রাজনৈতিক সৌজন্য। বিরোধীদলের প্রার্থীর মাকে ভোটদানে সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন তৃণমূলের মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট। সুস্থ গণতন্ত্রের ছবি মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে। স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রীর সাধন পাণ্ডের প্রয়াণের পরে মামলার জট কাটিয়ে বুধবার সেখানে উপনির্বাচন চলছে। তৃণমূল প্রার্থী প্রয়াত বিধায়কের স্ত্রী সুপ্তি পাণ্ডে (Supti Pandey)। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী করেছে গতবারের পরাজিত প্রার্থী কল্যাণ চৌবেকে (Kalyan Choubey)। তবে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যতই বিরোধিতা থাকুন ভোট কেন্দ্রে দেখা গেল ‘অন্য ছবি’। কল্যাণের মা সন্ধ্যা চৌবেকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন স্থানীয় কাউন্সিলর তথা তৃণমূলের (TMC) মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট অনিন্দ্যকিশোর রাউত।মঙ্গলবার, থেকেই বিজেপি (BJP) প্রার্থী কল্যাণ চৌবে ও তৃণমূলের (TMC) আহ্বায়ক কুণাল ঘোষের মোবাইল ফোনের কথোপকথন ঘিরে সরগরম হয়ে ওঠে রাজনৈতিক মহল। কুণাল ঘোষকে (Kunal Ghosh) ক্রীড়া জগতে জাতীয় বা রাজ্য স্তরে উচ্চ পদ দেওয়ার প্রলভন দেখিয়ে তৃণমূলে অন্তর্ঘাত করানোর প্রস্তাব দেন বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে (Kalyan Chowbey)! অডিও প্রকাশ করে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন তৃণমূল নেতা। এর পরেই সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপি প্রার্থী অভিযোগ করেন, তৃণমূল নেতা না কি বিজেপিতে যাওয়ার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এর উত্তরে মোক্ষম খোঁচা দেন কুণাল। তীব্র তাচ্ছিল্য করে বলেন, ”পচা কল্যাণকে ধরে বিজেপিতে যাওয়া! প্রেস্টিজে লেগে যায়।”

এই প্রেক্ষাপটেই এদিন সকাল থেকে চলছে মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। এলাকায় অশান্তি বাধানোর চেষ্টার অভিযোগ, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে কল্যাণকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল সমর্থকেরা। এই ছবির মধ্যে অন্য চিত্র ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানে ভোট দিতে গিয়েছিলেন কল্যাণের মা সন্ধ্যা চৌবে। কিন্তু সঙ্গে করে ভোটার স্লিপ আনতে ভুলে যান বৃদ্ধা। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে গিয়ে আতান্তরে পড়েন তিনি। কোন বুথের কোন পার্টে ভোট দিতে যাবেন বুঝতে পারছিলেন না। বিষয়টি নজরে আসতেই এগিয়ে যান মানিকতলার তৃণমূলের মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট অনিন্দ্যকিশোর রাউত। স্থানীয় সূত্রে খবর, নিজেই গিয়ে সন্ধ্যা চৌবের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ভোটারতালিকা ঘেঁটে বিজেপি প্রার্থীর মায়ের নাম খুঁজে কোন বুথের কোন পার্টে ভোট দেবেন তা জানিয়ে দেন।
ভোট দিতে পেরে আপ্লুত বৃদ্ধা সন্ধ্যা। অনিন্দ্যর সম্পর্কে বলেন, “ও আমার ছেলের মতো। আমি কিছুতেই বুথ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অনিন্দ্য নিজে এসে আমায় সাহায্য করল। আমি খুব খুশি।“

বিরোধী দলের প্রার্থীর মাকে ভোটদানে সাহায্য করে কী জানালেন অনিন্দ্য? তাঁর কথায়, “ভোটাররা ভোট দিতে এলে আমাদের সাহায্য করতেই হবে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই আমি এগিয়ে গিয়েছিলাম।“ এই ঘটনা সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আদর্শ ছবি হয়ে রইল।
