেন, তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলির যথেষ্ট সারবত্তা ছিল।
