দেশের সেরা ডায়মন্ড হারবার লোকসভা, কাজের নিরিখে মোদি-শাহদের চ্যালেঞ্জ অভিষেকের

“গত ১০ বছরে ডায়মন্ড হারবারে যে কাজ হয়েছে দেশের কোনও লোকসভা কেন্দ্রে এত কাজ হয়নি। এমনকি দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীর কেন্দ্রেও না।” নিজের কাজের খতিয়ান তুলে ধরে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন, যদি কেউ দেখাতে পারেন তাঁর লোকসভা কেন্দ্রে এত কাজ হয়েছে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব।

ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে চড়িয়াল সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে সোমবার বজবজে উপস্থিত হয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে জনসভায় উপস্থিত হয়ে অভিষেক বলেন, “আজ এখানে আসার পথে মানুষের মধ্যে যে উৎসাহ উদ্দিপনা আমি লক্ষ্য করলাম তাতে আমি অভিভূত। এখানকার মানুষকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই। এটাই প্রমাণ করে যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে যত কুৎসা হবে তৃণমূল তত মানুষের সমর্থন ও ভালবাসা পাবে।” একইসঙ্গে চড়িয়াল ব্রিজ প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, “এখানকার মানুষের ৫ দশকের দাবি ছিল এই চড়িয়াল ব্রিজ। গত ৫৬ বছরে কোনও সাংসদ এই বিষয়টি নিয়ে কোনও উদ্যোগ নেয়নি। ৩৪ বছরের বাম শাসনেও এত বড় বড় নেতা এখানে এসেছে কিন্তু মানুষের সমস্যা নিয়ে তাঁদের কোনও মাথাব্যাথা ছিল না। ২০১৪ সালে এখানে আসার পর অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি এই চড়িয়াল ব্রিজ ছিল আমার কাছে চ্যালেঞ্জ। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে এই ব্রিজের কাজ শুরু হয়। ১০ মার্চ ২০২৩ সালে প্রথম লেনটি উদ্বোধন করি। বলেছিলাম আর একবছরের মধ্যে বাকি কাজ সম্পূর্ণ হবে। ৫৬ কোটি টাকা ব্যায়ে এখানকার মানুষের ৫ দশকের দাবি অবশেষে পূরণ হল।” একইসঙ্গে অভিষেক স্মরণ করিয়ে দেন আজ ১৯ ফেব্রুয়ারি এই দিনে স্বামী বিবেকানন্দ এই বজবজে পা রেখেছিলেন। আজ এই শুভদিনেই উদ্বোধন হল ব্রিজের। এর জেরে এখানকার ৫ থেকে ৬ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবেন”।

একইসঙ্গে কাজের খতিয়ান তুলে ধরে অভিষেক বলেন, “আমরা বলেছিলাম এখানে বয়স্কদের বার্ধক্যভাতা দেওয়া হবে। সেইমতো ৭০ হাজার মানুষকে আমাদের তরফ থেকে বার্ধক্যভাতা দেওয়া হচ্ছে। ৫ লক্ষ ৮০ হাজার মহিলার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করা হয়েছে, তপসিলি জাতি ও উপজাতিদের ১০০০ টাকার পরিবর্তে ১২০০ টাকা করা হয়েছে। কেন্দ্র ২ বছর ধরে মানুষের ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে। বারবার আবেদন সত্ত্বেও ওরা টাকা দেয়নি। কারণ ওরা বাংলায় হেরেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছিল, ২০২২ সালের মধ্যে সকলের মাথার উপর পাকা ছাদ করবে। বাংলার ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার প্রকৃত প্রাপক তাঁদের বাড়ির টাকা ওরা আটকে রেখেছে। পঞ্চায়েতে বলেছিলাম, উন্নয়নকে সামনে রেখে ভোট দিন কারও ক্ষমতা নেই আপনার টাকা আটকে রাখবে। আপনারা ভোট দিয়েছেন। ওরা পারেনি উন্নয়নকে আটকাতে। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, আমরা আর দিল্লির দিকে তাকিয়া থাকব না। যাদের ১০০ দিনের টাকা বকেয়া সেই ২৫ লক্ষ শ্রমিকের টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেবেন। আপনারা নিশ্চিত থাকুন সরকার কথা দিয়ে কথা রাখে। আগামী ১ তারিখে আপনাদের টাকা আপনারা পেয়ে যাবেন।”

আগামী ৬ দিন পর আবার আসব মহেশতলায় এখানে ৩৩০ কোটি টাকার জলের প্রকল্পের কাজ চলছে এটা চালু হলে প্রচুর মানুষ উপকৃত হবেন। এবং তাঁর সঙ্গে ৫০ কোটি টাকা খরচে এমজি রোড ঠিক হচ্ছে। উড়ালপুলের নিচের এই রাস্তার দাবি ন্যায্য। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি এগুলি উদ্বোধন করতে আসছি আমি। গত ১০ বছরে ৫ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার কাজ করেছি এই ডায়মন্ড হারবারে। অর্থাৎ বছরে ৫৫৮ কোটি টাকার কাজ মাসে ৪৬ কোটি টাকার কাজ, প্রতিদিন ১ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকার কাজ হয়েছে অর্থাৎ ঘন্টায় ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার কাজ হয়েছে। এটি ডায়মন্ড হারবার মডেল। ভারতবর্ষে যদি কেউ করে দেখাতে পারে, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীর লোকসভা কেন্দ্রে যদি ডায়মন্ড হারবারের মতো এত পরিমাণ কাজ হয়ে থাকে, আমি চ্যালেঞ্জ করছি আমি রাজনীতির আঙ্গিনায় পা রাখব না।” পাশাপাশি কেন্দ্রকে তোপ দেগে অভিষেক বলেন, “দিদি লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের নামে ১২০০ টাকা দিচ্ছে আর মোদি সরকার আধার প্যান লিঙ্কের নামে ১০০০ টাকা নিয়ে যাচ্ছে। আজ দ্রব্যমূল্য কোথায় পৌঁছে গিয়েছে। এদের জমিদারি আমরা শেষ করব। শুধু আপনারা পাশে থাকুন। আপনারা রোজ এজেন্সি দিয়ে রেইড করুন কিন্তু মানুষের টাকা আপনাদের ছাড়তে হবে।”

Previous articleনজরে লোকসভা, জেলাসফরে এবার জঙ্গলমহলে মুখ্যমন্ত্রী
Next articleকেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠকের আবহেই বাড়ছে কৃষক মৃত্যু, ৭২ ঘণ্টায় মৃত ২