কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা একদিন বিশ্বসেরা হবে। বৃহস্পতিবার, ৪৭তম বইমেলার উদ্বোধন করে এই আশা প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাঁর কথায় বিশ্বে এত বড় বইমেলা বিরল। এবার বইমেলার (Book Fair) থিম কান্ট্রি ইউনাইটেড কিংডম। মোট কুড়িটি দেশ-সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য অংশগ্রহণ করেছে এবারের মেলায়। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, বইমেলা বিশ্বমেলায় পরিণত হয়েছে। একদিন বিশ্বসেরা হবে।

৪৭ তম কলকাতা আর্ন্তজাতিক বইমেলার উদ্বোধনে প্রথমেই গাওয়া হয় রাজ্য সঙ্গীত। সেরা সৃষ্টির সম্মান দেওয়া হল সাহিত্যিক বাণী বসুকে। ছিলেন ভারতের ব্রিটিশ উপরাষ্ট্রদূত আলেক্স এলিস, সাহিত্যিক বাণী বসু, পাবলিশার্স এন্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়, সাধারণ সম্পাদক সুধাংশু শেখর দে। রাজ্য মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যও ছিলেন। ফোকাল থিম কান্ট্রি ব্রিটেনের সঙ্গে ভারতের তথা বাংলার সম্পর্কে কথা উল্লেখ করেন মমতা (Mamata Banerjee)। জানান, এই দুদেশের মধ্যে এখন আদানপ্রদান হচ্ছে। সেদেশের অনেকে যেমন এখানে থাকেন, তেমনই বাংলার ছেলেমেয়েরা লন্ডনে যান।

বইমেলা সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগে ছোট পরিসরে হত বইমেলা। এখন বিশাল জায়গা জুড়ে হচ্ছে। এক একটি বইয়ের স্টল চোখ ধাঁধানো। মমতা জানান, ১৯৯৫-তে বইমেলায় প্রথম বই উদ্বোধন হয় তাঁর। এবারও ৬টি বই উদ্বোধন হয়েছে মমতার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রাস্তায় ট্রাভেল করতে করতে বই লিখি। নিজের হাতে লেখার সময় কম। সব থেকে ভাল হয় যদি আমি বলি আর কেউ লিখে দেয়। মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগে বইমেলা অনেক ছোট জায়গায় হত, তা নিয়ে বিতর্ক হত।গায়ে গায়ে লেগে থাকত দোকান। এখন কত বড় জায়গা হয়েছে। এই জায়গাটা এখন বইমেলা কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দিয়েছি। এটা এখন থেকে বইমেলা প্রাঙ্গণ। আমরা সব সময় সহযোগিতা করি। কারণ আমাদের সহযোগিতা ছাড়া ওরা কিছু করতে পারবে না।এরপরেই লন্ডনের রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, যদি কেউ জিজ্ঞেস করে আমাকে কীভাবে আমি লন্ডন চিনি? তাহলে বলব আমি লন্ডনের সব রাস্তা চিনি। আমি পায়ে হেঁটে ঘুরেছি লন্ডনের রাস্তায়। হাঁটতে ভালবাসি। লন্ডন শুধু আপনাদের নয়, আমাদেরও শহর। আমাদের এখানের অনেকেই সেখানে কাজ করে। যুব সম্প্রদায় ওখানে পড়াশোনা করে। খুব ভাল কমিউনিকেশন আছে আমাদের ইউকের সঙ্গে।” মঞ্চে উপস্থিত তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে মমতা জানতে চান কটা বই প্রকাশ হল? তাঁকে জানানো হয় এ পর্যন্ত ১৪৩টি বই প্রকাশ হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি আশ্বাস দেন, আরও ৭টি বই লিখে আগামী বছর ১৫০ ছুঁয়ে ফেলবেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বইমেলা এখন বিশ্বমেলা। একদিন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বইমেলা হবে।

বইমেলা নিয়ে নিজের লেখা কবিতা পড়ে শোনান মুখ্যমন্ত্রী। শেষ করেন, আমার মাথা নত করে দাও হে – রবি ঠাকুরের কবিতা দিয়ে। আরও একটি নিজের লেখা কবিতা বলেন তিনি।
“জাগো বাংলা জাগো
নব কলেবরে জাগো
সার্থক হও মা গো
পরিপূর্ণতায় জাগো”
কলকাতা পুরসভার বই প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। রীতি মেনে ঘণ্টা বাজিয়ে ৪৭তম কলকাতা বইমেলার উদ্বোধন করেন।
মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা পুলিশের স্টলে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রের মডেল সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজখবর নেন। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সাংসদ অপরূপা পোদ্দার, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, বিধাননগরেরমেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তীও। এরপর ‘জাগো বাংলা’র স্টলে যান মমতা। প্রদীপ জ্বালিয়ে ফিতে কেটে স্টলের উদ্বোধন করেন। সেখানে লোকশিল্পীদের সঙ্গে ছবিও তোলেন, এমনকী বাদ্যযন্ত্রে সঙ্গত করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মণ্ডপে গিয়ে বেশ কয়েকটি বইয়ের পাতা উল্টে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। আধিকারিক ও আয়োজকদের একগুচ্ছ নির্দেশ দেন তিনি। ঢাকের তাল আর বাউলের সুরে বইমেলা প্রাঙ্গণ তখন জমজমাট। ১ জানুয়ারি শিশু দিবস পালিত হবে এবং ওইদিন গিল্ডের তরফে বাচ্চাদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়েছে। প্রবীণদের জন্য ২৪ জানুয়ারি ‘সিনিয়র সিটিজেন ডে’ পালিত হবে। ৩১ জানুয়ারি রাত ন’টায় সমাপ্তি অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিতরণ করা হবে।
