পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ভারতের প্রাচীনতম আলিপুর চিড়িয়াখানার (Alipore Zoological Garden) সার্ধশতবর্ষ পূর্তি। দেখতে দেখতে কেটে গেল দেড়শ বছর। যুগের পর যুগ ধরে ইতিহাসের সাক্ষী বহন করে চলা আলিপুর চিড়িয়াখানা সেজে উঠলো নবরূপে। ১৫০ বছর উপলক্ষে মঙ্গলবার বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad। Hakim) এবং স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা (Birbaha Hansda)। ঐতিহ্যবাহী চিড়িয়াখানা জন্মদিনে পেল নতুন গেট (Sesquicentinary Gate)। বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে দেশের অন্যতম সেরা চিড়িয়াখানার মূল ফটক যার উপরে থাকছে হাতির মাথার অবয়ব, সঙ্গে স্লাইডিং গেট। এদিনের অনুষ্ঠানে চিড়িয়াখানার দুই প্রাণীকে দত্তক নেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন বনমন্ত্রী। ফিরহাদ হাকিম ফিরে যান নস্টালজিয়ায়। জানান স্কুলের ছুটি হোক বা মন খারাপের মরসুম, আনন্দ থেকে অবসাদ সবেতেই নিজের শৈশব ফিরে পেতে বারবার চিড়িয়াখানায় ছুটে যাওয়ার যে আগ্রহ সেটা এতোটুকু কমেনি।

যুগের পর যুগ কেটে গেলেও আলিপুর জুলজিক্যাল গার্ডেনের প্রতি সাধারণ মানুষের আকর্ষণ এতটুকু কমেনি। এখনও শীতের মরশুমে ছোট থেকে বড় প্রত্যেকের ভ্রমণ ডেস্টিনেশন হয়ে ওঠে এই চিড়িয়াখানা। এদিনের অনুষ্ঠানে রায়বাহাদুর রাম ব্রহ্ম সান্যালের মূর্তি উন্মোচনের পাশাপাশি আলিপুর চিড়িয়াখানার দেড়শ বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধ একটি বিশেষ স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। মন্ত্রী বীরবাহার হাঁসদা একটি মাউস ডিয়ার (Mouse Deer) এবং একটি মালায়ান টাপির (Malayan Tapir) দত্তক নেন।

শতাব্দী প্রাচীন চিড়িয়াখানার ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে শুধু বহিরঙ্গের রূপটানই নয়, সেই সঙ্গে আগামী একবছর ধরে চিড়িয়াখানায় উন্নয়নমূলক একাধিক কর্মসূচির কথাও এদিন সরকারি তরফে ঘোষণা করা হয়। মন্ত্রী বীরবাহা বলেন, তাঁর বাবা মার দেওয়া ‘নাম’ সার্থক করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘বীরবাহা’ জঙ্গলের একটি ফুলের নাম আর রাজ্যের বনমন্ত্রী হিসেবে তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রিয় ‘দিদি’। তাই মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেওয়ার পাশাপাশি যারা ঝড় বৃষ্টি তুফান উপেক্ষা করে জঙ্গলের প্রাণীদের দেখভাল করেন, চিড়িয়াখানায় ২৪ ঘণ্টা পশুপাখিদের উপর নজর রাখেন যাতে তাদের কোনও অসুবিধা না হয়, সেই সব কর্মী আধিকারিক এবং বন্যপ্রাণ পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মন্ত্রী।পর্যটকদের জন্য আধুনিক ব্যবস্থাপনার আয়োজন করা হচ্ছে। পাশাপাশি, একরত্তি শিশুদের জন্যই বিশেষ ফিডিং রুম তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান বীরবাহা হাঁসদা।

আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা শুভঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, মঙ্গলবার থেকে শুরু করে সারা বছর এখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলবে। দেশের মধ্যে প্রথম কোনও চিড়িয়াখানা সার্ধশতবর্ষে পড়ল। চলতি বছরে তিনটি বাঘ, সাদা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ সহ মোট ১১ ধরনের জন্তু নিয়ে আসা হয়েছে এখানে। এতে দর্শকদের আকর্ষণ কয়েকগুণ বাড়বে বলেই তিনি আশাবাদী। বনদফতর সূত্রে খবর, গত মার্চ মাসে ‘ফেস্টিভ টাইম’ শেষ হওয়ার পর থেকেই চিড়িয়াখানার ভোল বদলের কাজে হাত দেয় কর্তৃপক্ষ। আলিপুর চিড়িয়াখানায় পাখির খাঁচার সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে। দু’টি বাড়তি খাঁচা তৈরি করা হয়েছে। অ্যানাকোন্ডার এনক্লোজারের উন্নতিতে নজর দেওয়া হচ্ছে। অনেক আকর্ষণ এবং চমক প্রকাশ্যে আসা এখনও বাকি রয়েছে। আগামী শীতের আগে সবটাই প্রস্তুত হয়ে যাবে। ফলে জনপ্রিয়তা এবং ভিড়ের নিরিখে এবার সব পুরনো রেকর্ড ছাপিয়ে যেতে চলেছে নতুন রূপে সজ্জিত শতাব্দী প্রাচীন আলিপুর চিড়িয়াখানা (Alipore Zoological Garden)।
