বিবাহিত সম্পর্কের বাইরে স্বেচ্ছায় যৌন সম্পর্ক শাস্তিযোগ্য নয়: রাজস্থান হাই কোর্ট

তাঁর বক্তব্য, সামাজিক নৈতিকতার উপরে এক্ষেত্রে সাংবিধানিক নৈতিকতাকে স্থান দেওয়া উচিত।

বিবাহিত সম্পর্কের বাইরে দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক স্বেচ্ছায় যৌন সম্পর্কে জড়ালে তাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলা চলে না। সম্প্রতি রাজস্থান হাইকোর্টের এই রায়ে নতুন করে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। এর আগে ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক অপরাধ নয়। রাজস্থান হাই কোর্টের বিচারপতি বীরেন্দ্র কুমার ওই নির্দেশ দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমাদের সমাজে বিবাহিত দম্পতির মধ্যে যৌন সম্পর্ককেই স্বীকৃতি দেওয়া হয় এটা সত্যি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে বিবাহ সম্পর্কের বাইরে কোনও যৌনতায় জড়িয়ে পড়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’ তাঁর বক্তব্য, সামাজিক নৈতিকতার উপরে এক্ষেত্রে সাংবিধানিক নৈতিকতাকে স্থান দেওয়া উচিত।

স্বামী বলছেন, তাঁর স্ত্রীকে তুলে নিয়ে গিয়েছেন তিনজন ব্যক্তি। আর স্ত্রী দাবি করছেন, তাঁকে কেউ ফুঁসলিয়ে নিয়ে যায়নি, তিন অভিযুক্তের মধ্যে একজনের সঙ্গে লিভ-ইন সম্পর্কে ছিলেন। এই ইস্যুতেই মামলা চলছিল রাজস্থান হাই কোর্টে। সেই মামলায় আদালতের পর্যবেক্ষণ, বিবাহ-বহির্ভূত হলেও যদি দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন, তাহলে তা আইনের চোখে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।বিচারপতি বীরেন্দ্র কুমার জানিয়েছেন, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই ধরনের সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে ২০১৮ সালে বার বেঞ্চ এই ক্ষেত্রে অপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়াকে অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করেছে।

যে ব্যক্তি এই মামলায় আবেদন করেছিলেন, তিনি বর্তমানে জেলে রয়েছেন অন্য একটি মামলায়। ফলে আদালতে হাজিরা দিতে পারেননি তিনি। তাঁর পক্ষে আইনজীবী অঙ্কিত খান্ডেলওয়াল আদালতে জানান, আবেদনকারী স্বীকার করে নিয়েছেন যে তাঁর স্ত্রী বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর দাবি ছিল, সামাজিক নীতিকে রক্ষা করা আদালতের দায়িত্ব তবে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেওয়া নয়।তবে, সব পক্ষের সওয়াল-জবাবের পর আদালত উল্লেখ করেছে, দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক যদি নিজেদের ইচ্ছেয় এই রকম সম্পর্কে থাকতে চায়, তাহলে তাকে অপরাধ বলা যাবে না।

তাঁর আইনজীবী সওয়াল করেন যে লিভ-ইন রিলেশনশিপের বিষয়টি যেহেতু স্বীকার করে নিয়েছেন মহিলা, তাই তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৪ নম্বর ধারা (স্বামী বা স্ত্রী বেঁচে থাকার সময় ফের বিয়ে করা) এবং ৪৯৭ নম্বর ধারায় (পরকীয়া) মামলা রুজু করা হোক। নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে হাইকোর্টকে সামাজিক নৈতিকতা রক্ষা করার আর্জি জানান ওই ব্যক্তির আইনজীবী। নিজের সওয়ালের স্বপক্ষে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের একটি রায়ের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন।

যদিও সেই যুক্তি বা উদাহরণ ধোপে টেকেনি হাইকোর্টে। বিচারপতি বীরেন্দ্র কুমার জানিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিষয়টি পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের সামনে পেশ করা হয়নি। শীর্ষ আদালতের রায় উল্লেখ করে রাজস্থান হাইকোর্ট স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় যে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ নম্বর ধারায় মামলা রুজু করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। আর ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৪ নম্বর ধারা চাপানোর কোনও বিষয়ই নেই, কারণ মহিলা বিয়ে করেননি।






 

 

Previous articleওড়িশায় ত্রিমুখী লড়াই, লোসকভার সঙ্গেই বাড়ছে বিধানসভা ভোটের উত্তাপ
Next articleডাক বিভাগের অভিযোগ শোনার উদ্যোগ, বসছে ‘ডাক আদালত’