আচমকা বিকট শব্দ-ঝাঁকুনি! চারিদিক থেকে আর্ত চিৎকার, অভিজ্ঞতা শোনালেন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের যাত্রী

ঘড়ির কাঁটায় প্রায় নটা। শিয়ালদহের উদ্দেশে ছুটছে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। আচমকা বিকট শব্দ। জানলা দিয়ে চোখ মেলতেই কয়েকটি কামরার যাত্রীরা দেখলেন খেলনার মতো উলটে-পালটে পড়ে পিছনের কামরা। একই লাইনে মালগাড়ি। কাঞ্চনজঙ্ঘার একটি কামরা ঝুলছে শূন্যে! দুর্ঘটনার মুহূর্তের কথা শোনালেন অভিশপ্ত ট্রেনের যাত্রী বর্ধমানের অমর দাস

সোমবার উত্তরবঙ্গের রাঙাপানি এবং চটেরহাট ষ্টেশনে মাঝে দুর্ঘটনাগ্রস্থ ডাউন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসেই বর্ধমান ফিরছিলেন ক্রীড়াবিদ অমর দাস ওরফে পিণ্টু। বর্ধমানের লোকো কলোনীর বাসিন্দা অমরবাবু অক্ষতই আছেন। কিন্তু ঘটনার ভয়াবহতায় তিনি বেশ ঘাবড়ে গেছেন।

টেলিফোনে অমরবাবু জানিয়েছেন, ” গত ৬ জুন এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন গ্রাম মেঘালয়ের মাওলিনং বা মাওলাইনং গ্রামে ট্রেকিং সেরে গুয়াহাটি থেকে ফিরছিলাম। গুয়াহাটি থেকে ট্রেনে এনজিপি পর্যন্ত ভালভাবেই আসেন। এরপর এনজিপি থেকে ট্রেন বেড়িয়ে রাঙাপানি ষ্টেশন পার করে চটেরহাট ষ্টেশন ঢোকার আগে সিগন্যাল লাল হওয়ায় ট্রেনটি গতি কমিয়ে একেবারে থামতে শুরু করে। সিগন্যালের আগেই ‌ট্রেন যখন থামতে চলেছে সেই সময় পরপর ৪ বার বিকট আওয়াজ করে ঝাঁকুনি দেয় ট্রেনটি। আমি ছিলাম কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের প্রায় মাঝামাঝি এস-৭ কামরার ৭২নং লোয়ার বার্থে। ঝাঁকুনির চোটে হাতের কাছে রডটিকে চেপে ধরলাম। আমার চোখের সামনে আপার বার্থের দুজন আছড়ে পরলেন কামরার মেঝেতে। তাদের একজনের হাতও ভেঙে গেল। কিছু বোঝার আগেই আবার একটা বড় ঝাঁকুনি।

এরপর চারিদিক থেকে কেবল চিৎকার। আমি কামরা থেকে বেড়িয়ে গিয়ে দেখলাম পিছনের কয়েকটা কামরা দুমড়ে মুচড়ে গেছে। স্থানীয় মানুষজন ছুটে আসছেন। চোখের সামনে দেখলাম প্রথম এক মহিলাকে বার করতে। তিনি মারা গেছেন। চারিদিকে কান্না আর চিৎকার। কাঞ্চনজঙ্ঘার পিছনে বগিটি ছিল পার্সেল বগি। নাহলে আরও ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যেতে পারত। এরপর প্রায় দেড় থেকে দুঘণ্টা স্থানীয়রাই উদ্ধারের কাজ করেছেন। প্রশাসন, রেলের কর্তারা এসেছেন ঘটনার প্রায় দেড় – দু-ঘণ্টা পরে।

সকাল ৮টা বেজে ৫৫ মিনিট নাগাদ এই ঘটনা ঘটে। এরপর আমাকে এবং আমার পরিচিত প্রায় ২০-২২জনকে এ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া হয় উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে। সেখানে বেশিরভাগকে ছেড়ে দেওয়া হলেও ২জনের আঘাত গুরুতর থাকায় তাদের ভর্তি করে নেওয়া হয়। এরপর অ্যাম্বুলেন্সেই আমাদের এনজিপি ষ্টেশনে পৌঁছে দেওয়া হয়।” অমরবাবু জানিয়েছেন, এক ভয়ানক অভিজ্ঞতা। এভাবে যে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারবো সেটা ভেবেই আঁতকে উঠছি। উল্লেখ্য, অমরবাবু জানিয়েছেন, বর্ধমান থেকে তিনি একা এবং উত্তরবঙ্গের কয়েকজন মিলে তাঁরা ট্রেকিংয়ে গেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার সময় হালকা বৃষ্টি পড়ছিল। একইসঙ্গে ব্যাপক বজ্রপাতও হচ্ছিল। ছিল হালকা কুয়াশাও। অন্যদিকে, কাঞ্চনজঙ্ঘার এই দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক রামশংকর মণ্ডল জানিয়েছেন, গোটা রাজ্যে ২৩জন আহত রয়েছেন। যাঁদের মধ্যে বর্ধমানে একজন আহত আছেন। আহতের নাম রাজকুমার বটব্যাল বলে জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ার এদিন জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসন ঘটনার দিকে নজর রেখেছে। অন্যদিকে, এদিন বর্ধমান ষ্টেশন সূত্রে জানা গেছে, এদিন কাঞ্চনজঙ্ঘার নির্ধারিত বর্ধমান ষ্টেশনে আসার সময় ছিল বিকাল প্রায় সাড়ে চারটে নাগাদ। এই দুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্থ বগিকে বাদ দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা শিয়ালদহের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। বর্ধমান ষ্টেশনে এই ট্রেন ঢুকতে পারে রাত্রি প্রায় ১১টা নাগাদ এবং শিয়ালদহে রাত্রি প্রায় ১টা নাগাদ।

আরও পড়ুন- স্টিম্যাচকে বরখাস্ত করল এআইএফএফ

 

Previous articleস্টিম্যাচকে বরখাস্ত করল এআইএফএফ
Next articleকৃষকবন্ধু প্রকল্প: মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণের ৪৩ কোটি বরাদ্দ রাজ্যের