রাজ্যে কিছু হলেই রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবিতে সবর হয় গেরুয়া শিবির। এবার সেই তালিকায় রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসও (CV Ananda Bose)। তবে, এটাই প্রথম নয়। এর আগেও মোদি সরকার মনোনীত রাজ্যপালরা বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি করেছেন। এবার আর জি কর-কাণ্ডকে ইস্যু করে সেই দাবি নাকি তুলেছেন সি ভি আনন্দ বোসও। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রের খবর, সোমবার রাখি পূর্ণিমার সকালেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সুপারিশ করেছে রাজ্যপাল। সুপারিশের প্রতিলিপি পাঠিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর (Droupadi Murmu) কাছেও৷ কিন্তু এই মর্মান্তিক ঘটনায় প্রথম থেকেই যখন স্বয়ং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কড়া অবস্থান নিয়েছেন, তখন এই বিষয়টিকে ইস্যু করে রাজ্যপালের এই দাবি ঘিরে প্রশ্ন উঠছে সব মহলে। তাছাড়া, যদি তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে তো এখন রাজ্যের হাতে তদন্তভার নেই। সেই তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ঘটনা নিয়ে রাজ্যপালকে আক্রমণ করেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। বাংলায় দায়িত্বে আসার পরেই সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর চেষ্টা করেছেন আনন্দ বোস (CV Ananda Bose)। রাজভবনে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে তরুণীর শ্লীলতাহানির অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়নি। সেই আনন্দ বোস কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে কর্মরত তরুণী চিকিত্সকের ধর্ষণ ও খুনের প্রেক্ষিতে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর অভিযোগ, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই অজুহাতে অবিলম্বে বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন লাগু করা হোক। দাবি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, দিল্লিতে পাঠানো সুপারিশে এই কথাই লিখেছেন রাজ্যপাল বোস।

এমনিতে সোমবার রাখি পূর্ণিমায় সারাদেশেই ছুটির আবহ। তবে খোলা রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাতদিনের কন্ট্রোল রুম৷ সূত্রের খবর, আনন্দ বোস তাঁর সুপারিশপত্রটি সরাসরি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহর দফতরে৷ একইসঙ্গে সুপারিশের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে রাষ্ট্রপতির কাছেও৷
এমন একটা সময়ে রাজ্যপালের তরফে রাষ্ট্রপতির শাসন জারির সুপারিশের কথা সামনে এসেছে, যখন আরজি কর কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে নেমেছে সিবিআই৷ মঙ্গলবার দেশের শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে আর জি কর ইস্যুতে স্বত:প্রণোদিত মামলার শুনানি আছে৷ তার আগেই রাজ্যপালের এই সুপারিশ প্রশ্ন উঠেছে৷

এই বিষয় নিয়ে প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞ পিডিটি আচার্য বলেন, “সংবিধানের ৩৫৬ ধারা প্রয়োগের ক্ষমতা আছে কেন্দ্রীয় সরকারের৷ এই মর্মে ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সুপারিশও করতে পারেন রাজ্যপাল৷ তবে কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিত্সকের ধর্ষণ ও খুনের যে ঘটনার কারণে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির কথা বলা হচ্ছে তার থেকেও ন্যাক্কারজনক, নৃশংস অনেক ঘটনা ঘটেছে আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে৷ সেই সব রাজ্যে কিন্তু রাষ্ট্রপতিশাসন জারির প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়নি৷ সেদিক থেকে বিচার করলে পুরো ঘটনাপ্রবাহের পিছনে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণও বেশি করে সামনে আসছে৷”

তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ কটাক্ষ করে বলেন, “তাঁর (আনন্দ বোস) স্পষ্ট কথা, রাজ্যপাল বিজেপির লোক। রাজ্যপাল এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত কিনা বলুন। রাজ্য সরকারকে বিপাকে ফেলার জন্য বিজেপি রাজ্যপালের চেয়ারকে ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে।”

এর আগে হাথরস বা উন্নাও অথবা মণিপুরের ঘটনা নিয়ে সেই রাজ্যের রাজ্যপালরা ৩৫৬ ধারার দাবি জানাননি। তাহলে, কি লোকসভা নির্বাচনে হারের পরে ঘুর পথে ক্ষমতা দখল করতে চাইছে গেরুয়া শিবির! এখন এই প্রশ্নই রাজনৈতিক মহলে। কারণ, আর জি করের ঘটনার পর থেকেই কড়া অবস্থান নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা পুলিশ তদন্তে নেমে ১২ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে তদন্ত প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু সেই আদালতের নির্দেশে তদন্তভার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে। এই ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ চলছে। এই নিয়ে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে প্রশ্ন তোলা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক অভিসন্ধি মূলক বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
