ঘূর্ণিঝড় “ডানা” নিয়ে সতর্ক দক্ষিণ ২৪ পরগনা প্রশাসন, দফায় দফায় বৈঠকে একাধিক ব্যবস্থা

প্রতিটা প্রকৃতিক বিপর্যয়ে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কাকদ্বীপের মৌসুনি দ্বীপ ও ঘোড়ামারা দ্বীপ।

ঘূর্ণিঝড় “ডানা” আছড়ে পড়ার আগেই প্রস্তুত প্রশাসন। সুন্দরবনবাসীদের সুরক্ষায় সবরকমের ব্যস্ততা নেওয়া হয়েছে।হাওয়া অফিতের তথ্য অনুয়ায়ী প্রবল বেগে ধেয়ে আসছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ডানা। পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকায় এর প্রভাব পড়বে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আবহাওয়াবিদরা। উপকূলবর্তী সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, হাসনাবাদের উপরেও এই ঘূর্ণিঝড় যথেষ্ট আঘাত আনতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।

এই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার আগেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন হিঙ্গলগঞ্জের দুলদুলি সাহেব খালি সহ হিঙ্গলগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। ঝড় ও বৃষ্টি একই সঙ্গে আসবে। তা নদী ও নদী বাঁধের উপর  কতটা প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে চিন্তিত এলাকার মানুষ। সেক্ষেত্রে যদি নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে নোনা জলে যেমন চাষের ক্ষতি হবে তেমনি ভাসবে গ্রাম। তবে ডানা’র মোকাবিলা করার জন্য সব রকম ভাবে প্রস্তুত রয়েছেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা।

বসিরহাটের মহকুমাশাসক আশিষ কুমার জানিয়েছেন, পুলিশ ও প্রশাসন প্রস্তুত আছে। সব রকমের প্রতিরোধ ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। প্রতিটি বিডিও অফিসের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ফ্লাড সেন্টার খুলে দেওয়া হয়েছে। মজুত করা হয়েছে পানীয় জল ও শুকনো খাবার। চলছে মাইকিং। নদীতে মাছ ধরতে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নৌকায় নদী পারাপারের ক্ষেত্রেও চলছে নজরদারি। এনডিএরএফ টিম পৌঁছে গিয়েছে স্পর্শ কাতর এলাকাগুলিতে। মহকুমাশাসকের দাবি, নদীবাঁধগুলির ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কুইক রেসপন্স টিম সেগুলির মেরামতির জন্য প্রস্তুত আছে। এক কথায় ডানা’র জন্য প্রস্তুত প্রশাসন।

কাকদ্বীপ মহকুমা শাসকের দফতরে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা । উপস্থিত ছিলেন প্রতিটি এলাকাযর বিধায়ক, বিডিও, সেচ দফতরের আধিকারিক থেকে শুরু করে সমস্ত লাইন ডিপার্টমেন্টের আধিকারিকরা। তবে সুন্দরবনের নদী ও সমুদ্র বাঁধ নিয়ে কিছুটা হলেও চিন্তায় প্রশাসন। প্রতিটা প্রকৃতিক বিপর্যয়ে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কাকদ্বীপের মৌসুনি দ্বীপ ও ঘোড়ামারা দ্বীপ।

বিশেষ এক বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে মোট ৬৫ টি বেহাল বাঁধ রয়েছে। তার মধ্যে ১৭ টি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সমস্ত জায়গা থেকে পরিস্থিতি অনুযায়ী মানুষজনকে ফ্লাড সেন্টারে স্থানান্তরিত করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে সাগর বিধানসভার সুমতি নগর, ঘোড়ামারা দ্বীপ, মৌসুনি দ্বীপ , সাগরের কষতলা, কাকদ্বীপের বিধানসভার বুধাখালি, ঈশ্বরীপুর ও পাথর প্রতিমার বিধানসভার গোবর্ধনপুর থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গা।পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে জেলা প্রশাসন। বুধবার থেকে পরিস্থিতি বুঝে সমস্ত ফেরি সার্ভিস বন্ধ করা হবে। বিপর্যয় মোকাবিলা দলের পাশাপাশি NDRF এর তিনটি দলকে মোতায়েন করা হচ্ছে। তার মধ্যে একটি গঙ্গাসাগরে আরেকটি কাকদ্বীপ ও  অপর টি নামখানায় থাকবে। পাঁচটি সিসি ক্যামেরা বিভিন্ন সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় লাগানো রয়েছে। সেখান থেকেই সরাসরি নজরদারি চালাবে কাকদ্বীপ মহকুমা কন্ট্রোল রুম থেকে জেলা প্রশাসন।

দক্ষিণ 24 পরগনা উপকূলবর্তী এলাকায় বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দাদের মাইকিং এর মাধ্যমে গঙ্গাসাগর, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপ এলাকার মানুষকে সতর্কবার্তার পাশাপাশি আপৎকালীন ভাঙা বাঁধের কাজ শুরু করা হয়েছে।নামখানার ফ্রেজারগঞ্জ, নারায়নতলা এলাকায় যাতে ডানার ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কম হয় সেই কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিক বৈঠক করা হয়েছে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে। কাকদ্বীপে এসডিও অফিসে কন্ট্রোল রুম খুলে ডানার গতিবিধি লক্ষ্য রাখছেন প্রশাসনের আধিকারিকরা।

সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা বলেন, ঘোড়ামারা দ্বীপ, নামখানা, সাগর বিভিন্ন দ্বীপ অঞ্চলের মানুষদেরকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ফ্লাট সেন্টারগুলোকে তৈরি থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুকনো খাবার পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই নিয়ে আজ মঙ্গলবার দিনও একটি বৈঠক করেন। পাশাপাশি মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সেই কারণে নামখানা, ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ মৎস্য বন্দরে ফিরে আসছেন বহু মৎস্যজীবি।