Tuesday, November 4, 2025

বুটের শব্দে কাঁপছে ঢাকা, প্রাণহাতে ফেরা ৭৭৮ ভারতীয় পড়ুয়ার

Date:

Share post:

কার্ফু জারি করেও এতটুকু নিয়ন্ত্রণে আসেনি বাংলাদেশের অশান্ত পরিবেশ। ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ছোট্ট দেশটা যেন গোটা পৃথিবী থেকে এক রাতের মধ্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। তারপরেও সরকার বিরোধী কোটা আন্দোলনে বাড়ল মৃতের সংখ্যা। কোনও মতে ভারতের বিভিন্ন স্থলসীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরলেন ৭৭৮ জন ভারতীয় পডু়য়া। সেই সঙ্গে ফিরলেন নেপাল ও ভুটানের পড়ুয়ারাও। সরকারের পক্ষ থেকে অরাজকতা থামাতে ছাত্রনেতাদের বৈঠকে ডাকা হলেও দুজন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতারের ঘটনায় পরিস্থিতি ফের আলোচনার ঊর্ধ্বে চলে যায়। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের প্রায় ১৫০ কর্মী আহত বলেও দাবি প্রশাসনের।

শুক্রবার রাত থেকেই ঢাকা সহ বাংলাদেশের শহরগুলিতে কার্ফু জারি হয়। রবিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত জারি থাকবে কার্ফু। তারমধ্যেই আন্দোলনে ‘মদত’ দেওয়ার অপরাধে নাহিদ ইসলামকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশ প্রশাসন। আন্দোলনকারী দলগুলির এক নেতাকেও বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় রাতেই। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় অতিথিশালায় আন্দোলনকারীদের তিন নেতা সারজিস আলম, তানভীর আহমেদ এবং হাসনাত আবদুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করে প্রশাসন। কিন্তু এখনও কোনও রফাসূত্র বেরোয়নি। তবে কার্ফুর কারণে শনিবার সকাল থেকে ঢাকার রাস্তাঘাট ছিল শুনশান। শুধু বাংলাদেশ পুলিশ ও সেনার টহলদারি বুটের শব্দ আর ট্যাঙ্কারের আওয়াজ প্রতিফলিত হচ্ছিল।

সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হয়। তারপরেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফের রামপুরা এলাকার রাস্তায় বেরিয়ে আসেন প্রতিবাদীরা। তাঁদের দাবি, তাঁদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে। ফলে যে কোনও উপায়ে সরকারের আইন বদল করানো ছাড়া আর কোনও পথ দেখছেন না তাঁরা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী তাঁদের পাখির মত লক্ষ্যভেদ করছে প্রাণে মারছে বলেও দাবি করেন তাঁরা। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও হাসপাতাল থেকে পাওয়া সূত্র অনুযায়ী এপর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১১৫ আন্দোলনকারীর।

সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানের দাবি, আন্দোলনকারীদের মধ্যে মিশে রয়েছে বিরোধী বিএনপি ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের কর্মীরা। মূল অরাজকতা তারাই তৈরি করছে। আন্দোলনকারীদের হামলায় আহত হয়েছেন যে পুলিশ কর্মীরা তাঁদের মধ্যে ১৫০ জন ভর্তি হাসপাতালে। আরও প্রায় ১৫০ পুলিশকর্মীকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারি খবর পরিবেশন দফতরে আগুন লাগিয়ে দেওয়ায় দেশের খবর বিদেশে সম্প্রচারেও সমস্যা তৈরি হয়েছে।

রাষ্ট্রসঙ্ঘের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে জঘন্য় ও সমর্থনের অযোগ্য বলে দাবি করেছে। দেশের প্রশাসনকে অশান্তি থামাতে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বক্তব্য পেশের অধিকার ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকারকে মৌলিক অধিকার বলে জানানো হয়েছে। কার্যত তার পরেই আন্দোলনকারীদের বৈঠকে ডাকতে বাধ্য হয় আওয়ামি লিগ প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার স্পেন ও ব্রাজিল সফর বাতিল করেছেন এই অশান্তির পরিবেশে।

ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে দাবি করা হয়েছে ইতিমধ্যেই ভারতীয় ও নেপাল-ভুটানের পড়ুয়ারা ভারতের স্থলসীমান্ত ও বিমান পথে দেশে ফিরেছে। তবে বাংলাদেশের আন্দোলনকারীদের থেকে রীতিমত প্রাণ হাতে করে তাঁদের ফিরতে হচ্ছে বলেই জানিয়েছেন পড়ুয়ারা। বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি থামিয়ে তাঁদের থেকে জোর করে চাঁদা তোলারও অভিযোগ করেছেন তাঁরা। তবে কোনওমতে অশান্ত বাংলাদেশ থেকে দেশে ফিরতে পেরে নিশ্চিন্ত তাঁরা। বাংলাদেশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে বিমান পরিষেবা সচল রাখা হয়েছে, তার জন্য বিদেশ মন্ত্রকের তরফে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।

 

spot_img

Related articles

গ্রুপ সি ও ডি নিয়োগে অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করল এসএসসি

রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি পদে অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করল। কমিশনের প্রকাশিত...

তিন জেলায় চলবে নজরদারি! এসআইআর পরিদর্শনে আসছে কমিশনের বিশেষ দল

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (এসআইআর) প্রক্রিয়া চলাকালীন রাজ্যে আসছে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পরিদর্শক দল। কমিশন সূত্রে জানা...

এসআইআর চলাকালীন এলাকায় থাকতে হবে মন্ত্রীদের, কড়া নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

রাজ্যজুড়ে মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী প্রক্রিয়া (এসআইআর)। এই প্রক্রিয়ায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের...

বিশ্বকাপ জিতেই মোটা অঙ্কের আর্থিক পুরস্কার, আয়ে পলাশকে কতটা টেক্কা দিলেন স্মৃতি?

বিশ্বকাপ জিতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্মৃতি মান্ধানা (Smriti Mandhana) । আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস...