‘কমলাসনে’ কমলনাথ! ‘এক্স’ থেকে কংগ্রেস পরিচয় মুছে দিল্লির পথে নকুলও

একথা সত্য যে রাজনীতিতে অসম্ভব বলে কিছু নেই। তাই বলে কমলনাথের বিজেপি যোগ? শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এই জল্পনাই এখন মধ্যপ্রদেশের আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছে। বিজেপি যোগের উদ্দেশ্যে শনিবার বিকেলেই দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। এই সবকিছুর মাঝেই নিজের এক্স হ্যান্ডেল থেকে কংগ্রেস পরিচয় মুছলেন কমলনাথের পুত্র নকুল নাথ। তিনিও পিতার সঙ্গে রওনা দিয়েছেন দিল্লির পথে।

মধ্যপ্রদেশের রাজনীতিতে কংগ্রেস ও কমলনাথ কার্যত একই নাম। তবে রাজ্য রাজনীতিতে লাগাতার ব্যর্থতায় কমলনাথের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল হাত শিবিরের অন্দরে। এহেন পরিস্থিতির মাঝেই শুক্রবারই মধ্যপ্রদেশ বিজেপির সভাপতি বিডি শর্মা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস ছেড়ে বেশ কয়েক জন নেতা তাঁদের দলে যোগ দিতে পারেন। তিনি বলেছিলেন, “বিজেপিতে কেউ আসতে চাইলে আমরা স্বাগত জানাব।” গত এক সপ্তাহে মধ্যপ্রদেশে দীনেশ আহিরওয়ার, রাকেশ কাটারের মতো প্রভাবশালী নেতার দল ছেড়েছেন। এহেন পরিস্থিতির মাঝেই কমলনাথের বিজেপি যোগের সম্ভাবনা জোরালো হয়ে উঠেছে। তাঁর বিজেপি যোগ লোকসভা ভোটের আগে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের কাছে বিরাট ধাক্কা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অবশ্য বিজেপি শিবিরের দাবি, কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করায় ‘নেতিবাচক প্রভাব’ পড়েছে মধ্যপ্রদেশে। তা আঁচ করেই ‘হাত’ ছাড়ার হিড়িক পড়েছে সে রাজ্যে।

অবশ্য বিজেপির এহেন ‘নেতিবাচক প্রভাবের’ তালিকায় কমলনাথের মতো নেতা আসতে পারেন না বলেই মনে করে ওয়াকিবহাল মহল। তাঁর দলত্যাগের সম্ভাবনা যদি ঘটে থাকে তবে তার পিছনে অন্য কারণ দেখছে রাজনৈতিক মহল। আসলে শেষ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে কংগ্রেস। ২৩০ আসনের মধ্যে ১৬৩ আসনে জিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয় পায় বিজেপি। কংগ্রেস পায় মাত্র ৬৬ আসন। এহেন চরম ব্যর্থতার পুরো দায় এসে পড়ে কমলনাথের ঘাড়ে। তার পরেই দলের অন্দরে কমলকে কোণঠাসা করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে কমলকে সরিয়ে বসানো হয়েছিল তাঁর ‘বিরোধী’ হিসাবে পরিচিত জিতু পাটোয়ারিকে। এমনকি, বিরোধী দলনেতার পদও তাঁকে দেয়নি কংগ্রেস হাইকমান্ড। এই ঘটনার পিছনে আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংয়ের হাত রয়েছে দাবি করে কমল শিবিরের সঙ্গে দিগ্বিজয় শিবিরের সংঘর্ষও হয়। অনুমান করা হচ্ছে এই টালমাটাল পরিস্থিতিতেই কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন কমলনাথ।

উল্লেখ্য, রাহুলের পিতামহী ইন্দিরা গান্ধীর আমলে ছিন্দওয়াড়ার সাংসদ হয়েছিলেন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের প্রাক্তনী কমল। ১৯৮০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় একটানা সাংসদ (মাঝে ১৯৯৬-’৯৮ পর্যন্ত সাংসদ ছিলেন না) কমল কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়েছেন একাধিক বার। একদা ‘সঞ্জয় গান্ধীর অনুগামী’ বলে পরিচিত হলেও পরবর্তী সময়ে গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে ঠাঁই পেয়েছেন। ২০১৮ সালে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসাবে দেড় দশক পরে ভোপালে ক্ষমতায় দলকে ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন কমল। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে মধ্যপ্রদেশের ২৯টি আসনের মধ্যে মাত্র একটিতে জিতেছিল কংগ্রেস। কমলের খাসতালুক ছিন্দওয়াড়ায় তাঁর পুত্র নকুল।