Thursday, August 28, 2025

হোহো হাহা হিহি । চাপা হাসি , মাপা হাসি , নীরব হাসি , ফচকে হাসি , মিচকে হাসি , মুচকি হাসি ইত্যাদি এখানে নিষিদ্ধ । কারণ এটা লাফিং ক্লাব । এখানে সমবেত হাসির বাঁধ ভাঙে । বেশ জোরে জোরে কোমর দুলিয়ে , পাড়া নয় , ত্রিভুবন কাঁপিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়তে থাকেন এই ক্লাবের সদস্যবৃন্দ ।‌গোমড়ামুখোদের কোনো জায়গা নেই এখানে ।এখানে কারোর চেঁচিয়ে হাসার নেই মানা । কোনো কারণ থাক আর না থাক , আপনাকে হাসতে হবেই । আপনার মনের সমস্ত দুঃখ যন্ত্রণা ভুলে , শোক ও বিষন্নতাকে বাউন্ডারি লাইনের বাইরে পাঠিয়ে তবেই এই ক্লাব থেকে বেরোতে পারবেন আপনি । সদস্যদের সমবেত হাসির উত্তাল ঢেউ , দামাল ঝড়ের মতো এমন বিকট শব্দের জন্ম দেবে প্রতিমুহূর্তে , যেন হাল্লা চলেছে যুদ্ধে । অনেকে ভাবতেই পারেন , এইসব অবান্তর হাসির পাগলামি জগতের কোনো উপকারে আসে কিনা। ক্লাবের সদস্যদের কাছে এই প্রশ্নের জুতসই জবাব আছে কিন্তু । বাঁচতে হলে হাসতে হবেই । শুষ্কং কাষ্ঠং হয়ে থাকলে হৃদরোগ নাকি অবশ্যম্ভাবি । এই অস্থির সময়ে ঘরে-বাইরের হাজারো টেনশনের ভার লাঘব করতে , মানসিক চাপ কাটাতে হাসির কোনো বিকল্প আজও খুঁজে পায় নি গোটা দুনিয়া । তাই স্ট্রোকের আশঙ্কা কাটাতেই মাস্টার-স্ট্রোক প্রাণ খুলে লাফিং । তবে হ্যাঁ, একা নয় । সবার সঙ্গে সবার রঙে রঙ মিলিয়ে সমস্বরে হাসতে হবে। তবেই নাকি শরীরের অভ্যন্তরে আনন্দ হরমোন নিঃসরণ হবে বেশি , ওই যাকে বলে ডোপামিন , যা আপনার স্ট্রেস , টেনশন কমিয়ে দেবে নিমেষেই । তাই লাফিং ক্লাবে এসে হাহা হোহো হিহি করে শরীর দোলাতে পারলে আপনি ও আপনারা বেঁচে থাকার অক্সিজেন প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পাবেন , মনের চাপ যাকে বলে যাচ্ছেতাই রকমের কমবে , আর বাড়তে থাকবে পরমায়ু ।

ক্রাইং ক্লাব আছে কিনা কে জানে ! তবে দুনিয়া জুড়ে অদ্ভুত ধরনের ক্লাবের অভাব নেই কোনোকালেই । এই তো সেদিন কাগজ পড়তে পড়তে চোখে পড়লো অষ্টাদশ শতাব্দীর ইউরোপে নাকি বিচিত্র ধরনের ক্লাবের রমরমা ছিল । লন্ডনে একটা অদ্ভুত ক্লাব ছিল , যার নাম ছিল ‘ হাঁড়িমুখো ক্লাব ‘ । এই ক্লাবে তারাই সভ্য হতে পারতো যাদের ব্যবহার ছিল ভীষণ অভদ্র এবং যারা সর্বদাই বিষন্ন ও বিমর্ষ হয়ে থাকতো । যে সব লোকজন ভুলেও হাসে না , সবসময় মুখ হাঁড়ি করে থাকে এবং ভদ্রভাষা জানে না , শুধুমাত্র তারাই এই ক্লাবের সভ্য হতে পারতো । আর ছিল ‘ কিপটে ক্লাব ‘ । মানে কৃপণদের ক্লাব । যারা ছিল হাড়কিপ্টে , যারা তাদের পাওনাদারদের দেখলেই লাঠি হাতে রেরে করে তাড়া করতো এবং দিনের পর দিন না খেয়ে টাকাপয়সা জমিয়ে নিজেদের সিন্দুক মোটা কোলাব্যাঙের মতো করে তুলতো , কেবলমাত্র তারাই সসম্মানে এই অদ্ভুত ক্লাবের সদস্যপদ লাভ করতো ।

হাড়বজ্জাতদের কোনো ক্লাব কোথাও আছে কিনা জানা নেই । তবে পৃথিবীর প্রতিটি কোনে হাড়বজ্জাতেরা প্রতিনিয়ত বর্তমান । এদের ক্লাব থাকলে সদস্য উপচে পড়বে । সেই প্রাচীন সময়ে আরেকটা খুব মজার ক্লাব ছিল , ডাহা মিথ্যেবাদীদের ক্লাব । এই ক্লাবের সদস্যেরা পরস্পরের কাছে লাগাতার মিথ্যে বলে যেতো এবং নানা উদ্ভট বিষয়ের অবতারণা করতো । এদের মধ্যে কেউ যদি ভুলেও কোনো একটা সত্যি কথা বলে ফেলতো তাহলে তৎক্ষণাৎ তার সদস্যপদ বাতিল হয়ে যেতো এবং তাকে ক্লাব থেকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেওয়া হতো ।

কুৎসিত বা কদাকারদেরও নাকি একটা ক্লাব ছিল । কী বীভৎস ব্যাপার ! আর ছিল ‘ অভাগা ক্লাব ‘ । দুনিয়ার যত হতভাগা এই ক্লাবে এসে নাম লেখাতো । দুর্ভাগ্য নাকি এদের তাড়া করে বেড়াতো সারাজীবন । আর বারোমাস যারা রোগে ভুগতো , তাদেরও একটা ক্লাব ছিল , বারোমেসে রোগীদের ক্লাব ।

এ তো গেল দু’শো বছর আগেকার ইউরোপের অদ্ভুত সব ক্লাবের কথা । আমাদের এই বৈচিত্র্যময় দেশে , মহামানবের সাগরতীরে এমন সব আশ্চর্য উপাদান ‌প্রায় প্রতিনিয়ত আমাদের চোখে পড়ে যে , চাইলে এখানে অদ্ভুত ক্লাবের মেলা বসিয়ে দেওয়া যায় । প্রথমেই যে ক্লাবটার সদস্যপদ পেতে লম্বা লাইন লেগে যাবে তার নাম রাখা যেতে পারে ‘ হুঁকোমুখো হ্যাংলা ‘ । কাতুকুতু বুড়োদের নিয়ে একটা ক্লাব করা গেলে হুড়োহুড়ি সামাল দেওয়া মুশকিল হবে । ক্লাব হিসেবে ‘ কুমড়োপটাশ ‘ জনপ্রিয় হবেই । তবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকবে ‘ খাচ্ছে কিন্তু গিলছে না ‘ ক্লাব ।

 

 

Related articles

রজতজয়ন্তীতে ডব্লিউবিএনইউজেএসকে উচ্চ প্রশংসা, মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ প্রধান বিচারপতির

কলকাতার পশ্চিমবঙ্গ জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয় (ডব্লিউবিএনইউজেএস)-এর উৎকর্ষতা এখন বেঙ্গালুরুর থেকেও এগিয়ে—রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করলেন কলকাতা হাই কোর্টের...

এসএসসি নিয়োগ পরীক্ষা পিছবে না, আবেদন খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট 

স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেও লাভ হলো না কিছু প্রার্থীর। দেশের...

যাত্রীদের জন্য দুঃসংবাদ! রবিবার টালিগঞ্জ থেকে ক্ষুদিরাম পর্যন্ত বন্ধ মেট্রো 

কলকাতার ব্লু লাইনের যাত্রীদের জন্য দুঃসংবাদ। আগামী রবিবার মহানায়ক উত্তম কুমার (টালিগঞ্জ) থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশন পর্যন্ত বন্ধ...

এনএইচএম কর্মীদের বড় উপহার, উৎসবের মুখে বোনাস ঘোষণা রাজ্যের 

উৎসবের দোরগোড়ায় জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের কাজে নিযুক্ত রাজ্যের স্বেচ্ছাসেবক ও চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের জন্য বড় ঘোষণা করল রাজ্য সরকার।...
Exit mobile version