দুর্গোৎসব মানে শুধু হইহুল্লোড় নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে লাখ লাখ মানুষের রুটিরুজি। সেই কারণেই উৎসব বয়কট কখনওই কাম্য নয়- একথা জানেন বাংলার অধিকাংশ মানুষ। সেই কারণেই মহালয়ার আগে থেকেই শারদ উৎসবে সাড়া পড়েছে। দুর্গাপুজা উপলক্ষ্যে বেশ কিছু বাংলা ছবি মুক্তি পাওয়াটাই রীতি। এবার আর দু-তিনটে ছবির সঙ্গে মুক্তি পাচ্ছে দেবের (Dev) প্রযোজিত এবং অভিনীত ছবি ‘টেক্কা’। অথচ তাঁর টিমেরই দুই মহারথী পরিচালক সৃজিৎ মুখোপাধ্যায় (Srijit Mukhopadhyay) এবং অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় (Swastika Mukhaerjee) সম্প্রতিক আর জি করের ঘটনার প্রেক্ষিতে উৎসবে না ফেরার নিদান দিয়েছিলেন। আর তাই নিয়ে বৃহস্পতিবার ‘বিশ্ববাংলা সংবাদ’ এ বিশিষ্ট সাংবাদিক তথা তৃণমূল (TMC) নেতা কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) মুখোমুখি হয়ে দেব জানালেন, ব্যক্তিগত জীবনে কে কী করছে সেটা দেখার কথা আমার নয়। কিন্তু ছবির প্রোমোশনে গিয়ে যেন সেই চিন্তার প্রতিফলন না পড়ে। কারণ কষ্টার্জিত অর্থে ছবি তৈরি করছেন তিনি।

আর জি কর কাণ্ডের জেরে এবার মনখারাপ বাংলার। ঘটনার প্রতিবাদে এবং প্রকৃত দোষীদের শাস্তি চেয়ে লাগাতার আন্দোলন চলছে। প্রথম সারিতে থেকে মিছিলে নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছে অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়কে। তিনি বলেছেন, “পুজোতে আছি, উৎসবে নেই।” এই প্রসঙ্গেই দেবকে ‘কফি উইথ কুণাল’-এ কুণাল প্রশ্ন করেন, “তোমার টিমেই তো দুটো ভাগ। একদল বলছে, উৎসবে ফিরুন, আরেকদল বলছে, উৎসবে ফিরবেন না।” উত্তরে দেব জানান, “আমি স্বাধীনচেতা চিন্তাভাবনায় বিশ্বাসী। সকলের ব্যক্তিগত মতাদর্শ হয়। এবং সেটাকে আমি সম্মান করি। কে, কী ভাবছেন, তার উপর আমার কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রযোজক হিসেবে, আমি যাকে যে ভূমিকার জন্য নিয়োগ করেছি, সেটাই শুধু সেটে আমার দেখার দায়িত্ব। নাম করেই বলছি, স্বস্তিকা বা সৃজিত ‘টেক্কা’র শুটিংয়ে যার যে দায়িত্বটা পালন করার ছিল, সেটা স্ব-স্বক্ষেত্রে অসম্ভব ভালো করেছেন। সৃজিত মুখোপাধ্যায় দারুণ পরিচালক। আর স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ও দুরন্ত অভিনেত্রী। এবার আসি উৎসবে ফিরছি কি ফিরছি না… সেই প্রসঙ্গে। এই বিষয়ে আমার কাউকে কিছু বলা উচিত নয়। তবে হ্যাঁ, প্রযোজক হিসেবে বলব, সিনেমাটা বানাতে আমারও প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়েছে। আমার বাবা এত টাকা রেখে যাননি যে, ছবি না চললে আমার সংসারে প্রভাব পড়বে না। আসলে খুব কষ্ট করে এই জায়গায় পৌঁছেছি। আজ অবধি কাউকে অসম্মান করিনি। এমনকী রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পরও মঞ্চ থেকে কাউকে কোনওরকম অসম্মান করিনি।”

এরপরই রীতিমত কড়া বার্তা প্রযোজক-অভিনেতার। বলেন, “একজন প্রযোজক হিসেবে, আমার সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কে, কী করছেন? সেটা আমার দেখার কথা নয়। তবে হ্যাঁ, তুমি যখন আমার সিনেমার প্রোমোশন করছ বা ‘টেক্কা’র প্রচারে যাচ্ছে, আশা করব এমন কোনও মন্তব্য কোরো না, যাতে আমার সিনেমার ক্ষতি হয়। কিংবা সিনেমাটাকে দিনের শেষ ভুগতে হয়! কারণ প্রতিদিন হিন্দি সিনেমার দর্শকদের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। প্রযোজক হিসেবে আমিও খুব কষ্টের দিন দেখেছি। বাংলা সিনেমা বানাতে হলে ‘ধক’ লাগে। প্রতিটা প্রযোজককে প্রতিদিন পরিশ্রম করতে হয় প্রতিদিন হলে টেনে আনতে দর্শকদের। কারও একটা মন্তব্যের জন্য যেন ‘টেক্কা’কে ভুগতে না হয়। কে কার সোশাল মিডিয়ায় কী বলছেন? সেটা আমার বক্তব্য নয়। তবে আমার ছবিকে প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করলে আমার খারাপ লাগবে। আসল কথা, সিনেমাটা চললে সকলের ভালো হবে। কারণ প্রতিদিন হিন্দি সিনেমার দর্শকদের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। প্রযোজক হিসেবে আমিও খুব কষ্টের দিন দেখেছি।উৎসব শুধু আমার বা তোমার না, উৎসব একটা অধিকার। যে-যাঁরা নিজের মতো করে প্রতিবাদ করছি। মানুষ ভালো থাকুক এটাই চাই।”
