বাংলায় নতুন সম্মাননা ‘একম’ চালু করল অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়

শুধু পড়াশোনাই নয়, খেলাধুলোতেও নজর দেয় এই বিশ্ববিদ্যালয়। 'খেলো ইন্ডিয়া' প্রতিযোগিতায় একাধিক ক্ষেত্রে ভাল ফলও করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা।

বাংলায় নতুন সম্মাননা নতুন অ্যাওয়ার্ড ‘একম’ চালু করল অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়। RICE- ADAMAS প্রতিষ্ঠানের ৪০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার শহরের এক পাঁচতারা হোটেলে সম্বর্ধনা দেওয়া হল বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুণীদের। কে ছিলেন না সেই তালিকায়।সম্বর্ধিত হলেন প্রধান অতিথি ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুবারের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়,জাদুকর পিসি সরকার, বিশিষ্ট চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়,মেয়র তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, কবি জয় গোস্বামী সহ বিশিষ্টরা।ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর অধ্যাপক সমিত রায়, যোগেন চৌধুরী,ভাইস চ্যান্সেলর সুরঞ্জন দাস, চিকিৎসক কুণাল সরকার, স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়,মহম্মদ সেলিম, কুণাল ঘোষ, শোভন চট্টোপাধ্যায়, গৌতম ভট্টাচার্য,দেবাশিস দত্ত, বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়, বরুণ চন্দ সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।এদিন যারা সম্বর্ধিত হলেন এবং যারা সম্বর্ধনা দিলেন প্রত্যেকেই নিজেদের সম্মানিত বোধ করেন।

শুধু পড়াশোনাই নয়, খেলাধুলোতেও নজর দেয় এই বিশ্ববিদ্যালয়। ‘খেলো ইন্ডিয়া’ প্রতিযোগিতায় একাধিক ক্ষেত্রে ভাল ফলও করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। ‘খেলো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি গেমসে’ নয়টি পদক জয় করেছে অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটি। এর মধ্যে তিনটি সোনা, তিনটি রুপো এবং তিনটি ব্রোঞ্জ মেডেল রয়েছে। বাংলায় তারা প্রথম হয়েছে।সারা ভারতের মধ্যে অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটি রয়েছে ২৩তম স্থানে।এদিন সেই কৃতীদেরও সম্মানিত করা হয়।এদিনের অনুষ্ঠানের যার লক্ষ্য ছিল উৎসবের আবহে গুণীজনদের সম্মানিত করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া, অধ্যাপক ও শিক্ষাকর্মীদের একতা বৃদ্ধি করা।
অনুষ্ঠানের মধ্যমণি ক্লাইভ লয়েড ইডেন ও কলকাতা প্রসঙ্গে বলেন, কলকাতার মানুষ খুব ক্রীড়াপ্রেমী। সেটা ফুটবল হোক বা ক্রিকেটে। খেলাকে এখানে সবাই খুব ভালোবাসে। আমরা যখন ইডেন থেকে খেলে ফিরতাম। তখন রাস্তার দুই ধারে অনেক মানুষ আমাদের দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকত। এটা থেকেই বোঝা যায় এখান মানুষের খেলার প্রতি আবেগ কতটা।একইসঙ্গে লয়েড বলেন, অনেক ক্রিকেটারের যাত্রাপথ শুরু হয়েছে এখান থেকেই। ভারত থেকেই অনেকে ক্রিকেট কেরিয়ার শুরু করেছেন।মহরাজের প্রসঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রাক্তন অধিনায়ক বলেন, সৌরভ দারুণ একজন ক্রিকেটার, সেইসঙ্গে ভালো অধিনায়কও।

রোহিতদের ওডিআই পারফরম্যান্সকে বিরাট সার্টিফিকেটও দেন লয়েড। তাঁর কথায়, ভারতীয় ক্রিকেট দল একদিনের ক্রিকেটে একটা অন্য উচ্চতায় উঠছে। ধারাবাহিক ভালো পারফরম্যান্স করছে।সেইসঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বর্তমান পারফরম্যান্স নিয়ে ব্যাথিত প্রাক্তন অধিনায়ক।১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে কপিল দেবের ১৭৫ রানের ইনিংসের স্মৃতিতে এখনও আচ্ছন্ন লয়েড। তাঁর কথায়, ওটাই বিশ্বকাপের টার্নিং পয়েন্ট হয়েছিল। কপিল ১৭৫ রানের দুরন্ত একটা ইনিংস খেলেছিল। কলকাতায় সফরে এসে স্মৃতির ঝাঁপি খুলেছেন লয়েড।এক রাশ দুঃখ নিয়ে লয়েড বলেন, বিশ্বকাপ জেতার পর আমাদের দেশের ক্রিকেট বোর্ড আমাদের কোনও উপহারই দেয়নি। এটা খুবই হতাশার ছিল।

লয়েডের নেতৃত্বের ১৯৭৫ এবং ১৯৭৯ সালে বিশ্বকাপ জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্রিকেট ছাড়ার পর ম্যাচ রেফারির ভূমিকাও পালন করেছেন। ২০১৬ সালে টি২০ বিশ্বকাপের সময় কলকাতায় এসেছিলেন শেষবার। প্রায় ৮ বছর পর আবার তিলোত্তমায় এলেন লয়েড।টেস্টে সর্বাধিক রানের নিরিখে চতুর্থ সেরা ইনিংসটি খেলেছেন ইডেনে। ভারতের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ২৯০ বলে অপরাজিত ১৬১ রানের ইনিংস খেলেন।ভিভ রিচার্ডস ও বিরাট কোহলির মধ্যে তুলনায় কে সেরা? কিংবদন্তি ক্লাইভ লয়েড বলছেন, বিরাট কোহলি ও ভিভ রিচার্ডস দুজনে আলাদা ধরনের ক্রিকেটার। তাই তুলনা হয় না। বিরাট একশোটা একশো করতেই পারে। ও এখনও অনেকদিন ক্রিকেট খেলবে। ও অনেক কিছু অ্যাচিভ করতে পারে। বিশ্ব জুড়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের রমরমা। সেই প্রসঙ্গে লয়েডের উত্তর, টি-২০ ক্রিকেট হল এক্সিবিশন। আর টেস্ট ক্রিকেট হল এক্সামিনেশন। মাঠের বাইরে বল পাঠানো সহজ। ইংল্যান্ডের আবহাওয়ায় গিয়ে লাল বলে টেস্ট ক্রিকেট খেলা কঠিন। তাই আমি বলব ওখানে গিয়েই ক্রিকেট শিখে আসতে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর অধ্যাপক সমিত রায় বলেন, অ্যাডামাসে ‘একম’ উদযাপনের মধ্য দিয়ে জোর দেওয়া হল বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের বিষয়টিতে। এই অঙ্গীকারের যে আনন্দ, তা ভাগ করে নেওয়া হল উপস্থিত সকলের সঙ্গে। এই মুহূর্তগুলো সকলের মনে আজীবন সযত্নে লালিত থাকবে।১৯৮৫ সালে প্রথম বলেছিলাম সরকারি চাকরির জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ট্রেনিং প্রয়োজন। এখন সেটা বোঝা যাচ্ছে।আমি আনন্দিত, গর্বিত।রাইস অ্যাডামাস গ্রুপ উচ্চপদস্থ সরকারি চাকরির ট্রেনিং -এর ক্ষেত্রে বহু পুরনো নাম। সেটিকে আরও একধাপ এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর সমিত রায়।এমন ভাবে কোর্সওয়ার্ক তৈরি হচ্ছে, তাতে চ্যান্সেলরের আশা আগামী ৫ বছরে রাজ্যে থেকে অনেকেই UPSC-তে সফল হতে পারবেন। ভারতের একাধিক রাজ্য থেকে পড়ুয়ারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেন বলেও জানিয়েছেন আচার্য সমিত রায়।

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয় এক সম্মিলিত চেতনার প্রতীক, যেখানে বৈচিত্রের বিকাশের পাশাপাশি একতাও সমানভাবে উপস্থিত। আমাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও নিষ্ঠার যে শক্তি, তা এই অনুষ্ঠানের মধ‌্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে।সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, অ্যাডামাস এই ক বছরেই শিক্ষাজগতে যে ছাপ রেখেছে, তা আরও দীর্ঘায়িত হবে।কবি জয় গোস্বামী বলেন, একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেশের শিক্ষা জগতে যে ছাপ রাখছে তার কোনও তুলনা হয় না।

২০১৪ সালের পথচলা শুরু হয়েছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। তারপর যতদিন গিয়েছে ক্রমশ ঊর্ধ্বগামী হয়েছে বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। শিক্ষাক্ষেত্রে আধুনিকতা,প্রযুক্তি এবং মেধার মেলবন্ধনের দৃষ্টান্ত রেখেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। লক্ষ্য থেকেছে উৎকর্ষতা এবং শিক্ষার মান। এই পথচলায় যেমন পড়ুয়া ও অভিভাবকদের অবদান রয়েছে। তেমনই বড়সড় অবদান রয়েছে প্রথিতযশা শিক্ষাব্রতীদের।দরিদ্র ও প্রতিভাবান পড়ুয়াদের জন্য স্কলারশিপ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।
অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু উচ্চশিক্ষাই নয়। UPSC, WBCS হওয়ার জন্য প্রস্তুতিও যাতে পড়ুয়ারা নিতে পারেন তা দেখা হয়। প্রসঙ্গত, অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয় হল  উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসতে অবস্থিত একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এটি পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এরই মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতিত্ব দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও সমাদৃত।

 

Previous articleদিল্লিতে রেকর্ড পারদ পতন! আজই রাজধানী শহরে মরসুমের শীতলতম দিন
Next articleখুলে গেল দেশের সবথেকে বড় সমুদ্র ব্রিজ, মুম্বাই থেকে ‘দূরত্ব কমল’ গোয়ার