লকেট-জগন্নাথ-সুভাষদের পর প্রিয়া, প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে বিজেপির অন্দরে!

শিয়রে লোকসভা ভোট। তার আগেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের অন্দরে প্রার্থী নিয়ে বাড়ছে ক্ষোভ। পড়ছে বিরুদ্ধে পোস্টার। হুগলি, রানাঘাট, বাঁকুড়ার পর এবার বোলপুর। যা নিয়ে চরম অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির। ভোটের আগে সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিজেপি নেতৃত্ব।

লোকসভা নির্বাচনে দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার আগেই এবার রাজ্যের ২০ আসনের প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে বিজেপি। বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী করেছে প্রিয়া সাহাকে। কিন্তু তাঁকে মেনে নিতে পারছেন না এই কেন্দ্রের বিজেপি নেতাকর্মীরা। তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর বীরভূমের কীর্নাহারের চৌরাস্তা, রেলগেট সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকাতে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী প্রিয়া সাহা বিরুদ্ধে পোস্টার। পোস্টারে লেখা, ‛প্রিয়া সাহা দূর হাটো’, ‘বিজেপি প্রার্থী প্রিয়া সাহাকে মানছি না মানব না’, ‘বিজেপি প্রিয়া সাহা অযোগ্য’, ‘তুমি দূর হটো’। এই রকম পোস্ট পড়ল কীর্নাহারের বিভিন্ন জায়গায়।

তবে শুধু বোলপুরের প্রার্থী প্রিয়া সাহা নয়, এর আগে
রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তথা বর্তমান সাংসদ জগন্নাথ সরকারের নামেও পোস্টার পড়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টি নদিয়া দক্ষিণ, এই নামে পোস্টার লাগানো হল নদিয়ার কালীনারায়নপুরে। বিজেপির প্রার্থী ঘোষণা হতেই দলের একাংশে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল। সেই ক্ষোভেই পোস্টার পড়েছে বলে দাবি দলেরই একংশের। জগন্নাথবাবুর সভাতেও তেমন ভিড় হচ্ছে না বলে দাবি।

হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, বাঁকুড়ার সাংসদ ডাঃ সুভাষ সরকার ও বিষ্ণুপুরের সৌমিত্র খাঁ-কে নিয়েও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে দলের অন্দরে। এই তিন সাংসদকে আসন্ন নির্বাচনে যাতে টিকিট না দেওয়া হয় তার জন্য জেলায় দফায় দফায় দেখা গিয়েছিল বিক্ষোভ। তবে ক্ষোভ, বিক্ষোভকে ফুৎকারে উড়িয়ে পুনরায় নিজ নিজ কেন্দ্রে টিকিট পেলেন এই ৩ সাংসদ।

লকেট চট্টোপাধ্যায়কে ‘বহিরাগত’, ‘পরিযায়ী’ বলে অভিযোগ করে সম্প্রতি হুগলির একাধিক জায়গায় পোস্টার দিতে দেখা যায় স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বকে। শ্রীরামপুর, বৈদ্যবাটি-সহ হুগলির একাধিক জায়গায় পোস্টারে লেখা হয়, ‘তৃণমূলকে হারাতে শ্রীরামপুরের ভূমিপুত্র চাই। কোনও বহিরাগতকে চাপিয়ে দেওয়া চলবে না।’ এমনকী লকেটের পরিবর্তে একাধিক নামে দেওয়াল লিখনও দেখা যায় এই কেন্দ্রে। তবে শনিবার বিজেপির তরফে যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হল, সেখানে দেখা গেল লকেট চট্টোপাধ্যায়কে।

সুভাষ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগুন দীর্ঘদিন ধরেই জ্বলছে বাঁকুড়া কেন্দ্রে। নতুনগঞ্জে দলের জেলা কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ডাঃ সুভাষ সরকারকে আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন বিজেপি থেকে ‘বহিষ্কৃত’দের একাংশ। প্রধানমন্ত্রীর বঙ্গ সফরের দিনেও মাচানতলায় ডাঃ সুভাষ সরকারের ছবিতে কালি লাগিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি নেতা কর্মীরা। একইসঙ্গে দলীয় পতাকা হাতে বিজেপি কর্মীদের স্লোগান দিতে দেখা যায়, ‘তৃণমূলের দালাল সুভাষ সরকার দূর হটো’ বলে।

একই অবস্থা দেখা গিয়েছিল বিষ্ণুপুরের সৌমিত্র খাঁ-র ক্ষেত্রেও। বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে সৌমিত্রের বিরুদ্ধে সম্প্রতি ক্ষোভে ফেটে পড়তে দেখা যায় জেলা কর্মী, সমর্থকদের। এলাকায় পোস্টার পড়ে – যখন বিজেপি কর্মীদের ওপর অত্যাচার হয়, তখন এলাকা ছেড়ে সৌমিত্র পালান।

আবার আসানসোল কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী তথা ভোজপুরি সুপারস্টার নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন এই কেন্দ্রে তিনি প্রার্থী হতে চান না। সবমিলিয়ে লোকসভা ভোটের আগে প্রার্থী ঘরে বাইরে চাপের মুখে বিজেপি।

আরও পড়ুন – খেলা জমিয়ে দিয়েছে দেবাংশু! হাওয়া বুঝতে আজ শুভেন্দুর সঙ্গে তমলুকে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়