যাঁর শিক্ষায় মেয়েরা স্বনির্ভর, সেই কাঁথাস্টিচ শিল্পীই পদ্মশ্রী

তিনিই আরও অনেক গৃহবধূ থেকে তরুণীকে উপলব্ধি করাতে পেরেছিলেন নিজের পায়ে দাঁড়ানোটা কতটা জরুরি। আর নিজের পায়ে দাঁড়ানোটা কতটা সহজ।

একসময় শুধু ঘরের কাঁথায় ফুটে থাকত এই সূক্ষ্ণ শিল্প। গ্রামের পর গ্রাম ঘরে ঘরে সেই সূঁচের কাজ করতেন বাড়ির মা-ঠাকুমারা। লালমাটির বীরভূমে সেসব এখন ইতিহাস। বীরভুম বিশেষত শান্তিনিকেতনের কাঁখাস্টিচ তো এখন শৌখিন বাঙালির মুখে মুখে। কিন্তু কাঁথাস্টিচ শিল্পী তকদিরা বেগম শুধুই একজন শিল্পী নন, তিনি শিল্পীর স্রষ্টা। সেই স্বীকৃতিই তিনি এবার পাচ্ছেন পদ্মশ্রী সম্মানের মধ্যে দিয়ে।

বোলপুর এলাকার আর পাঁচজন মহিলা যেভাবে মা ঠাকুমার থেকে কাঁথাস্টিচ শেখেন সেভাবেই শিক্ষার শুরু হয়েছিল তকদিরা বেগমের। তারপর সূঁচ-সুতো হাতে কেটে গিয়েছে ৩০টা বছর। সেখানেও স্থানীয় আর পাঁচজন মহিলার সঙ্গে তাঁর খুব বেশি পার্থক্য ছিল না। আসল তফাৎটা ছিল তাঁর মনে। কারণ তিনিই আরও অনেক গৃহবধূ থেকে তরুণীকে উপলব্ধি করাতে পেরেছিলেন নিজের পায়ে দাঁড়ানোটা কতটা জরুরি। আর নিজের পায়ে দাঁড়ানোটা কতটা সহজ।

তকদিরার হাত ধরে আজ বোলপুরের বহু মহিলা স্বাবলম্বী হয়েছেন। এক একটি পরিবারের এক একজন মহিলাকে কাঁথাস্টিচের কাজ শিখিয়ে আবার পরের প্রজন্মেরও গুরু হয়েছেন তিনি। তাঁর ভাবনার এই স্বীকৃতিতে সেই নব্বইয়ের দশকেই পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। রাজ্যের তরফ থেকেও তাঁকে শিল্পগুরু সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। তবে কোনও স্বীকৃতি তাঁকে পিছনে টেনে ধরেনি, বরঞ্চ একসঙ্গে আরও অনেক মহিলাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছে।

শান্তিনিকেতনের সান্নিধ্য নীরবে কাজ করে চলার একাগ্রতাকে রসদ জোগায়। তকদিরা তাঁদেরই মত একজন। তবে এক প্রাচীন শিল্পকে আধুনিক শিল্পের ভিড়ে সবার উপরে তুলে ধরার কৃতিত্ব অনেকটাই তকদিরা ও তাঁর শিষ্যাদের প্রাপ্য বই কী? সেই কৃতিত্বের সম্মানে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাত থেকে তিনি গ্রহণ করবেন পদ্মশ্রী সম্মান।

Previous articleফের বিপাকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, এবার সুপ্রিম কোর্টে এসএলপি দাখিল রাজ্যের
Next articleসুজয়কৃষ্ণের কণ্ঠস্বর মামলায় এবার নয়া অভিযোগ ইডির