জ্বলছে আগুন, ক্ষিপ্ততা-চোখের জলের মধ্যে দেখা মিলছে না বাংলাদেশ সেনার

সাতক্ষীরা ও কাশিমপুর জেলে হামলা চালিয়ে বন্দিদের মুক্ত করে দেন। সাতক্ষীরা থেকে প্রায় ৫৯৬ জন বন্দিকে মুক্ত করে দেয় হামলাকারীরা

কথা ছিল মঙ্গলবার থেকে স্বাভাবিক হবে বাংলাদেশের স্কুল-কলেজ থেকে সরকার দফতর। সেই মতো সচিবালয়ের বাইরে সকাল থেকেই ছিল সেনার পাহারা। কিন্তু বেলা বাড়তেই সেখানে দখল নিতে থাকে হামলাকারীরা। ফলে সচিবালয় খোলার সময় দেখা যায় আতঙ্কে সরকারি কর্মীরা সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। দখল নেয় হামলাকারীরা। তবে শুধু সচিবালয়ে নয়, ঢাকা শহর থেকে বগুড়া শহরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পর্যন্ত দেখা যায়নি পুলিশ বা সেনাবাহিনীকে।

এই পরিস্থিতি শুধু মঙ্গলবার সকালের নয়। মঙ্গলবার সকালে দিনের আলো ফোটায় খানিকটা অরাজকতা কমে। সোমবার রাতে যে এলাকাগুলিতে হামলা চলে তার পরিসংখ্যান খানিকটা এরকম:

* ৭৬ টি থানার অস্ত্র লুট ও অগ্নিসংযোগ
*৩০ হাজার বাড়িঘর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ
* বিভিন্ন ব্যাংকের ১৪ টি শাখায় লুটতরাজ
* ১১ হাজার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস
* ৪ হাজার যানবাহন পুড়ে ছাই
* ২ হাজার বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার পোড়ানো
* পুলিশ, বিজিবি, আওয়ামি লীগ কর্মী, সাধারণ মানুষ সহ ৭৪৮ জন কে হত্যা
*জাতীয় গ্রিডের ২৫ টি সাবস্টেশন ধ্বংস
*৩৭ টি ট্রেনের বগিতে আগুন
* ২৯ টি পেট্রল পাম্পে আগুন

মঙ্গলবার সকালে সেই সংখ্যাটা স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে। একের পর এক আওয়ামি লীগ ও যুব লীগ নেতার বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনাই যেন অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়ায়। সবথেকে মর্মান্তিক যশোর জেলায় আওয়ামি লীগ নেতার হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা। হোটেলটি থেকে উদ্ধার হয় ২১টি মৃতদেহ যার মধ্যে একজন ইন্দোনেশীয়। এমনকি হোটেলে আগুন লাগার পরে হামলাকারীদের অনেকেও সেখানে আটকা পড়ে মারা যায় বলে দাবি।

একের পর এক থানায় হামলা চালায় উন্মত্ত জনতা। গাজীপুরে থানা ও থানার বাইরের ডোবা থেকে উদ্ধার হয় পুলিশকর্মীর মৃতদেহ। জয়পুরহাটে থানায় আটকে পড়া পুলিশ কর্মীদের প্রাণ রক্ষা করতে মাঠে নামতে হয় সেনাবাহিনীকে। কক্সবাজারে মঙ্গলবার সকালে সাধারণ নাগরিকের বাড়ির পাশাপাশি থানায় এমনভাবে হামলা চালানো হয়, যা এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করেছে। স্থানীয়দের দাবি বহিরাগতরা এই হামলা চালিয়েছিল। লুঠেরারা সাতক্ষীরা ও কাশিমপুর জেলে হামলা চালিয়ে বন্দিদের মুক্ত করে দেন। সাতক্ষীরা থেকে প্রায় ৫৯৬ জন বন্দিকে মুক্ত করে দেয় হামলাকারীরা। কাশিমপুর জেলে হামলাকারীদের প্রতিরোধ করে সেনাবাহিনী। যদিও মঙ্গলবার বিকালের দিকে অনেক বন্দিই ফিরে আসেন সাতক্ষীরা জেলে, জানায় জেল কর্তৃপক্ষ।

এই পরিস্থিতিতে অত্যন্ত সদর্থক ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসে বাংলাদেশের ছাত্র ও শিক্ষক সমাজ। একদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সোমবার রাত থেকেই সাম্প্রদায়িত সম্প্রীতি বজায় রাখা ও সংখ্যালঘুদের রক্ষার দায়িত্ব নেওয়ার বার্তা দেওয়া হয়। সকাল থেকে জয়পুরহাট থানা পাহারা দিতে দেখা যায় ছাত্রছাত্রীদের। সোমবার লুঠপাট চালানো সংসদ ভবন থেকে লুঠ হয়ে যাওয়া অস্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় ছাত্ররা। সেই সঙ্গে সংসদ ভবন পরিষ্কারও করে তারা। বিভিন্ন শহরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতেও দেখা যায় ছাত্রদের। অন্যদিকে শিক্ষক অধ্যাপকরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমবেত হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার বার্তা দেন।

 

Previous articleপ্যারিস অলিম্পিক্সের সেমিফাইনালে বিনেশ
Next articleডবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলিকেই শুধু ১০০দিনের টাকা, বঞ্চিত বাংলা! তথ্য দিয়ে বিস্ফোরক কুণাল