বিরোধীদের সতর্কবার্তা মেনে চললে এড়ানো যেত অনেক রেলদুর্ঘটনা! মোদিকে তীব্র আক্রমণ করে কটাক্ষ তৃণমূলের

সংসদে বিরোধীদের সতর্কবার্তা এবং গঠনমূলক পরামর্শ মেনে চললে অনেক রেলদুর্ঘটনাই যে এড়ানো সম্ভব হত, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল তৃণমূল কংগ্রেস। সোমবার রাঙাপানিতে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে ভয়াবহ দুর্ঘটনার জন্য কেন্দ্রের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে প্রধানমন্ত্রীকে একহাত নিয়েছেন রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। একের পর এক যুক্তি এবং উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন, বিরোধীদের দেখানো রেড-ফ্ল্যাগ উপেক্ষা করে যাত্রী-সুরক্ষাকে কীভাবে অবহেলা করেছে রেল। যাত্রীদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার চেয়ে অর্থহীন জনসংযোগকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে বিজেপি সরকারের রেলমন্ত্রক। এমনকী ২০২৩-এর জুনে বালেশ্বরের বাহানগায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০০ মানুষের প্রাণহানির ঘটনা থেকেও শিক্ষা নেননি প্রধানমন্ত্রী।

ডেরেক ও’ব্রায়েনের প্রশ্ন, ২০০৯ সালে জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী হিসেবে সংসদে রেলসুরক্ষাকে নিশ্চিত করতে ‍‘ভিশন ২০২০’ পেশ করেছিলেন সংসদে। যার মূল লক্ষ্য ছিল ১০ বছরে অত্যাধুনিক সুরক্ষা-ব্যবস্থার মাধ্যমে রেলদুর্ঘটনা বা তার সম্ভাবনাকে নির্মূল করা। পূর্ণ সুরক্ষা এবং দুর্ঘটনার প্রশ্নে জিরো টলারেন্স। প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানবসম্পদের উপযুক্ত সমন্বয়ের মধ্যে দিয়ে এ বিষয়ে অবশ্যই সাফল্যলাভ সম্ভব ছিল। এর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, অত্যাধুনিক সিগন্যাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ট্রেনের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারি, অ্যান্টি কলিশন ডিভাইসের মাধ্যমে রেলের এবং যাত্রীদের সুরক্ষা। কিন্তু গত দশ বছরে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছে রেলমন্ত্রক। মোদির সরকারের আমলে অগ্রগতির হার যৎসামান্য। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বালেশ্বরের ভয়াবহ রেলদুর্ঘটনার জায়গায় গত ৩ বছরে অ্যান্টি কলিশন ডিভাইসের জন্য খরচ করা হয়নি একটি পয়সাও। অথচ এই খাতে মঞ্জুর হয়েছে ৯৪৩ কোটি টাকা। সারা দেশের একলক্ষ কিলোমিটারেরও বেশি রেললাইনের মধ্যে এখনও পর্যন্ত মাত্র ১৪৪৫ কিমি কবচের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।

তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতার বক্তব্য, বুলেট ট্রেন চালু করার বিরোধিতা করছে না কেউই। কিন্তু প্রশ্নটা অন্য জায়গায়, কেন্দ্রের অগ্রাধিকারের তালিকা নিয়ে। দেখা যাচ্ছে মুম্বই থেকে আমেদাবাদ পর্যন্ত একটি বুলেট ট্রেন চালানোর খরচ এক লক্ষ কোটি টাকার বেশি। অথচ আশ্চর্যের বিষয়, রেলের বিশেষ সুরক্ষার জন্য গঠিত রেল সংরক্ষা কোষে ৫ বছরের বাজেট বরাদ্দ হয়েছে এক লক্ষ কোটি টাকা। এটা অবশ্যই অত্যন্ত উদ্বেগজনক বিষয়।

এখানেই শেষ নয়, রেললাইনের সুরক্ষার জন্য নিয়মিত নজরদারি এবং পরিদর্শন যেখানে অত্যন্ত জরুরি, সেখানে ৫০ শতাংশ লাইনেই সেই কাজ হয়নি এখনও। যার অবশ্যম্ভাবী পরিণাম, প্রতি ৪টির মধ্যে ৩টি ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে রেল বেলাইন হয়েই ডেকে আনছে দুর্ঘটনা। তাছাড়া, রেলমন্ত্রকেরই সংসদে স্বীকারোক্তি, ৩ লক্ষের উপরে পদ এখনও শূন্য। কিন্তু তৃণমূল-সহ বিরোধীরা বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও নির্বিকার রেল এবং অবশ্যই তার নিয়ন্ত্রক নরেন্দ্র মোদি।

এদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার জন্য রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের পদত্যাগ দাবি করেছে কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রীর দিকে আঙুল তুলেছেন রাহুল গান্ধী। মল্লিকার্জুন খাড়্গের কটাক্ষ, রেলমন্ত্রককে ক্যামেরাচালিত প্রচারের প্ল্যাটফর্মে পরিণত করেছেন মোদি। প্রাক্তন রেলমন্ত্রী আরজেডি সুপ্রিমো প্রশ্ন তুলেছেন, দেশে ক্রমাগত রেল দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কে?

আরও পড়ুন- মঙ্গলে মদনমোহন মন্দিরে মা-মাটি-মানুষের নামে পুজো দেবেন মমতা

 

Previous articleমঙ্গলে মদনমোহন মন্দিরে মা-মাটি-মানুষের নামে পুজো দেবেন মমতা
Next articleআত্মঘাতী গোল, জয় দিয়ে ইউরো কাপের অভিযান শুরু ফ্রান্সের