Monday, November 3, 2025

চক্রান্তের দ্বিতীয় পর্বের পর্দাফাঁস: সন্দেশখালি অশান্ত করতে দেদার টাকা বিলি বিজেপির!

Date:

যত দিন যাচ্ছে, ততই সন্দেশখালিতে (Sandeshkhali ) বিজেপির (BJP) তৈরি করা ষড়যন্ত্রের পর্দাফাঁস হচ্ছে। প্রথম পর্ব সামনে আসে ৪ মে। শনিবার রাতে প্রকাশ পেল দ্বিতীয় পর্ব। ৪৬ মিনিটের ভাইরাল ভিডিওটিও (Viral Video) সন্দেশখালি-২-এর বিজেপির (BJP) মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়ালের (Gangadhar Kayal)। ভাইরাল ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি ‘বিশ্ববাংলা সংবাদ’। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, শুভেন্দু অধিকারীর দল কীভাবে পিস্তল, বোমা, মদ-সহ আরও খরচ বাবদ এলাকায় দেদার টাকা ছড়িয়েছে। তৃণমূলের (TMC) সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াই করতে গিয়ে এলাকা অশান্ত করে জনজীবন স্তব্ধ করার ঘৃণ্য চক্রান্ত করে গেরুয়া শিবির। একের পর এক ভিডিওতে (ভাইরাল ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি ‘বিশ্ববাংলা সংবাদ’) সেটাই ফাঁস হচ্ছে।

গঙ্গাধর কয়ালের প্রথম ভিডিও ছিল, কীভাবে ২০০০ টাকার বিনিময় মহিলাদের দিয়ে ভুল বুঝিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করানো হয়েছে, যেখানে কোন ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। এরপর প্রকাশ্যে আসে বিজেপির প্রার্থীর বিস্ফোরক ভিডিও। যেখানে এবারের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র স্বয়ং বলছেন, রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছিল ভুয়ো মহিলাদের। এমনকী মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন থেকে শুরু করে বিজেপি নেতারা এলাকার মহিলাদের সাদা কাগজে সই করিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ লিখে দেন। রাজ্যের শাসকদলকে ছোট করতে গিয়ে বাংলার দশ কোটি মানুষের সম্মান দেশের সামনে ছোট করেছে বিজেপি।

দ্বিতীয় পর্ব আরও বিস্ফোরক। মিথ্যাচারের রাজনীতির আরও এক পর্বে প্রকাশ্যে গঙ্গাধর কয়াল ও বিজেপি নেতৃত্বের আরও গভীর ষড়যন্ত্র। এই ভিডিও ৭২ জন মহিলাকে বিদ্রোহী সাজাতে ২ হাজারের বেশি করে টাকা দেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন গঙ্গাধর। এছাড়া প্রত্যেক দিনের খরচের জন্য নগদ দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে মদ, গুলি, বোমা, পিস্তল, বাইকের তেল, মোবাইল ফোন রিচার্জের খরচ- সবারই হিসেব রয়েছে।

গঙ্গাধরের সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের কথোপকথন-
প্রথম ব্যক্তি : আন্দোলন জারি রাখতে গেলে কিছু মোবাইল লাগবে। কটা দিলে চলবে?
গঙ্গাধর : দশটা মোবাইল দিলে আপাতত কাজ চলবে, প্রয়োজন তো অনেক… সন্দেশখালিতে টাকা না দিলে ১০ জন লোকও পাওয়া যাবে না। মুখ খোলার জন্য তো টাকা দিতে হবে।
প্রথম ব্যক্তি : ৭২ জন আন্দোলনকারী মহিলাকে কত টাকা করে দেওয়া হয়েছে?
গঙ্গাধর : ৫ হাজার টাকা করে মহিলাদের দেওয়া হয়েছে। জেলিয়াখালি- বীরমজুর-১ ও ২-এর মহিলাদের দেওয়া হয়েছে।
প্রথম ব্যক্তি : কীরকম ফান্ড হলে চলতে পারে?
গঙ্গাধর : এক লাখ হলে চলে যাবে। বাইকে করে গেলে তো তাদের তেল দিতে হবে। হাতে কিছু টাকা দিতে হবে। মদ দিতে হবে। কোলাঘাটে মিটিং হলে আমাতে তো ছেলেদের নিয়ে যেতে হবে। মোবাইলে পয়সা ভরে দিতে হবে। তেল দিতে হবে। না হলে ওরা আসবে কেন!
প্রথম ব্যক্তি : ভোট পর্যন্ত মদের সাপ্লাই কী রকম লাগবে? মহিলাদের জন্য আলাদা করে বলুন, পুরুষদের জন্য আলাদা করে বলুন। আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে তো লাগবে।
গঙ্গাধর : তিনটি অঞ্চলে প্রায় ৫০টা বুথ আছে। ওদের তো হাঁড়িয়া লাগবে, দেশি মদ লাগবে। ১০টা বুথের জন্য বলি!
প্রথম ব্যক্তি : না না আপনার মণ্ডল। আপনার দায়িত্ব।
গঙ্গাধর : ৫ হজার টাকা করে যদি প্রতি বুথে ধরা হয়, ৫০টা বুথ। প্রায় আড়াই লাখ টাকা লাগবে।
প্রথম ব্যক্তি : মহিলাদের সংখ্যা কত মদ খাওয়ার ক্ষেত্রে?
গঙ্গাধর : ৩০ শতাংশ মহিলা ৭০ শতাংশ পুরুষ। মহিলারা আলাদা (এরমধ্যে আন্দোলনকারী মহিলারাও থাকবে) খাবে, পুরুষদের সঙ্গে কোনও মেশার ব্যাপার নেই। তবে ছেলেরা পিছন থেকে হেল্প করবে। ওটাই করুন, আপাতত কমই বললাম। প্রথম লোকসভাটা জিতি। পরে বিধানসভার ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা করা যাবে। আপনারা আছেন যখন আমার একটু সুবিধা হল।
প্রথম ব্যক্তি : আর্মস সাপোর্ট কী লাগবে? মনিপুর আর কুরাকাটি তাইতো।
গঙ্গাধর : হ্যাঁ সন্দেশখালির জন্য লাগবে না।
প্রথম ব্যক্তি : কত আর্মস লাগবে? কী অস্ত্র লাগবে? পিস্তল-বোম আপনাদের এলাকায় কোন ধরনের জিনিসটা বেশি লাগবে।
গঙ্গাধর : পিস্তল বেশি লাগবে। মনিপুরে ২০ আর কুরাকাটির জন্য ৩০। ৫০ টা হলে ঠিক আছে।
প্রথম ব্যক্তি : এই যে ৫০টা পিস্তল যাদের হাতে দেবে তারা এটা ব্যবহার করতে অভ্যস্ত?
গঙ্গাধর : একদম অভ্যস্ত।
প্রথম ব্যক্তি : ম্যানপাওয়ার আপনার কাছে আছে?
গঙ্গাধর : ম্যানপাওয়ার আছে আমার কাছে।
প্রথম ব্যক্তি : বোমের কোনও সাপ্লাই লাগবে?
গঙ্গাধর : না বোমের সাপ্লাই লাগছে না। এই হলেই ঠিক আছে।
প্রথম ব্যক্তি : মোটামুটি কার্তুজ কত লাগবে?
গঙ্গাধর : এগুলো কী পর্যায়ের আছে? কোনটায় ৬টা থাকে, কোনটায় ১টা থাকে?
প্রথম ব্যক্তি : না সিঙ্গেল নাই। সব ৬টা।
গঙ্গাধর : ১২টা করে ধরুন। ৩৬০ মোট। ডাবল না থাকলে মুশকিল।
প্রথম ব্যক্তি : দাদা একটা জিনিস, কাজ হওয়ার পর কিন্তু মাল ফেরত দিতে হবে। এদের কাছে একটাও যদি থাকে, তাহলে কিন্তু চাপ।
গঙ্গাধর : না না, ঠিক আছে ফেরত যাবে। আপনাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। এবার ওদেরকেও ওয়ান ম্যান করে ডাকতে হবে, বলতে হবে।
প্রথম ব্যক্তি : এই যে ধরুন ৩০ জন আছে, এদের মধ্যে তিনটে বা চারটে করে টিম করে দিলেন। তাদের মধ্যে একজন মাথা তার দায়িত্ব ডিস্ট্রিবিউশন আর কালেকশন দুটোই। আর ফায়ারিং যদি হয় তবে খোল কালেকশন করে ডেস্ট্রয় করতে হবে। খোল যেন কারো হাতে না পড়ে এটা মাথায় রাখতে হবে।
গঙ্গাধর : হ্যাঁ, ঠিক আছে।
প্রথম ব্যক্তি : তাহলে এখানে আপনার ৩০টা পিস্তল আর ওখানে ২০টা পিস্তল হলে আপনার হয়ে যাবে। আর আপনার এখন ১ লাখ টাকা ফান্ড হলে মোটামুটি আপনি চালিয়ে নিতে পারবেন।
গঙ্গাধর : হ্যাঁ, চালিয়ে নেব।
প্রথম ব্যক্তি : আর মদ মোটামুটি পার বুথ যদি ৫ হাজার টাকা করে ধরা হয় তাহলে মহিলা পুরুষ মিটে যাবে!
গঙ্গাধর : হ্যাঁ।
প্রথম ব্যক্তি : মহিলাদের আর কোন ডিম্যান্ড?
গঙ্গাধর : ডিমান্ড বলতে, যারা আন্দোলনকারী আছে তাদের আর্থিক দিকটা দেখলে একটু ভালো হয়।
প্রথম ব্যক্তি : মানে আন্দোলনকারীদের যে টাকা-পয়সা দেওয়া হচ্ছিল সেটা এখন বন্ধ আছে। সেটাকে রানিং করতে হবে, তাই তো?
গঙ্গাধর : হ্যাঁ ওটা রানিং করতে হবে।
প্রথম ব্যক্তি : ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
গঙ্গাধর : আপনারা যা করার করবেন।
প্রথম ব্যক্তি : আপনি এদের সাথে কথা বলবেন, কমিউনিকেট করবেন ডেকে এনে।
গঙ্গাধর : আমি সংগঠনের কথা বেশি বলব, ওটা কম। ওটা শেষে বলব।
প্রথম ব্যক্তি : নামের তালিকা দিন। (এবার গঙ্গাধর প্রথম ব্যক্তিকে বিভিন্ন জনের নাম, মোবাইল নম্বর ও এলাকার নাম দিতে থাকে)। এই যে আন্দোলনকারী এদের সব টাকা পয়সা দেওয়া হবে। এরা মন্ত্রী, এসডিও, বিডিওদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাবে। একটা ইস্যু তৈরি করতে হবে। এটা টানা চলতে থাকবে। ছোট-বড় নেতা যেই ঢুকুক তাদের ঘিরে ধরতে হবে।
এরপর গঙ্গাধর বেশ কিছু মহিলার নাম ও ফোন নম্বর দেয়। অঞ্জলি সিংহ, লতিকা সিংহ, সীমা সিংহ, শ্রাবন্তী সিংহ, শিবানী সিংহ, মালতি সিংহ। এরা সিংহপাড়ার। সন্দেশখালির তনিমা সর্দার, সন্ধ্যারানি সর্দার। (আবার সন্দেশখালির কাটখালি নতুনপাড়ার বেশ কিছু মহিলার নাম দেয় গঙ্গাধর।)
প্রথম ব্যক্তি : টিভিতে যাদের মুখ দেখা যাবে তাদের একটু আলাদা কেয়ার নিতে হবে। দ্বিতীয় নন্দীগ্রাম করতে হবে। তাই তো?
গঙ্গাধর : হ্যাঁ, দ্বিতীয় নন্দীগ্রাম।

কথোপকথনের প্রতিটি ছত্রে ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের চিত্রনাট্য পরিষ্কার। তৃণমূলকে রাজনৈতিকভাবে অপদস্থ করতে না পেরে ঘৃণ্য নীচতার রাজনীতি করেছে বাংলার বিজেপি নেতাদের।

Related articles

‘বন্দেমাতরম’-এর সার্ধ শতবর্ষে রাজ্যজুড়ে উদযাপন, মুখ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার 

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টি ‘বন্দেমাতরম’-এর সার্ধ শতবর্ষ উদযাপন করবে রাজ্য সরকার। সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত...

বিদেশি বন্দি-মুক্তির দাবি! জনস্বার্থ মামলা দায়ের কলকাতা হাইকোর্টে 

রাজ্যে মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে ভোটার তালিকা সংশোধনীর কাজ বা এসআইআর। ঠিক এই সময়েই আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের...

রাজ্যের প্রতিটি জেলায় খুলছে সোশ্যাল মিডিয়া ইউনিট, সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার

রাজ্যের উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ এবার আরও দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছবে সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে। সেই লক্ষ্যেই প্রতিটি জেলায় পৃথক সোশ্যাল...

অস্ট্রেলিয়ায় রাত জেগে স্মৃতিদের বিশ্বকাপজয়ের সাক্ষী থাকলেন সূর্যরা

মুম্বইয়ে বিশ্বকাপ জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে ভারতীয় মহিলা দল(Indian women team)। গোটা দেশ সাক্ষী থেকেছে হরমনপ্রীতদের অবিস্মরণীয় কীর্তির।...
Exit mobile version