শীত মানেই রুক্ষতা, ঠাণ্ডা বা পাতাঝরার মরশুম নয়। এই সময়েই গোটা গ্রাম বাংলা নতুন ফসল তোলার আনন্দে মাতোয়ারা হয়। শীতের শুরুতেই গ্রামে গ্রামে ঘটা করে চলে নবান্ন (Nabanna) পালন। আর সেই সঙ্গে রাঢ়বাংলায় (Rurh Bangla) আসে টুসু বরণের পালা। লালমাটির মানুষের কাছে টুসু এমন এক মেয়ে আবাহনে মাদুর্গার আবাহনের মতো আনন্দ আছে, আর বিদায়ে আছে বিজয়ার মতো বিষাদের ছায়া। মকর সংক্রান্তি মানেই তাই মন খারাপ রাঢ় বাংলার। কারণ সংক্রান্ত মানেই টুসুকে বিদায়ের পালা।
টুসু নাম বা উৎসবের উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। কারো মতে টুসু পরব পাশ্চাত্যের গার্ডেন অফ অ্যাডোনিস (Garden of Adonis) অনুষ্ঠানের সঙ্গে মিলিয়ে প্রচলিত হয়েছিল। আবার কেউ বলেন নতুন ধানের নরম খোসা বা তুষ থেকে টুসু নামের উৎপত্তি। তবে সব ক্ষেত্রেই নতুন ফসল ওঠার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। যেহেতু টুসু কোন প্রচলিত সনাতন ধর্মের দেবতা নন, তাই তিনি পরিণত হয়েছেন বাঙালির ঘরের আদরের মেয়েতে। টুসু উৎসবের শুরুটা তাই অভিমানী, সংবেদনশীল টুসুকে সেধে সেধে ঘরে আনার মতো করেই হয়।
সনাতন দেবী বা তেমন প্রচলিত প্রথার বাইরে হওয়ায় টুসু পুজো বা আরাধনার কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। রাঢ়বাংলার মহিলারা নিজেদের পছন্দ মতো গান বেঁধে টুসুর প্রতি ভালোবাসা দেখাতেন। সেই সব গানই লোকগানের মধ্যে দিয়ে আজও রাঢ়বাংলার সন্ধ্যারতির মধ্যে দিয়ে বেঁচে রয়েছে আনন্দের সঙ্গে।
তবে মকর সংক্রান্তির আগে মন খারাপ রাঢ়বাংলার। এবার যে চোখের জলে বিদায় দিতে হবে ঘরের মেয়ে টুসুকে। সংক্রান্তির ভোরে নদীতে বা কোনও বড় জলাশয়ে পালিত হবে এই অনুষ্ঠান। সোলার ভেলায় প্রদীপ জ্বালিয়ে ভাসিয়ে দেওয়া হবে টুসুকে। আবার একবছরের অপেক্ষা থাকবে টুসু পরবের। যুগ যুগ ধরে এই রীতিই মেনে আসছে রাঢ় বাংলা। দেশের অন্য বিভিন্ন প্রান্তের শস্য উৎসবের সঙ্গে মিল রেখেই বাংলার প্রাচীন এই উৎসব পালনের রীতি। কেরালায় যেমন মকর সংক্রান্তিতে আছে পোঙ্গল, পাঞ্জাবে লোহরি, আসামে মাঘ বিহু, ঠিক সেভাবেই যুগ যুগ ধরে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম সহ রাঢ় বাংলায় টুসু পরব।