প্রেমের প্রতীক্ষায় কাটলো পাঁচ দশক, আজও বুকপকেটে প্রেমিকার ছবি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধার!

ভালবাসা সত্যিই অমর। কাছে এসে ধরা দিক বা দূরে চলে যাক, অনুভূতিগুলো চিরস্থায়ী হয়ে থেকে যায় আজীবন। প্রেমের আরেক নাম অপেক্ষা। এই কথাটাকে সত্যি প্রমাণ করে ৫১ বছর ধরে প্রেমিকার ছবি বুকপকেটে নিয়ে বেঁচে আছেন বাংলাদেশের এক বীর মুক্তিযোদ্ধা তানেসউদ্দিন। প্রেমিকার নাম জোহরা। কিন্তু বিয়ে হয়নি কেন? আসল গল্পটা জানতে যেতে হবে ফ্ল্যাশব্যাকে।

তানেসউদ্দিন আর জোহরার প্রেমের শুরু ১৯৬৪ সালে। তানেসউদ্দিন তখন ক্লাস টেনে পড়েন। আর জোহরা ক্লাস এইটে। কিশোর মনের একে অন্যের প্রতি তীব্র আকর্ষণের মধ্যে চঞ্চলতা থাকলেও বেশ কিছুটা ভয় নিয়েই প্রেমের শুরু। জোহরার সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রায়ই সন্ধ্যায় তানেসউদ্দিনকে মেঘনা নদী পার হতেন। একবার তো নৌকা না থাকায় সাঁতরে চলে গেছিলেন প্রেমিকার কাছে। পড়ুয়া করেননি রাতের অন্ধকারের উত্তাল জোয়ারের মেঘনার ঢেউকে। এরপর ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ শুরু। কর্তব্যের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন তানেসউদ্দিন। বুকচাপা কান্নায় সম্মতি দিয়েছিলেন জোহরা। হাতে ছিল প্রেমিকের প্রতিশ্রুতি, “দেশ স্বাধীন করে তবেই তোমাকে বিয়ে করব”।

এরপর কলকাতা, আগরতলায় যুদ্ধ প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফেরেন তানেসউদ্দিন। মুক্তিযুদ্ধে প্রাণপণে লড়াই করেন। স্টেনগানের বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েও মাথা নত করেননি কারণ মনে ছিল আত্মবিশ্বাস, বুকে ছিল প্রেমিকার ভরসা। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর তানেসউদ্দিন ফেরেন প্রেমিকার কাছে। কিন্তু কথা রাখেননি জোহরা। পাকিস্তানি মিলিটারির গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে তাঁর দেহ, রেহাই পাননি বয়স্ক বাবাও। স্তব্ধ হয়ে যান তানেসউদ্দিন। থমকে দেয় পৃথিবী। নিজের প্রেমিকার থেকে আর সুন্দরী মহিলা এ জীবনে চোখে পড়েনি তাঁর। তাই ৫১ বছর ধরে বুক পকেটে প্রেমিকার ছবি নিয়ে বেঁচে থাকা। মৃত্যু যে ভালোবাসাকে শেষ করতে পারে না। তাই বাংলাদেশের এই মুক্তিযোদ্ধার প্রেম অমর।