ঘূর্ণিঝড়ে রাত জাগছেন মুখ্যমন্ত্রী, মহিলা কর্মীদের আগেই ছুটি

কন্ট্রোল রুমে ছিলেন আবহাওয়াবিদ তথা আলিপুর আবহাওয়া দফতরের প্রাক্তন কর্তা গোকুল চন্দ্র দেবনাথ। তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে বুঝিয়ে দেন ঠিক কটার সময় এই ঘূর্ণিঝড় কোথায় আছড়ে পড়বে

ল্যান্ডফল কখন? ল্যান্ডফলের (landfall) পরে কত গতি ঘূর্ণিঝড় ডানা-র? কোথায় আটকে পড়লেন সাধারণ মানুষ। যে তিন লক্ষের বেশি মানুষের উপর নজর রেখেছে বাংলার প্রশাসন, তাঁদের তদারকিতে স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। কখনও ফোনে আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক, কখনও আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসে নজর রেখে তিনি রাজ্যের মানুষের সুস্থতায় জন্য রাত জাগছেন তিনি। তবে নবান্নের (Nabanna) মহিলা কর্মীদের আগেই বাড়ি চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী, যাতে আবহাওয়া বা যানবাহনের কারণে তাঁরা আটকে না পড়েন।

মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে একের পর এক ঝড় সামলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দানার আছড়ে পড়ার আশঙ্কায় যখন রাজ্যবাসী আশঙ্কার প্রহর গুনছে তখন অন্যরকম তৎপরতা ছিল রাজ্যের সচিবালয় নবান্নে। তিনতলায় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কেন্দ্রীয় কন্ট্রোলরুমে (control room) কর্মীদের দম ফেলার ফুরসত ছিল না। উপগ্রহ চিত্রে ঘূর্ণিঝড়ের প্রতিমুহূর্তের অগ্রগতির পাশাপাশি শক্তিশালী ক্যামেরার মাধ্যমে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকাসহ গোটা রাজ্যের ছবি এখানে বসেই দেখতে পাচ্ছিলেন দফতরের আধিকারিকরা। রাতভর এই কন্ট্রোলরুম থেকেই রাজ্যের পরিস্থিতির উপর নজর রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবহাওয়া দফতরের আধিকারিকরা সেখানেই তাঁকে পরিস্থিতির আপডেট দেন।

বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও নবান্নে রাত জাগলেন রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা ও অসামরিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জাভেদ খান (Javed Khan)। এছাড়াও মুখ্য সচিব সহ রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারাও এদিন নবান্নে রাত্রিবাস করেন। সন্ধ্যায় প্রথমে খোঁজ নেন সেখানে কোন কোন মহিলা কর্মীরা আছেন। তাদের বাড়ি কোথায়। এরপরেই ব্যারাকপুর বারাসাত সোদপুরের মত শহরতলির কর্মীদের তখনই ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

কলকাতা কর্পোরেশন (Kolkata Corporation) এবং কলকাতা পুলিশের পাশাপাশি তিনি নিজেও নজর রাখেন। এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষ করে মন্ত্রীদের নিজে নিজে এলাকায় যেতে নির্দেশ দেন তিনি। কন্ট্রোল রুমে ছিলেন আবহাওয়াবিদ তথা আলিপুর আবহাওয়া দফতরের প্রাক্তন কর্তা গোকুল চন্দ্র দেবনাথ। তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে বুঝিয়ে দেন ঠিক কটার সময় এই ঘূর্ণিঝড় কোথায় আছড়ে পড়বে। এরপরে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন সুন্দরবন শহরের রাজ্যের যেসব এলাকায় এই ঝড়ের প্রভাব বেশি পড়বে সেখানে নজরদারি সব সময় চালিয়ে যেতে। একাধিক দফতরের সচিবকে নটি জেলায় সরেজমিনে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পাঠানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে। তাদের সঙ্গেও সরাসরি যোগাযোগ করেন তিনি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন। অবস্থা একেবারে স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তাদের জায়গা ছাড়তে নিষেধ ও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ঘটনাচক্র মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের তরফে অনেক মন্ত্রীকে বৈঠক আসতে নিষেধ করা হয়েছিল। তাদের বিভিন্ন জেলা থেকে নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনের কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা এলাকার নজরদারি করতে সচিব পর্যায়ের আধিকারিক মনীশ জৈন কে পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি সেচ দপ্তরের (department of Irrigation) আধিকারিকদেরকেও ঝড়ের সময় ওইসব এলাকাতে থাকতে হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী কড়া নির্দেশ দেন।