সাল ১৮২০, জুনের ভরা বর্ষায় ধ্রুপদী সঙ্গীতের সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতার আয়োজন। কাশীর মহারাজের উদ্যোগে প্রতিযোগিতায় যোগ দেন সুরসম্রাট তানসেনের (Tansen)দুই বংশধর, জাফর খান (Zafar Khan) এবং নির্মল শাহ (Nirmal Shah)। প্রথমজনের হাতে ছিল খোদ তানসেনের ডিজ়াইনে তৈরি বাদ্যযন্ত্র ‘ধ্রুপদী রবাব’ (Rabab); অন্যদিকে নির্মল শাহ বাজিয়েছিলেন রুদ্রবীণা। তিনি মুগ্ধ করেছিলেন সকলকে কিন্তু প্রেস্টিজ ফাইটে চরম অপদস্থ হন জাফর। এতটুকু ‘বোল’ ফোটেনি বাদ্যযন্ত্রে! কিন্তু কেন? আফগানিস্তান থেকে ভারতে আসা এই যন্ত্র নিয়ে আনুমানিক ৫০০ বছর আগে কোনও এক সময়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন তানসেন স্বয়ং। ‘দরবারি কানাড়া’, ‘রাগেশ্রী’ বা ‘মিঞা কি তোড়ি’র মতো রাগ-রাগিণী রবাবে বাজাতে গিয়ে তাঁর হয়তো মনে হয়েছিল, ‘ঠিক খুলছে না’। এরপরই রবাবের প্রচলিত ডিজাইনে বদল আসে, তৈরি হয় ‘ধ্রুপদী রবাব’। কিন্তু এই ঘটনার ২০০ বছর পরে বেনারসের সঙ্গীত সম্মেলনে জাফরের হাতে ‘তানসেনি রবাব’ না বাজায় ফের গবেষণা শুরু হয়। জানা যায় ওই যন্ত্রের সাউন্ড বক্স চামড়ার তৈরি হওয়ার কারণেই বর্ষায় জোলো হাওয়ায় তা নরম হয়ে গেলে আওয়াজ তীক্ষ্ণতা হারায়।

এরপর তানসেনের উত্তরসূরী রবাবের ডিজাইন বদলে সৃষ্টি করেন নতুন বাজনা ‘সুরশৃঙ্গার’। বিস্মৃতিতে চলে যায় ‘তানসেনি রবাব’। হয়তো এভাবেই তা হারিয়ে যেত। যদি না দিল্লির সঙ্গীত নাটক আকাদেমি থেকে সম্মানিত ধ্রুপদী সঙ্গীত-বিশারদ জয়দীপ মুখোপাধ্যায় (Joydeep Mukherjee) এই যন্ত্রকে নতুন রূপে নিয়ে আসার কথা ভাবতেন। তিনি বুঝেছিলেন সামান্য কিছু রদবদলে হয়তো আবার স্বমহিমায় ফিরতে পারে ঐতিহ্যের ‘তানসেনি রবাব’। এরপরই যন্ত্রের পুনরুজ্জীবন দেওয়ার কাজ শুরু। সাহায্য করেন উলুবেড়িয়ার বাসিন্দা কারিগর শম্ভু মণ্ডল (Sambhu Mondal)। জয়দীপ বলছেন, এই যন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা যেন বাংলায় তানসেনের পুনরাগমনের মতো। এতো ঐতিহ্যবাহী সুরেলা যন্ত্রকে তিনি বেলুড় মঠের কোনও অনুষ্ঠানে বাজিয়ে উদ্বোধন করতে চান বলে ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন।