Monday, November 10, 2025

জার্মানিকে শিক্ষা দিতে ২০ হাজার হাতি ‘উপহার’ দিতে চায় বৎসোয়ানা! চাপানউতোর তুঙ্গে

Date:

গত কয়েক দিন ধরে বৎসোয়ানা এবং জার্মানির মধ্যে হাতি নিয়ে বিরোধ চরমে উঠেছে। এই বিরোধ কিন্তু দু’দেশের মধ্যে নতুন নয়।নতুন করে বিরোধের সূত্রপাত বৎসোয়ানার প্রেসিডেন্ট মোকগোয়েতসি মাসিসির এক হুমকিকে কেন্দ্র করে। তিনি সম্প্রতি জানিয়েছেন, জার্মানিকে বৎসোয়ানা ২০ হাজার হাতি ‘উপহার’ দিতে চায়! তিনি উপহারের কথা বললেও তাঁর কথার নেপথ্যে রয়েছে রাজনৈতিক বিরোধ। আসলে
হাতি শিকার নিয়ে জার্মানি নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর থেকেই বিরোধ শুরু হয় দু’দেশের মধ্যে। বৎসোয়ানা থেকে ‘হান্টিং ট্রফি’ আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বার্লিন। যা শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করে মাসিসি সরকার। বিশ্বের মোট হাতির এক-তৃতীয়াংশের বাস বৎসোয়ানায়। সংখ্যার হিসাবে যা ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি। হাতির পাল প্রায় সময় লোকালয়ে ঢুকে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি করে, কৃষকদের ফসল খেয়ে ফেলে। এমনকি অনেক সময় হাতির পায়ের নিচে পড়ে মানুষও মারা যায়। এসব কারণে দেশটিতে ট্রফি হান্টিং বেশি হয়।

নিশ্চয়ই ভাবছেন ‘হান্টিং ট্রফি’ কী? কোনও বন্যপ্রাণীকে গুলি করে বা অন্য উপায়ে হত্যা করার পর সেই সব পশুর মাথা, চামড়াকে ‘ট্রফি’ বানিয়ে অনেকেই নিজের বাড়িতে সাজিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। ‘হান্টিং ট্রফি’ হিসাবে হাতির মাথা এবং চামড়া বৎসোয়ানা থেকে আমদানি করত জার্মানি। পশু শিকারও চলত আফ্রিকার দেশটিতেই। কিন্তু সম্প্রতি সেই আমদানির উপরই নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে বার্লিন।
বৎসোয়ানার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বৎসোয়ানায় হাতির সংখ্যা অনেক বাড়িয়ে গিয়েছে। এ বার জার্মানির হাতির সঙ্গে বসবাস করার অভিজ্ঞতা পাওয়া উচিত। তিনি আরও বলেছেন, আমাদের দেশে হাতির সংখ্যা যে ভাবে বেড়ে চলেছে তা প্রতিরোধ করার একমাত্র উপায় শিকার। এ ভাবে হান্টিং ট্রফি আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে জার্মানি চাইছে আমাদের দেশের মানুষকে দরিদ্র করে দিতে। শুধু তা-ই নয়, হাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের মানুষ নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। হাতিরা সম্পত্তির ক্ষতি করছে, ক্ষেতে ঢুকে তাণ্ডব চালাচ্ছে।

বৎসোয়ানার প্রেসিডেন্ট জানান, তাঁরা জার্মানিকে ২০ হাজার হাতি ‘উপহার’ দিতে চান। তিনি চান, জার্মানরাও হাতির সঙ্গে বসবাস করার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করুক।২০১৪ সালে বৎসোয়ানাই ‘হান্টিং ট্রফি’ নিজেদের দেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। যদিও স্থানীয় সম্প্রদায়ের লাগাতার আন্দোলন এবং চাপের কারণে বাধ্য হয়ে ২০১৯ সালে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় বৎসোয়ানা সরকার।এখন গোটা দেশে নির্দিষ্ট সংখ্যক শিকারের অনুমতি দেওয়া রয়েছে। প্রতিটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে শিকারের জন্য লাইসেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে। লাইসেন্স প্রাপকরাই শুধুমাত্র শিকার করতে পারবেন। তবে অবশ্যই সরকারের বেঁধে দেওয়া সংখ্যা পার করতে পারবেন না।

বৎসোয়ানায় ইতিমধ্যেই হাতির সংখ্যা ১ লক্ষ ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। এত হাতি নিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছে সে দেশের সরকার। জার্মানি নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর হাতির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ মোকাবিলায়, বাধ্য হয়ে অন্য রাস্তা খুঁজছে মাসিসি সরকার। তারা প্রতিবেশী দেশ অ্যাঙ্গোলায় আট হাজার এবং মোজাম্বিকে ৫০০ হাতি পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে।মাসিসি ‘উপহার’ পাঠানোর কথা বললেও জার্মানি এই নিয়ে চিন্তিত নয় বলেই জানান বার্লিনের পরিবেশ মন্ত্রকের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক। তিনি জানান, এখনই এই নিয়ে চিন্তা করতে নারাজ তাঁর দেশের সরকার।শুধু বৎসোয়ানা নয়। পশু হত্যা বন্ধ এবং সংরক্ষণ নীতির কারণে আফ্রিকার অনেক দেশেই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই সমস্যার জন্য পশ্চিমের দেশগুলির নেওয়া নীতিকেই দায়ী করছে তারা।জার্মানির মতো ব্রিটেনও হান্টিং ট্রফি আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।




 

Related articles

ধর্মীয় বই কিনতে গিয়ে ২ কোটি টাকার প্রতারণার ফাঁদে কলকাতা ইসকন! গ্রেফতার ১ 

ধর্মীয় বই কেনার অর্ডার দিতে গিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকার প্রতারণার শিকার হল কলকাতা ইসকন। অভিযোগ, অর্ডার অনুযায়ী...

বিশ্বকাপজয়ী মেয়ের সৌজন্যে হারানো পুলিশের চাকরি ফিরে পাচ্ছেন বাবা

কয়েকদিন আগেই আইসিসি একদিনের বিশ্বকাপ(ICC World Cup)  জিতেছে ভারতীয়  মহিলা দল। মেয়েদের সাফল্যে গর্বিত মা-বাবারা। তবে বিশ্বকাপজয়ী মেয়ের...

গ্যাস-সমস্যায় নিঃশ্বাসের পরীক্ষা: যুগান্তকারী আবিষ্কারে বিশ্বে স্বীকৃতি বাঁকুড়ার চিকিৎসকের

একটি সাধারণ সমস্যা, যাতে জর্জরিত বর্তমান যুবসমাজ থেকে শিশুরা পর্যন্ত। গ্যাস বা গ্যাসট্রাইটিসের মতো সমস্যা নির্ধারণ করার জন্য...

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগে বাড়তে পারে আসন সংখ্যা, জানালো এসএসসি 

রাজ্যের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের ফলাফল ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। প্রকাশিত ফল অনুযায়ী,...
Exit mobile version