বাংলাকে ‘বাদ’ দিয়েই গঙ্গার জল চুক্তি! মোদির হঠকারিতা, অবহেলায় ক্ষুব্ধ রাজ্য়

একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনা, মিড-ডে মিলের টাকার মতো এক্ষেত্রে কেন্দ্রের বঞ্চনায় বাংলা। বিজেপি সরকারের চোখ বন্ধ করা নীতিতে সেই সঙ্গে ক্ষতির মুখে বাংলার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ

বাংলায় ভোট প্রচারে এসে যে বড় বড় আশ্বাস বা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মিথ্যের ফুলঝুরি ছিল, ক্ষমতায় আসার পরই তা প্রমাণ করলেন তিনি। বাংলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গঙ্গার জল, ফরাক্কা ব্যারেজ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করার আগে একবারও বাংলাকে কিছু জানানোর প্রয়োজন বোধ করলেন না প্রধানমন্ত্রী। এমনকি প্রবল বাংলা-দরদী হিসাবে নিজেদের প্রমাণ করতে চাওয়া বিজেপি বাংলাদেশের সঙ্গে জল চুক্তির কথা শুরু আগে একবারও বাংলার মানুষের বন্যায় ভেসে যাওয়া, গঙ্গা ভাঙনে ভিটেমাটি হারানোর কথাও বিবেচনা করল না। শনিবার ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পরে মোদির এই সিদ্ধান্তের আবারও বঞ্চনার মুখে পড়ে প্রতিবাদে সরব তৃণমূল।

শনিবার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে নরেন্দ্র মোদি জানান, “১৯৯৬ সালের গঙ্গা জল চুক্তি পুণর্নবীকরণ করার জন্য প্রযুক্তিস্তরের কথাবার্তা শুরু করার বিষয়ে আমরা ঐক্যমত হয়েছি।” এই চুক্তি অনুযায়ী, দুপক্ষের সহমতে এই চুক্তি পুণর্নবীকরণ করা সম্ভব। তবে যে চুক্তি শুরু হয়েছিল বাংলার মধ্যস্থতায়, সেই বাংলাকেই পুণর্নবীকরণের সময় বেমালুম বাদ দিয়ে দিলেন মোদি, ঠিক যেভাবে কেন্দ্রের প্রকল্পের টাকা থেকে একের পর এক বাদ দিয়েছেন বাংলাকে। এখানেও বঞ্চনার সেই এক ছবি। অথচ এই ফরাক্কা ব্যারেজের জন্য একদিকে বন্যা, অন্যদিকে ভাঙন নিয়ে জেরবার হতে হয় এই বাংলাকেই, অভিযোগ তুলে এবার কেন্দ্রের কাছে জবাব চাইবে তৃণমূল।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়ায় ব্যাপক ভাঙন নিয়ে বিস্তারিত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফরাক্কা ব্যারাজের জন্য কীভাবে ব্যাপকভাবে ভাঙনে বাংলার মানুষের ভিটেমাটি, চাষের জমির ক্ষতি হচ্ছে, সেকথাও ওই চিঠিতে বিস্তারিত জানানো হয়। ২০১৭ সালে তৎকালীন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও একইভাবে ফরাক্কা ব্যারেজের জন্য বন্যার কথা তুলে সরব হয়েছিলেন। অথচ মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির পরেও গঙ্গার ড্রেজিং বা পুরোনো চুক্তি অনুযায়ী টাকা – কিছুই পৌঁছায়নি বাংলার বরাদ্দে। বারবার তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই প্রসঙ্গ তোলা হলেও একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনা, মিড-ডে মিলের টাকার মতো এক্ষেত্রে কেন্দ্রের বঞ্চনায় বাংলা। বিজেপি সরকারের চোখ বন্ধ করা নীতিতে সেই সঙ্গে ক্ষতির মুখে বাংলার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ।

সংবিধানের ২৫৩ ধারা অনুযায়ী প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে যে কোনও বিষয়ে ভারত সরকার চুক্তি করতে পারে। কিন্তু একটি নদীমাতৃক রাজ্যের সহযোগিতা না থাকলে সেই পথে এগোতে কতটা সমস্যা হয় তা তিস্তা চুক্তির সময় কেন্দ্র বুঝেছিল। এরপর বাংলার সঙ্গে কথা বলেই সেই চুক্তির পথে গিয়েছিল কেন্দ্র। অথচ গঙ্গা জল চুক্তির সময় সবথেকে বেশি প্রভাবিত হতে চলা বাংলাকে বেমালুম বাদ দিয়েছেন মোদি, অভিযোগ তৃণমূলের।

রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রী বাস্তববাদী, উদার। তিনি নিশ্চিতভাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশকে ভালোবাসেন। বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার পক্ষে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ, পশ্চিমবঙ্গের কৃষিভিত্তিক সমাজ এবং সংশ্লিষ্ট নাগরিকদের স্বার্থ যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে সেটাও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে হয়। ফলে যে নদীগুলি পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে গিয়েছে সেই নদীগুলি সম্পর্কে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে গেলে, কেন্দ্রের উচিত নিশ্চিতভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তার মধ্যে রেখে তাঁর মতামত নিয়ে কোনও পদক্ষেপে যাওয়া।”