টেকনো ইন্ডিয়ার উদ্যোগে বসন্ত সন্ধ্যায় নানা ভাষায় গীতাঞ্জলির ছন্দ! জমজমাট রবীন্দ্রসদন 

কথায় কবিতায় রাত বাড়ল কিন্তু গীতাঞ্জলির আকর্ষণ এতটাই অমোঘ যে ঘড়ির কাঁটাও যেন থমকে গেল রবীন্দ্রসদন প্রেক্ষাগৃহে।

বাঙালির প্রাণের পুরুষ রবি ঠাকুরকে ছাড়া জীবনের কোনও গল্পই সম্পূর্ণ নয়। তাই মাঘের সন্ধ্যায় বৃষ্টিভেজা শহরে গীতাঞ্জলির গল্প যেন বড় বেশি নস্টালজিক করে তুলল রবীন্দ্র অনুরাগীদের। বিশ্বকবির সৃষ্টিতে বিদেশী ভাষার অংশগ্রহণ যেন সাংস্কৃতিক মুগ্ধতার সীমা ছাড়ালো। শনিবারের সান্ধ্য মেজাজে টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ (Techno India Group) ও আজকাল (Aajkal) আয়োজিত ‘গীতাঞ্জলি ইন্ডিয়ান’ (Geetanjali Indian) অনুষ্ঠিত হল রবীন্দ্র সদনে। শুরুতেই শিল্পীরা সমবেতভাবে গেয়ে ওঠেন ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’। গলা মেলালেন উপস্থিত দর্শক-শ্রোতারাও। সকলকে স্বাগত জানান টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের কর্ণধার তথা SNU এর আচার্য সত্যম রায়চৌধুরী (Satyam Roy Chowdhury), রবি ছবির সামনে থাকা প্রদীপ প্রজ্বলন করেন রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন (Indranil Sen)। ছিলেন সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্ত (Prochet Gupta)। স্বাগত ভাষণে সত্যম জানান, ২০১৩তে গীতাঞ্জলির (Geetanjali) শতবর্ষে তাদের এই ভিন্ন ভাবনার পথ চলা শুরু। দেখতে দেখতে ১১ বছর কাটিয়ে পদার্পণ করল এই অনুষ্ঠান। নানা ভাষার রবীন্দ্রচর্চার মানুষদের নিয়ে এই সাংস্কৃতিক উদ্যোগ। ১৯ মার্চ ১৯১১-তে রবিঠাকুরের ইংল্যান্ড যাত্রার কথাই শুরুতে বলেন সত্যম। আর সেই সুর ধরেই মঞ্চে উপস্থাপিত হয় সঙ্গীত-নৃত্যের গল্পগুচ্ছ ‘নানা ভাষায় রবীন্দ্রনাথ’।

গীতাঞ্জলির গল্পে চাইনিজ, ইটালিয়ান, ফরাসি ও স্প্যানিশ ভাষায় রবীন্দ্র গীতি অনুষ্ঠানকে এক আলাদা মাত্রায় পৌঁছে দেয়। বিভিন্ন ভারতীয় আঞ্চলিক ও বিদেশী ভাষায় ৫০ জন শিল্পীকে গান গাইতে দেখা যায়। মঞ্চে কখনও দেবাশিস কুমার (Debasish Kumar) ও দেবযানী কুমার উপস্থপিত করলেন রবীন্দ্র কবিতা, আবার কখনও বিশ্বকবির গানে অনবদ্য স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত (Swagatalaxmi Dasgupta)।

কিন্তু চমক দিলেন টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের (Techno India Group) কর্ণধার স্বয়ং। কন্ঠে-কবিতায় সাবলীল ভাবেই রবীন্দ্রনাথের ভূমিকায় অবতীর্ণ সত্যম।

ফরাসি ভাষায় ভাষ্যপাঠের পর বাংলায়’ আলো আমার আলো’ শোনালেন শর্মিলা রায় (Sharmila Roy)। তাঁর দুই বন্ধু আইলেড ও ওফার হিব্রুতে রবীন্দ্র কথোপকথন শোনালেন। শিল্পী তথাগত সেনগুপ্তের (Tathagata Sengupta) কণ্ঠে ‘ তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা’ যেন এক মোহময়ী পরিবেশ তৈরি করল প্রেক্ষাগৃহ প্রাঙ্গণে। বিধায়ক অদিতি মুন্সি (Aditi Munsi) জানান রবীন্দ্রসদনে বিশ্বকবির গান গাওয়া সত্যিই সম্মানের। এদিন ছোটবেলায় শেখা প্রথম রবীন্দ্র সঙ্গীত ‘নিশিদিন ভরসা রাখিস’ পরিবেশন করেন তিনি। উপস্থিত ছিলেন কমলিনী মুখোপাধ্যায়, হৈমন্তী শুক্লা (Haimanti Shukla), মনোময় ভট্টাচার্য, অগ্নিভ বন্দোপাধ্যায়, অরিত্র দাশগুপ্ত সহ একঝাঁক তারকা। গুণী শিল্পীদের হাতে তাঁর নিজের সংকলিত ‘গীতাঞ্জলি ইন্ডিয়ান’ বইটি তুলে দেন টেকনো ইন্ডিয়ার কর্ণধার। অনুষ্ঠানে ছিলেন সত্যম পত্নী মৌ রায়চৌধুরীও।

গীতাঞ্জলির গল্পে, বিদেশযাত্রার সময় কবিগুরুর অসুস্থতা থেকে শিলাইদহের স্মৃতি সবটাই পাঠের মাধ্যমে তুলে ধরলেন সত্যম রায়চৌধুরী। কবির অলস্যের ব্যস্ততাকে কবিতায় ফুটিয়ে তুললেন তিনি। কথায় কবিতায় রাত বাড়ল কিন্তু গীতাঞ্জলির আকর্ষণ এতটাই অমোঘ যে ঘড়ির কাঁটাও যেন থমকে গেল রবীন্দ্রসদন প্রেক্ষাগৃহে। একরাশ ভালো লাগা নিয়ে শেষ হলো অনুষ্ঠান।

Previous articleওড়িশার কাছে গোলশূন্য ড্র করল মোহনবাগান
Next articleরাঁচিতে খেলতে নেমে নজির গড়লেন যশস্বী