গার্ডেনরিচকাণ্ডে প্রোমোটার ও অন্য জড়িতদের বিরুদ্ধে সুয়ো মোটো মামলা দায়ের করল কলকাতা পুলিশ। কলকাতা পুরসভার তরফ থেকে শো-কজ করা হয়েছে তিন ইঞ্জিনিয়ারকে। এ কথা জানিয়েছেন খোদ মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ওই এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ১৫ নম্বর বরো এলাকার অন্তর্গত।মেয়র জানিয়েছেন, ওই বরোর এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ও সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে শো-কজ করা হয়েছে।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অবস্থান জানাতে বলা হয়েছে তাঁদের। সময়ের মধ্যে তাঁরা যদি সন্তোষজনক উত্তর দিতে না পারেন, তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবে পুরসভা।কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, কোন ওয়ার্ডে কত বেআইনি বাড়ি আছে, তা চিহ্নিত করা তাঁদের দায়িত্ব ছিল। সেই কাজে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন। দায়িত্ব পালন করেননি।

লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় প্রোমোটার-সহ অন্য জড়িতদের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে খুন, খুনের চেষ্টা-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করবেন ডিডি হোমিসাইড।

এরই পাশাপাশি, বেআইনি বহুতল ভেঙে গার্ডেনরিচে এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ৯। ধ্বংসস্তূপের নীচে এখনও ৪-৫জন আটকে রয়েছেন বলে আশঙ্কা করছেন উদ্ধারকারীরা।ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করার পর মহম্মদ ইমরান নামে এক যুবককেও সন্ধ্যায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এসএসকেএম-এ। তাঁকে পরীক্ষা করে দেখছেন চিকিৎসকেরা।নার্সিংহোম থেকে ২ জনকে নিয়ে আসা হয়েছে ট্রমা কেয়ার সেন্টারে।

উদ্ধারকাজ যথেষ্টই সময়সাপেক্ষ, এমনটাই জানাচ্ছেন উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা। কংক্রিটের ধ্বংসস্তূপের ছোট ছোট করে কেটে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে উদ্ধারকাজ।এরই সঙ্গে যোগ হয়েছে ঘিঞ্জি এলাকা।রাস্তা এতটাই সরু যে দমকলের গাড়িও ঢোকার সুযোগ নেই। এই পরিস্থিতিতে গার্ডেনরিচের ঘটনাস্থলে জারি উদ্ধারকার্য।এলাকায় কেউ নিখোঁজ রয়েছেন কি না, সেই বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে ৪-৫ জনের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।১১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রঞ্জিত শীল বলেন, বেআইনি নির্মাণ নিয়ে আমরা বরাবরই সরব। তবুও মানুষ সচেতন হননি।পুরসভা আরও কড়া হলে বেআইনি নির্মাণের প্রবণতা কমবে। যে বাড়িটি ভেঙেছে, সেটিও বেআইনিভাবে তৈরি করা হচ্ছিল।ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় উদ্ধারকাজে সমস্যা হচ্ছে।

এই ঘটনার খবর পাওয়ার পর সোমবার সকালে শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও ওই এলাকায় যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রোমোটাররা নিশ্চয় ভাববেন, আশেপাশে যে গরীব মানুষগুলো আছে, তাদের যেন ক্ষতি না হয়, বাড়ি যাতে মজবুত হয়, সেদিকে নজর রাখা উচিত।এদিকে ইতমধ্যেই ঘটনায় মৃতদের পরিবার ও আহতদের আর্থিক সহযোগিতার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যাঁরা মারা গিয়েছেন তাঁদের পরিবার পিছু ৫ লাখ টাকা এবং আহতদের পরিবার পিছু ১ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। একইসঙ্গে যে নির্মীয়মান বহুতলটি ভেঙে পড়েছে, সেটি ‘অবৈধ’ বলেও জানিয়েছেন মেয়র।
