রাজ্য সরকার পুলিশ কর্মী আধিকারিকদের জন্য সুষ্ঠু বদলি নীতি তৈরি করেছে। এবার কনস্টেবল থেকে সাব ইন্সপেক্টর পদ মর্যাদার পুলিশ কর্মী ও আধিকারিকেরা অনলাইনেই বদলি সংক্রান্ত আবেদন জানাতে পারবেন। এজন্য নির্দিষ্ট একটি পোর্টাল তৈরি করা হচ্ছে।

পুরনো ব্যবস্থায় কনস্টেবল থেকে সাব ইনসপেক্টর পদমর্যাদার পুলিশ কর্মীদের সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারের কাছে হাতে লিখে বদলির আবেদন করতে হতো। সেই আবেদন যাচাইয়ের পর ভবানী ভবনে পুলিশ ডিরেক্টরেটে পাঠানো হতো। সেখানেও বহুদিন আবেদন পড়ে থাকতো। এবার থেকে সেই পদ্ধতি পরিবর্তন করে পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন করার রীতি চালু হচ্ছে। তবে বছরে মাত্র একবার, শুধুমাত্র ডিসেম্বর মাসে সেই আবেদন করা যাবে বলে জানা গেছে । রাজ্য পুলিশের মহানির্দশক রাজীব কুমারের এ সংক্রান্ত এক নির্দেশিকা ইতিমধ্যেই সমস্ত জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশিকায় আবেদন যাতে দীর্ঘদিন পড়ে না থাকে, তাই কতদিনের মধ্যে ফাইল ছাড়তে হবে, তাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ফাইল এসপির কাছে আসার ১০ দিনের মধ্যে তিনি মতামত জানাবেন। একই সঙ্গে তাঁর ওপরের কর্তা অর্থাৎ রেঞ্জের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের মতামত জানাতে ১০ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

মহিলা কনস্টেবলরা ৮ বছর চাকরির পর এবং পুরুষ কনস্টেবলরা ১৫ বছর চাকরির পর নিজের জেলায় বদলির আবেদন করতে পারবেন। সাব ইন্সপেক্টর ও সহকারি সাব ইন্সপেক্টররা এবার থেকে নতুন নিয়ম মেনে তাঁদের কর্মজীবনের অবসরের ৪ বছর আগে নিজের জেলায় বদলির আবেদন করতে পারবেন। সেই সঙ্গে পদোন্নতির পর সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মী পোস্টিংয়ের জন্য তাঁর পছন্দ মতো ৫টি জায়গার কথা বলতে পারবেন। আগে এই ব্যবস্থা আগে ছিল না। ডিজি’র নির্দেশিকায় আরও উল্লেখ আছে, নিজের বিধানসভা এলাকায় কোনও পুলিশ কর্মীকে পোস্টিং দেওয়া যাবে না। কারণ, এনিয়ে অতীতে বারবার প্রশ্ন ওঠায় অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে সরকারকে। কেউ যদি ইচ্ছে প্রকাশের পরও প্রমোশন না নেন, সেক্ষেত্রে কী ব্যাবস্থা নেওয়া হবে, তাও বলে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন- বিজেপির সদস্য সংগ্রহে অমিত শাহ! বামেদের সাবধানে থাকা-র কটাক্ষ কুণালের

রাজ্য পুলিশ বাহিনীতে বদলি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নিচুতলার কর্মী থেকে আধিকারিকদের মধ্যে ক্ষোভ জমছিল। সেই ক্ষোভের আঁচ পেয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীও। এমনকি তাঁর কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগও জমা পড়ে যে, মোটা টাকা ‘দক্ষিনা’ না দিলে বদলি বা পোস্টিংয়ের ফাইল নড়ে না। ভবানীভবন থেকেই নাকি এই বদলির বিষয়টি দু’-একজন আধিকারিক নিয়ন্ত্রণ করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই মুখ্যমন্ত্রী তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই সূত্রেই সামনে আসে, বড়কর্তার ঘনিষ্ঠ হওয়ার সূত্রে বা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পছন্দের জায়গায় নাকি অনেক পুলিশ কর্মী থেকে আধিকারিক বদলি নিয়ে নেন। এমনকি আর জি কর কাণ্ডে ধৃত সঞ্জয় রাইও নাকি এই বদলি নীতি নিয়ন্ত্রণ করতো টালা থানা থেকে, এমন অভিযোগও সামনে এসেছে। আর তারপরেই এই ঘুঘুর বাসা ভাঙতে মুখ্যমন্ত্রী অনলাইনে বদলির আবেদন নীতি চালুর সিদ্ধান্ত নেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত যে আগামী দিনে রাজ্য পুলিশের নিচুতলার কর্মী থেকে আধিকারিকদের ক্ষোভে জল ঢালবে সে নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাই তাঁরা এখন থেকেই রীতিমত খুশি এই নয়া নিয়মে।
