দিনের আলোয় গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে, দায়ী নির্বাচন কমিশন: বিস্ফোরক অভিষেক

তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের হেনস্থার প্রতিবাদে গর্জে উঠলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার রাত নটা নাগাদ তৃণমূলের প্রতিনিধি দল নিয়ে রাজভবনে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করার পরে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন অভিষেক। বলেন, দিল্লির ঘটনা গণতন্ত্রের দিনের আলোয় হত্যা। আর এই পিছনে দায়ী নির্বাচন কমিশন। কারণ লোকসভা নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পরে আইনশৃঙ্খলা নির্বাচন কমিশনের অধীন। তৃণমূলের প্রতিনিধিরা জলপাইগুড়ির প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষতিগ্রস্তদের মাথার উপর ছাদ করে দেওয়ার অনুমতির দাবিতে দিল্লিতে গিয়েছিলেন। একইসঙ্গে NIA-এর ডিরেক্টর এবং এসপিকে বদলেরও দাবি জানানো হয়। এই দাবিতে সাংসদ-সহ তৃণমূলের প্রতিনিধিরা শান্তিপূর্ণ অবস্থানে ছিলেন। সেখান থেকে তাঁদের টেনে হিঁচড়ে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। এই ঘটনায় ধিক্কার জানিয়ে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ দাবি করেন অভিষেক। তিনি জানান, সব বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে শুনেছেন আনন্দ বোস। তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। মঙ্গলবার সন্ধেয় আবার রাজভবনে যাবেন বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাজ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন বিজেপি নেতাদের প্ররোচনায় কেন্দ্রীয় এজেন্সির অতি সক্রিয়তা, NIA-এর ডিজি এবং এসপিকে বদলের দাবি, সর্বোপরি উত্তরবঙ্গে বিধ্বংসী মিনি টর্নেডো সর্বহারা মানুষদের বাড়ি তৈরির অনুমতি চাইতে সোমবার নির্বাচন কমিশনে যান তৃণমূলের দশ সদস্যের প্রতিনিধিদল। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোনও সদুত্তর না পেয়ে নির্বাচন কমিশনের ভবনের বাইরে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে বসেন তৃণমূলের পাঁচ সাংসদ-সহ প্রতিনিধিরা। আচমকাই সেখানে দিল্লি পুলিশ এসে তৃণমূলের প্রতিবাদ বন্ধ করার চেষ্টা করে। জোর করে তৃণমূল নেতৃত্বকে চ্যাংদোলা করে তোলা হয় প্রিজন ভ্যানে। পায়ে আঘাত লাগা সাংসদ দোলা সেনকেও রেয়াত করেনি পুলিশ। এর আগেও কেন্দ্রের থেকে প্রাপ্য টাকা আদায়ের দাবিতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যখন দিল্লিতে রাজ্যের দাবি পেশ করতে গিয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব, তখনও একই ভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পুলিশের হাতে হেনস্থা হতে হয়েছিল। সোমবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে গর্জে ওঠেন অভিষেক। জানিয়ে দেন আজ রাতেই রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার সময় চাওয়া হয়েছে। রাজভবন থেকে সময় দিলে রাত নটা নাগাদ সাংসদ সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মালা রায়, মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, ব্রাত্য বসু, অরূপ রায়, শশী পাঁজা, তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ, অসীমা পাত্রকে নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে যান অভিষেক।

আরও পড়ুন- তৈরি সংসদ! রাজ্যের সবুজ সংকেত মিললেই প্রকাশ হবে উচ্চমাধ্যমিকের ফল, জানালেন সংসদ সভাপতি

তাই এক ঘণ্টার বেশি সময় রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে, দিল্লিতে প্রতিনিধি দলের উপর হামলার ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তার কথায়, NIA-এর ডিরেক্টর, এসপি-কে বদলের দাবি জানানো হয়েছিল ঠিকই কিন্তু তার থেকেও বেশি ছিল জলপাইগুড়িতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি করার অনুমতির দাবি। গরিব মানুষ বাড়ি পাক- এই দাবি করেছিলেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। এটাই কি তাদের অপরাধ? সেই কারণেই তাঁদের ওইভাবে টেনে হিঁচড়ে প্রিজেন ভ্যানে তোলা হলো!

এরপরেই বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির সঙ্গে এনআইএ-র এসপি ধনরাম সিং-এর সাক্ষাৎ নিয়ে তীব্র আক্রমণ করেন অভিষেক। তিনি বলেন, দেখা কেউ করতেই পারেন? কিন্তু সেটা বাড়িতে কেন? অভিষেকের দাবি, এনআইয়ের এসপির বাড়িতে ঢোকার ভিজিটার্স বুকে বিজেপি নেতার যাওয়ার প্রমাণ আছে। তৃণমূলের কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে। এরপরেই অভিষেক প্রশ্ন তোলেন, বাংলায় যদি নির্বাচন ঘোষণার পরে দুবার ডিজি বদল হতে পারে, তাহলে NIA-এর ডিরেক্টর, এসপিকে কেন বদল করা হবে না?

এরপর বিস্ফোরক অভিযোগ করে অভিষেক বলেন, বিজেপির তল্পিবাহক হিসেবে কাজ করছে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি। কেন তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নেবে না? তৃণমূলে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সাফ জানান, আমাদের অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে নয়। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। কারণ এখন আইনশৃঙ্খলা দেখার দায়িত্ব তাদের। অভিষেকের কথায়, ২০২১-এ যে পরিণতি হয়েছিল, এবারের লোকসভা ভোটে তার থেকেও খারাপ পরিণতি বিজেপির হবে।

অভিষেক প্রশ্ন তোলেন, তাঁরা যদি মিথ্যে বলে থাকেন, তাহলে জিতেন্দ্র তিওয়ারি তাঁর বা কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে এখনও কেন কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি? তীব্র কটাক্ষ করে তৃণমূল সাংসদ বলেন, এখনও তো দুটো আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি, একটা এনআইএ-র ডিরেক্টরকে পাঠাক, একটা ইডির ডিরেক্টরকে পাঠাক।

সরাসরি নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে তোপ দাগেন অভিষেক। বলেন, “আপনি যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়েন তাহলে মহারাষ্ট্রে কীকরে অজিত পাওয়ার আপনাদের সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী হন? কেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা? শুভেন্দু অধিকারী, নারায়ণ রানে সবার বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্ত যাঁরা বিজেপিতে গিয়েছে আগে তাঁদের গ্রেফতার করুন। আপনি মানুষকে বোকা ভাবছেন? আপনি ভাবছেন, নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনকে হাতের পুতুলের মত নাচাবো। ইলেকশন কমিশন এতদিন নির্ভীকভাবে কাজ করেছে, তারা আজকে নিজেদের মেরুদণ্ড বিজেপির কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।”

অভিষেক জানান তারা রাজ্যপালের কাছে বলেছেন, “আদর্শ আচরণ বিধি জারি হওয়ার পরে কেন দু বছরের পুরনো মামলায় আমাদের নেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে? আমরা অনুরোধ করেছি যা দিল্লির বুকে হয়েছে সেটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আজকের দিনের আলোয় গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের অফিসের বাইরে থেকে যেভাবে এ কাজ হয়েছে সেটা নির্বাচন কমিশনের অঙ্গুলি হেলনের ছাড়া হতে পারে না। যেভাবে সাংসদদের অসম্মান করেছে, হেনস্থা করেছে। টেনে হিঁচড়ে ভ্যানে তুলেছে। সেটা গণতন্ত্রের জন্য কালো দিন। আপনি সংবিধানের ধারক ও বাহক রাজ্যের। আপনি গণতন্ত্রের রক্ষাকর্তা হিসেবে দাবি করেন। আমরা সবাই চাই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হোক। আপনাকে আজকেই এটা নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। আগামিকাল আবার আমরা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করব।”

রাজ্যপাল কথা দিয়েছেন মঙ্গলবারই বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করবেন। সন্ধেয় আবার রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানিয়েছেন অভিষেক। একই সঙ্গে মঙ্গলবার দিল্লিতে চব্বিশ ঘণ্টা ধর্না অবস্থানে বসবেন তৃণমূল সাংসদরা- জানিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।