বউবাজারকাণ্ডে ধৃতদের পুলিশি হেফাজত, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে চাঞ্চল্য! মাস কাউন্সিলের পরামর্শ মেয়রের

বউবাজারের (Bowbazar) হস্টেলে(Hostel ) যুবককে পিটিয়ে মারার ঘটনায় ধৃত ১৪ জনকে পুলিশি হেফাজতে (Police Custody) পাঠানোর নির্দেশ আদালতের। শনিবার তাঁদের ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে এমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, এদিন আদালতের কাছে ধৃতদের ১৪ দিনের হেফাজতের আবেদন করা হয়। এরপরই আদালত সাফ জানিয়ে দেয় আগামী ৪ জুলাই অবধি পুলিশি হেফাজতেই থাকতে হবে অভিযুক্তদের। এদিকে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট (Post Mortem Report) থেকে প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, শরীরে একাধিক আঘাতের কারণে এমন পরিণতি। রিপোর্টে স্পষ্ট উল্লেখ হাইপোভলিউমিক শক-এর কারণে মৃত্যু হয়েছে এরশাদের। হার্ট-সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত বা তরল পদার্থ না পৌঁছলে এমন শারীরিক অবস্থা তৈরি হয়। তবে এদিন ঘটনায় উদ্বেগপ্রকাশ করে মাস কাউন্সেলিংয়ের পরামর্শ দিয়েছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। শনিবার টক টু মেয়র অনুষ্ঠান শেষে মেয়র উদ্বেগপ্রকাশ করে জানান, এটা ক’দিন ধরেই হচ্ছে। বিভিন্ন গুজবকে কেন্দ্র করে গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে। মানুষ নিজের ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে। ফিরহাদ আরও বলেন, আইন নিজের হাতে নেওয়া একটা মারাত্মক বিষয়। কেউ ছেলেধরার নামে মারছে, কেউ ডাইনি অপবাদে মারছে। এখানে দেখলাম, মোবাইল চোর বলে মারছে। মানুষের ধৈর্য এতটাই হারিয়ে যাচ্ছে যে পুলিশের কাছে পর্যন্ত যাওয়ার মানসিকতাই নেই। এরপরই মেয়র বলেন, এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক এক সঙ্কেত। আমি সাধারণ মানুষকে বলব, আইন নিজের হাতে নেবেন না। এটা পুলিশের ব্যর্থতা নয়। তার জন্য একটা মাস কাউন্সেলিং দরকার।

এদিন আদালতে সরকারি আইনজীবী জানান, ধৃতেরা সকলে শিক্ষিত, বুদ্ধিমান। দেশগঠনের কাজে প্রতিভাকে ব্যবহার না করে তাঁরা ঘৃণ্য অপরাধ করেছেন। সম্মিলিতভাবে একজনকে অপহরণ করে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। সরকারি আইনজীবী আরও বলেন, যুবক যে দোকানে কর্মরত, সেখানকার মালিককে অপহরণের পর সাহায্যের জন্য ফোন করেছিলেন। টাকা নিয়ে আসতে বলেছিলেন। এরপর দোকান মালিক পুলিশকে খবর দেন। কিন্তু পুলিশ সেখানে পৌঁছনোর পরেও হস্টেলের দরজা বন্ধ ছিল বলে অভিযোগ। হস্টেলের ভিতরে যুবককে নৃশংসভাবে মারধর করা হয়। ঘটনার দু’ঘণ্টা পর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। তিনি এদিন আরও জানান, এই ঘটনার সঙ্গে আরও অনেকে যুক্ত আছেন। অনেকে পালিয়ে গিয়েছেন। সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। অন্যদিকে আদালতে অভিযুক্তদের আইনজীবী জানান, পুলিশের কাছে মূল অভিযুক্তের নাম নেই। কারা যুবককে মারধর করেছেন, তা স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ, শুধু সন্দেহের বশে ১৪ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ধৃতেরা সকলে মেধাবী ছাত্র বলেও আদালতে সওয়াল করেন তাঁদের আইনজীবী। তবে এদিন উভয়পক্ষের সওয়াল জবাব শেষে ধৃত ১৪ জনকেই ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয় ব্যাঙ্কশাল আদালত।

তবে পুলিশ জানিয়েছে, হস্টেলের একটি নির্দিষ্ট সময়ের ভিডিও ফুটেজ ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এরশাদ আলমকে যখন মারধর করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ, তখনই ওই হোস্টেলের তিন জন আবাসিক ছাত্র গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ ডিলিট করে দেয়। পুলিশ সূত্রে আরও খবর, ঘটনার সময় এরশাদ ওই এলাকায় কফি কিনতে গিয়েছিলেন। তখনই স্থানীয় এক মুদি ব্যবসায়ী বলে ওঠেন, চোর যাচ্ছে। সেকথা শুনতে পেয়েই হোস্টেলের কয়েকজন আবাসিক রাস্তা থেকে এরশাদকে হোস্টেলের ভিতরে তুলে নিয়ে যায়। তবে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, মোবাইল চুরির সন্দেহে ইরশাদ আলমকে মারধর করা হয়েছিল। হস্টেলের ভিতরে নিয়ে গিয়ে সেখানকার আবাসিকরা মারধর এবং হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিল। কিন্তু সেখানে যুবকের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় শুক্রবারই হস্টেলের ১৪ জন আবাসিককে গ্রেফতার করে শনিবার আদালতে হাজির করে পুলিশ। ধৃতেরা হলেন ঝাড়গ্রামের উমুল হাঁসদা, বাঁকুড়ার পবিত্র মুর্মু, মুর্শিদাবাদের সুবীর টুডু, ঝাড়গ্রামের হিমাংশু মাণ্ডি, জলপাইগুড়ির মনোজ সরকার, নদিয়ার প্রদীপ দাস, মালদহের কার্তিক মণ্ডল, রাজেশ কর্মকার, দক্ষিণ দিনাজপুরের রানা হেমব্রম, পশ্চিম মেদিনীপুরের শুভঙ্কর মাণ্ডি, হুগলির প্রিয়ম মণ্ডল, নদিয়ার ঋতম হালদার, কোচবিহারের শঙ্কর বর্মন এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার দুধকুমার মণ্ডল।

 

Previous articleচূড়ান্ত হতাশার বহিঃপ্রকাশেই গণপিটুনি! মত মনোবিদদের, মাস কাউন্সেলিংয়ের পরামর্শ মেয়রের
Next articleরাজ্যপালকে আবার চিঠি, শপথ জট কাটাতে উদ্যোগ স্পিকারের