Monday, May 19, 2025

পুরনো কথা তুলে প্রয়াত বুদ্ধদেবকে বিঁধলেন তসলিমা

Date:

Share post:

ইদানীং সব ঘটনাকেই বোধহয় ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতির নিরিখে মাপেন বিতর্কিত বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasrin)। বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতন এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর দেশ ছেড়ে চলে আসা নিয়েও যেমন বিষোদ্গার করেছিলেন তসলিমা, সে রমভাবেই বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের (Buddhadeb Bhattacharjee) প্রয়াণেও ক্ষোভ ঝরে পড়ল তসলিমার কলমে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বুদ্ধদেব-স্মরণে লিখলেন, “তিনি আমার চোখের জল অনেক বছর ঝরিয়েছেন। তিনি বেঁচে থাকাকালীন। তাই চোখ থেকে আজ কোনও জল ঝরল না তাঁর জন্য। আসলে কোনও জল আর অবশিষ্ট নেই।” প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের (Buddhadeb Bhattacharjee) প্রয়াণে দলমত নির্বিশেষে সবাই শোক জ্ঞাপন করছেন। শুক্রবার শেষযাত্রায় একটিবার প্রিয়নেতাকে দেখার জন্য সুদূর অন্ধপ্রদেশ, কেরালা থেকেও এসেছিলেন কমরেডরা। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে ব্যথিত নন তসলিমা। সে নাই হতে পারেন। কিন্তু একেবারে পুরনো কথার ঝাঁপি খুলে বুদ্ধবাবুকে প্রবল বিদ্ধ করলেন বিতর্কিত এই লেখিকা। লিখলেন, “বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মারা গিয়েছেন।বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মারা গেছেন। খবরটি একজন দিল সকালে। শেষদিকে তাঁর কষ্টের মাত্রা খুব বেশি ছিল। এও বললো। ২০০৩ সালের আগে এরকম খবর শুনলে আমি হয়তো চোখের জল ফেলতাম। কিন্তু তিনি আমার চোখের জল অনেক বছর ঝরিয়েছেন। তিনি বেঁচে থাকাকালীন। তাই চোখ থেকে আজ কোনও জল ঝরল না তাঁর জন্য। আসলে কোনও জল আর অবশিষ্ট নেই।”

তলসিমা জানান, “২০০২ পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে সখ্য ছিল। তারপর তাঁর কী হলো কে জানে, ২০০৩ সালে বলা নেই, কওয়া নেই আমার ‘দ্বিখণ্ডিত’ বইটি তিনি নিষিদ্ধ করলেন। সেদিনই মনে হয়েছিল, আমি তাঁর চেয়ে খাঁটি বামপন্থী। আমি নাস্তিক, আমি নারীবাদী, আমি ধর্ম বর্ণ শ্রেণী লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের সমতা এবং সমানাধিকারে বিশ্বাস করি। একটি মৌলবাদী দেশে কিশোর বয়স থেকে আমার আদর্শের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করছি। আমার ‘দ্বিখণ্ডিত’ বইটিতে আমি রাষ্ট্রের কোনও রকম ধর্ম থাকার বিরুদ্ধে লিখেছিলাম। রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে পৃথক করার জন্য লিখেছিলাম বলে তিনি আমার বই নিষিদ্ধ করেছিলেন। ভাবা যায়, একজন বড় বামপন্থী নেতা ইসলাম থাকা সমর্থন করতে চান। যুক্তি দেন, তা না হলে মুসলমানরা রাগ করবে। হাইকোর্টে কলকাতার মানবাধিকার সংস্থা এপিডিআর ‘দ্বিখণ্ডিত’ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে মামলা করল। জয়ী হল। ‘দ্বিখণ্ডিত’ থেকে বুদ্ধবাবুর জারি করা নিষেধাজ্ঞা উঠে গেল। তিনি আমার ওপর আগুন হয়ে রইলেন রেগে। আরে মামলা তো আমি করিনি, জয়ী তো আমি হইনি, সুজাতবাবুরা হয়েছে। এরপর থেকেই আমাকে দেশ থেকে, সম্ভব না হলে কলকাতা থেকে তাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠলেন। ২০০৭ সালে আমাকে সাড়ে চারমাস গৃহবন্দি রেখেছিলেন, যেন অতিষ্ট হয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাই। কিন্তু কোথাও যাইনি আমি। শেষ পর্যন্ত একটা কুৎসিত নাটক করে তাড়িয়েছিলেন। তারপর কী হল? আপদ তো বিদায় হলাম। তিনি নিশ্চয়ই খুব আনন্দে ছিলেন তখন। আর অসহায় নিরীহ নির্বাসিত, নির্যাতিত, সৎ ও আপসহীন মানুষটির জীবন কতটুকু দুর্বিষহ হয়েছিল? সে কথা আজ আর নাই বললাম।”

প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করে কিছুটা ব্যঙ্গ করেই তসলিমা লেখেন, “আমি আত্মায় বিশ্বাস করি না। পরলোকে বিশ্বাস করি না। তাই আজ অন্য সবার মতো বলতে পারলাম না চিরশান্তিতে থাকুন। অথবা যেখানে থাকুন ভালো থাকুন ইত্যাদি। তবে তাঁর জীবনে তিনি ভালো যেসব কাজ করেছেন, তার জন্য বলব- কমরেড, লাল সেলাম।”

বুদ্ধদেবের জন্য প্যারিস থেকে যে উপহার আনতেন সে কথাও শুনিয়েছেন তসলিমা। লিখেছেন, “শুনেছি পরে একটি বই লিখেছেন তিনি। তাঁর কী কী ভুল হয়েছিল তাঁর শাসন আমলে। কী কী ভুল তিনি করেছিলেন? সবই লিখেছেন। শুধু আমাকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিনা দোষে যে তাড়িয়েছিলেন, সেই কথাটা উল্লেখ করেননি। এর মানে এই নিয়ে তাঁর কোনও অনুশোচনা ছিল না। তিনি মনে করতেন তিনি যা করেছিলেন ভালো করেছিলেন। আমার স্বপ্ন, সাধ সব চুরমার করে দিয়ে তিনি ভালো করেছিলেন। একজন বাংলা অন্ত প্রাণের কাছ থেকে বাংলাকে ছিনিয়ে নিয়ে তিনি ভালো করেছিলেন। আমি ইউরোপ থেকে বাংলা ভাষার টানে, প্রাণের টানে, কলকাতায় বাস করতে গিয়েছিলাম। যেহেতু বাংলাদেশের কোনও সরকারই আমাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়নি। কিন্তু আমি কল্পনাও করতে পারিনি, নন্দনে যে বুদ্ধবাবুর সঙ্গে সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে আড্ডা দিতাম, প্যারিস থেকে তাঁর জন্য তিনি যা চাইতেন উপহার এনে দিলাম, সেই মানুষটি একসময়ে আমার বাংলা মাকে, বাংলায় আমার শেষ আশ্রয়টিকে চিরকালের মতো টেনে নিয়ে যাবেন আমার পায়ের তলা থেকে।” নিজের পরিস্থিতির জন্য সর্বদা অপরের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তসলিমা। বুদ্ধ ভট্টাচার্যের প্রয়াণও বাদ গেল না।







spot_img

Related articles

টিটাগড়ের বহুতলের ফাঁকা ঘরে বিস্ফোরণ! ঘটনাস্থলে পুলিশ

ফাঁকা বহুতলের ঘরে বিস্ফোরণে চাঞ্চল্য উত্তর চব্বিশ পরগণার টিটাগড়ে। বিস্ফোরণে ঘরের দেওয়ালের অংশ ভেঙে পাশের বাড়ির চালে গিয়ে...

পাকিস্তানের অপারেশন! অজ্ঞাত আততায়ীদের হাতে খুন লস্কর নেতা সইফুল্লাহ

একদিকে যখন পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের খতম করতে অপারেশন সিন্দুর (Operation Sindur) চালিয়ে চলেছে ভারত, তখনই পাকিস্তান থেকে এলো...

বাংলাদেশকে ‘উচিত শিক্ষা’ দিতেই উদ্যোগ! কপোতাক্ষ নদের জল আটকাতে তৈরি হল স্লুইস গেট

উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তবর্তী বয়রা গ্রামে বাংলাদেশ থেকে প্রবাহিত কপোতাক্ষ নদের জল আটকাতে তৈরি হল স্লুইস গেট। বর্ষাকালে...

ভগবানপুরে অস্ত্র-সহ গ্রেফতার দুই বিজেপি নেতা! চাঞ্চল্য এলাকায় 

পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর থেকে বন্দুক ও গুলি-সহ দুই বিজেপি নেতার গ্রেফতারিতে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে। ধৃতরা হলেন...