পূর্ব ভারতের অন্যতম সেরা অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠান হল।এদিনের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১২৫৬ জন পড়ুয়ার হাতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের ডিগ্রি, সোনা ও রুপোর মেডেল এবং পিএইচডি ডিগ্রি তুলে দেওয়া হয়।পড়ুয়াদের স্বীকৃতি জানানোর পাশাপাশি এদিনের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সাম্মানিক ডিগ্রি দেওয়া হয় চার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে, যাঁরা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের অবদান রেখেছেন। তাঁরা হলেন সিএন রঘুপতি, ইনফোসিস ইন্ডিয়া বিজনেস-এর প্রধান; বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী মিনু বুধিয়া; প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. তরুণ প্রহারাজ এবং বিখ্যাত চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ভারতীয় শিশু অধিকার কর্মী ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী।তার সংগঠন বাচপান বাঁচাও ২০১৪ সাল পর্যন্ত আশি হাজারেরও বেশি শিশুকে ক্রীতদাসত্বের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে মুক্ত করেছে এবং তাদের পুনর্মিলন, পুণর্বাসন ও শিক্ষায় সহযোগিতা করেছে। তাকে ২০১৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। তিনি বলেন, সৃষ্টিকর্তার দেওয়া সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো ‘চোখ’। কারণ, চোখ দিয়েই আমরা সুন্দর ও আলাদা কিছু দেখতে পাই। এই চোখ আপনার জেদকে উসকে দেয়, ভালো কিছু করার তাগিদ দেয়।

তিনি আরও বলেন, প্রতিটি মানুষের জীবনে যে বা যাঁরা কোনওভাবে অবদান রেখেছেন, তাঁদের প্রতি প্রত্যেক মানুষের কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত।পড়ুয়াদের উচিত অধ্যাপকদের পাশাপাশি নিজেদের অভিভাবক এবং শিক্ষকদের কাছেও সমানভাবে চিরকৃতজ্ঞ থাকা। কারণ, তাঁদের হাত ধরেই ছোট থেকে পথচলা শুরু হয় প্রতিটি মানুষের। এঁরাই সেই মানুষ, যাঁরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম বর্ণমালার সঙ্গে পরিচয় করান এবং পড়াশুনোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এর পাশাপাশি, সত্যার্থী ছাত্র-ছাত্রীদের একসঙ্গে পাশাপাশি সারাজীবন পথ চলার জন্যও অনুপ্রাণিত করেন।


ইউজিসি এবং ন্যাক এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান পদ্মশ্রী ভিরেন্দর সিং চৌহান বলেন, আপনি যা করতে চাইছেন, অনেকের তা পছন্দ না-ও হতে পারে। অনেকে বলতে পারেন, এটা সম্ভব নয়, কেন এটা করবেন? কিন্তু অন্যের কথা শুনে নিজের সিদ্ধান্ত বদল করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ড.সমিত রায় বলেন, এই সমাবর্তন আয়োজন শুধুমাত্র পড়াশোনা সংক্রান্ত কৃতিত্বের উদযাপনই নয়, বরং শিক্ষা যে মানব জীবনে রূপান্তর ঘটাতেও সাহায্য করে, তারও প্রমাণ। নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী কৈলাশ সত্যার্থী ও অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিদের উপস্থিতি আমাদের এই অনুষ্ঠানকে আরও অর্থবহ করে তুলেছে। এর পাশাপাশি ২০২৩ সালের সফল শিক্ষার্থীদের অভিনন্দনও জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর সুরঞ্জন দাস পড়ুয়াদের মেধার বৃদ্ধি এবং তাঁদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাবের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকার ওপর জোর দেন।বিশিষ্ট সাইকোথেরাপিস্ট মিনু বুধিয়া বলেন, ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর অসমের তিনসুকিয়ার সেই ছোট শহরের মেয়ে থেকে আজকের আমি— জীবনে বহু ওঠানামার সাক্ষী থেকেছি। তবে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হয় যে চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি অনেকের আশীর্বাদও জুটেছে।মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজকর্ম করছেন মিনু। ‘কেয়ারিং মাইন্ডস’ নামে সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা-ডিরেক্টর মিনু ‘ক্যাফে আইক্যানফ্লাই’ বলেও একটি সংগঠন শুরু করেছেন। মানসিক স্বাস্থ্য ছাড়াও বিশেষ ভাবে সম্পন্নদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়াই তাঁর উদ্দেশ্য।


প্রখ্যাত পরিচালক গৌতম ঘোষ বলেন,শিক্ষাক্ষেত্রে অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয় এখন দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক স্তরেও একটি পরিচিত নাম।এখানকার পড়ুয়ারা দক্ষতার সঙ্গে দেশে ও দেশের বাইরে প্রতিষ্ঠিত।এই সমাবর্তন অনুষ্ঠান শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যার স্বীকৃতির জন্যই নয়, বরং পারিপার্শ্বিক জ্ঞান, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং বিশ্বে ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যে পড়ুয়াদের মূল্যবোধকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এক অনুপ্রেরণা হিসেবেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।

প্রসঙ্গত, ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।পূর্ব ভারতের অন্যতম সেরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়।বিজ্ঞানসম্মত তথা যুগোপযোগী শিক্ষালাভের ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে শুরু করে এমবিএ, বিজ্ঞান থেকে আইনি পড়াশোনা-সবই রয়েছে এখানে একই ছাতার তলায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা যা শুধুমাত্র শিক্ষাগত নয়, পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটাবে।প্রফেশনাল স্টাডিজ-সহ মোট ১০ টি আলাদা আলাদা বিভাগীয় স্কুল রয়েছে এখানে।খেলো ইন্ডিয়া্তেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের দক্ষতার ছাপ রেখেছেন।
শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বিকাশের পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও প্রস্তুত করা হয় এখানে। ডিপ্লোমা থেকে ডক্টরেট পর্যন্ত বিভিন্ন বিস্তৃত প্রোগ্রামের মিশেলে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম অন্যতম সেরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় সংযোজিত হয়েছে।
