“বেসরকারি হাসপাতালে লাগাতার কর্মবিরতি চালাতে পারতেন?”ক্ষোভে ফুঁসছেন রোগীর পরিজনরা

আর জি করে (RG Kar Hospital) তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় উত্তাল গোটা রাজ্য। এই ঘটনার প্রতিবাদে জুনিয়র ডাক্তারদের লাগাতার কর্মবিরতি ২o দিন অতিক্রান্ত। দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার, ফাঁসি সকলেই চায়, কিন্তু চিকিৎসকরা এভাবে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ায় সাধারণ গরিব পরিবারের রোগীরা সমস্যায় পড়েছেন। প্রায় তিন সপ্তাহে চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত ৬ লক্ষের বেশি মানুষ। আট থেকে আশি রোগীর পরিবারের লোকেরা চোখের জল ফেলছেন। ডাক্তারের অভাবে হচ্ছে না ক্যানসার রোগীর চিকিৎসা, হচ্ছে না কিডনির সমস্যায় ভোগে রোগীর ডায়ালিলিস। হচ্ছে না গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন। কিছু হাসপাতালে আবার সিনিয়র ডাক্তারদের সাহায্য করতে গিয়ে নার্সদের জুনিয়র ডাক্তারের ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে। মুমূর্ষ রোগীকে হাসপাতাল ফিরিয়ে দেওয়ার বিনা চিকিৎসায় প্রাণহানির ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে।

রোগীর পরিবারের লোকেরা হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতেপায়ে ধরেও চিকিৎসা না পাওয়ায় জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতি ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। সকলের বক্তব্য, দোষীদের শাস্তি তাঁরও চান, তাই প্রতিবাদ হোক, কিন্তু সঙ্গে চালু থাকুক পরিষেবাও। গরিব রোগীর পরিবারের লোকেদের বক্তব্য, তাঁদের তো আর বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়ার ক্ষমতা নেই! তাঁদের ভরসা সরকারি হাসপাতাল। ক্ষোভে মানুষ বলতে শুরু করেছেন, “বেসরকারি হাসপাতালে দিনের পর দিন এমনভাবে কর্মবিরতি চালাতে পারতেন জুনিয়র ডাক্তাররা?” এক রোগীর পরিজনের প্রশ্ন, “এটাই কি তাহলে সহ্য করে যেতে হবে? এটাই কি বিচার? আর কতদিন চলবে?” এভাবেই ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীর বাড়ির লোকজন। তাঁদের মুখ-চোখ দেখে বোঝাই যাচ্ছিল, লাগাতার কর্মবিরতির জেরে নাজেহালের একশেষ মানুষগুলো বহুকষ্টে ধৈর্য ধরে রেখেছেন।

আর জি কর হাসপাতালে (RG Kar Hospital) অসুস্থ মা’কে নিয়ে এসেছিলেন মেয়ে। কর্মবিরতির জেরে পরিষেবা না পেয়ে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। বলেন, “হাসপাতালের কি অবস্থা হয়েছে বলুন তো! মা হাই সুগারের রোগী। আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছেন। জ্ঞান নেই বললেই হয়। দমদমে থাকি আমরা। এমন অবস্থায় আনাও যে কি রিস্ক! কোনওরকমে এলাম। জানি না কী পরিষেবা পাব। হাসপাতাল তো দেখছি খাঁ খাঁ করছে! যে ইস্যুতে আন্দোলন করছেন, তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন আছে আমাদের। কিন্তু কাজ বন্ধ কেন? পরিষেবা দিয়েও তো আন্দোলন করা সম্ভব। আমরা গরিব মানুষ। হাসপাতালে স্ট্রাইক করলে কোথায় যাব আমরা?”

গাইনি বিভাগের সামনে হতাশ হয়ে বসেছিলেন উল্টোডাঙার বাসিন্দা এক ব্যক্তি। তাঁর সদ্যজাত সন্তানের হার্টে ফুটো ধরা পড়েছে। খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছে দুধের শিশুটির। ভেন্টিলেশনে আছে। মাঝে মাঝে মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসছে। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ওই ব্যক্তি বললেন, “আমাদের প্রথম সন্তান। কী হবে জানি না। সিনিয়র ডাক্তারবাবুরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। ফাঁকা ওয়ার্ড। চারদিকে রোগীর থেকে পুলিশ ও আধা সেনা বেশি দেখছি। আর কত নিরাপত্তা চাই জুনিয়র ডাক্তারদের?”

আরেক সদ্যজাতের বাবার কথায়, “দেখুন, সরকারি হাসপাতালকে ধরেই আমাদের বেঁচে থাকা। যাঁরা দিনরাত মিছিল করছেন, তাঁদের অনেকেরই বাড়িতে টাকা-পয়সার অভাব নেই। সরকারি হাসপাতাল বন্ধ হলে তাঁদের কিচ্ছু যায় আসে না। অসুখ বিসুখ হলে প্রাইভেটে দেখাবেন। আমরা যাব কোথায়? ডাক্তারদের দাবি ন্যায্য। কিন্তু কাজ করে কি দাবি জানানো যেত না? হাজার হাজার গরিব মানুষকে কষ্টে রেখে তবে জানাতে হবে দাবি? প্রাইভেট হাসপাতালে এরকম টানা কর্মবিরতি করতে পারতেন ওঁরা?”

আরও পড়ুন: ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন তবে এবার কাজে ফিরুন, জুনিয়র চিকিৎসকদের অনুরোধ মুখ্যমন্ত্রীর

 

Previous articleডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন তবে এবার কাজে ফিরুন, জুনিয়র চিকিৎসকদের অনুরোধ মুখ্যমন্ত্রীর
Next articleলখনউ সুপার জায়ান্টসের মেন্টর হিসাবে আইপিএলে ফিরছেন জাহির খান