নয়া রাজ্য সভাপতি বাছতে কালঘাম ছুটছে বিজেপির! সুকান্তের উত্তরসূরির দৌড়ে কারা?

পার্টি লাইন মেনে বিজেপির ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি বজায় রাখতে হলে বাংলায় রাজ্য সভাপতি (West Bengal BJP President) বদল নিশ্চিত। কারণ, বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এখন কেন্দ্রের দু’টি দফতরের প্রতিমন্ত্রী। তাই রাজ্য সভাপতি পদে নতুন মুখ আনতে চায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সব ঠিকঠাক থাকলে চলতি মাসেই নাম ঘোষণা হয়ে যেতে পারে নতুন রাজ্য সভাপতির। দু’বছর পরেই বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। নতুন সভাপতিকে একটু সময় তো দিতেই হবে।

তবে রাজ্য সভাপতি (West Bengal BJP President) সুকান্ত মজুমদারের উত্তরসূরি বাছতে গিয়ে কালঘাম ছুটছে গেরুয়া শিবিরের। বেশকিছু নাম নিয়ে আলোচনা হলেও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। অনেকেই মনে করছেন, বিকল্প না পাওয়া পর্যন্ত কিছুটা রীতি নীতির বাইরে গিয়ে সুকান্তকে আরও কিছু সময় বাংলার দায়িত্ব রেখে দেওয়া হতে পারে।

প্রসঙ্গত, বিজেপির সাংগঠনিক সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদের ‘এ’ ধারা অনুযায়ী, ২১টির বেশি লোকসভা বিশিষ্ট রাজ্যকে ‘বড় প্রদেশ’ হিসাবে ধরা হয়। ফলে বাংলার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ম ছোট রাজ্যগুলির তুলনায় আলাদা। যদিও ২০১২ সালে সংশোধিত বিজেপির সংবিধানে সে ভাবে ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতির কথা বলা নেই। এটা দলের রীতি। আর বিজেপির সংবিধানে একটি ফাঁকও রাখা রয়েছে। দলের সর্বোচ্চ কমিটি ‘সংসদীয় বোর্ড’ (অনুচ্ছেদ ২৫) প্রয়োজনমতো যে কোনও রদবদল করা বা না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সে ভাবেই নড্ডার পর পর দু’দফার মেয়াদ শেষের পরেও লোকসভা নির্বাচনের জন্য তাঁকে সর্বভারতীয় সভাপতি পদে রেখে দেওয়া হয়েছে। যা সাধারণ ভাবে ‘সংবিধান স্বীকৃত’ নয়।

বাংলার ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও ‘মুখ’ নিয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। রাজ্য বিজেপির প্রথম সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক হরিপদ ভারতী। এর পরে দায়িত্ব দেওয়া হয় বিষ্ণুকান্ত শাস্ত্রীকে। তিনিও ‘পণ্ডিত’ হিসাবে খ্যাত ছিলেন। পরেও তিনি রাজ্য সভাপতি হয়েছেন। মাঝে তপন শিকদার, সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, অসীম ঘোষের মতো রাজনীতিকদের সেই দায়িত্ব দেওয়া হলেও মূলত অন্য ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিতদের বার বার বেছেছে বিজেপি। সেই পর্ব শেষ হয় আইনজীবী সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়কে দিয়ে। ২০০৯ সালে আরএসএসের ‘ঘনিষ্ঠ’ রাহুল সিংহ এবং ২০১৫ সালে চমক দিয়ে নিয়ে আসা হয় সঙ্ঘের প্রচারক দিলীপ ঘোষকে। দিলীপের প্রায় দু’দফা সভাপতিত্বের সময়ে রাজ্যে বিজেপির অনেকটাই উত্থান হয়। এর পরেই গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক সুকান্তকে সভাপতি করা হয়। সুকান্তের সময়ে শহুরে ভোটারদের সমর্থন যে বেড়েছে, সেটা গত লোকসভা নির্বাচনে পুর এলাকাগুলিতে বিজেপির এগিয়ে থাকা থেকে প্রমাণিত। নবম ও দশমের দুই রকমের সাফল্য দেখার পরে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে একাদশ রাজ্য সভাপতি বাছাইয়ে তাই গুরুত্ব দিচ্ছে বিজেপি।

রাজ্য সভাপতি হওয়ার সম্ভাবনায় সবচেয়ে এগিয়ে রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার। অতীতে জেলা সভাপতি জগন্নাথ শিক্ষকতা করতেন। সাংগঠনিক অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর। এ ছাড়াও নাম উঠছে সদ্য রাজ্যসভার সাংসদ হওয়া রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের। অতীতে বিজেপির একক শক্তিতে প্রথম বিধায়ক হওয়া শমীক রাজ্যে পরিচিত মুখ। বক্তা হিসাবে সুখ্যাতি রয়েছে। দলের আদি, নব্য দুই গোষ্ঠীর সঙ্গেই সম্পর্ক ভাল। আবার ‘মার্জিত’ ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সুনাম রয়েছে।

আলোচনায় থাকা তৃতীয় নাম জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো। পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় দিলীপ জমানা থেকেই রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। সাংগঠনিক অভিজ্ঞতার পাশাপাশি তিনি দলের পরিচিত ‘আদিবাসী’ মুখ। কুর্মি সম্প্রদায়ের জ্যোতির্ময়ের বয়সও বাকিদের তুলনায় কম। বিজেপির কেউ কেউ মহিলা মুখের জল্পনা উস্কে দেবশ্রী চৌধুরী এবং লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নাম নিয়ে আলোচনা করছেন। তবে প্রাক্তন মন্ত্রী এবং প্রাক্তন সাংসদ দু’জনেই এ বার লোকসভা ভোটে পরাজিত। রাজ্য বিজেপির নেতাদের একাংশের বক্তব্য, কোনও পরাজিত মুখ বা মহিলা রাজ্য সভাপতি করার সম্ভাবনা কম।

আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলায় অতি উৎসাহী রাজভবনের বিতর্কিত পোস্ট! মুছতে হল চাপে পড়ে

 

Previous articleবৈঠক ছেড়ে ছবি তুলতে ছুটলেন কল্যাণ! AIFF সভাপতিকে তোপ প্রাক্তন কোচ থেকে সম্পাদকের
Next articleস্বামীর সঙ্গে জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট-ATM ব্যবহারে সমানাধিকার! গৃহবধূদের জন্য ‘দরাজ’ সুপ্রিম কোর্ট